498
Published on অক্টোবর 28, 2014শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করলেও এতে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। কারো কারো আশংকা সৃষ্টি হয়েছিলো নির্বাচনের আগের কয়েকটি বিরোধী দলের সৃষ্ট গোলযোগ নির্বাচনের পরেও অব্যাহত থাকবে। কিন্তু এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। জনগণ এ ধরনের সন্ত্রাস ও বিশৃংখল পরিস্থিতি মেনে নেয়নি।
প্রধানমন্ত্রী রোববার সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফরকালে গাল্ফ নিউজের সাথে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এসোসিয়েশনের (সিপিএ) এক্সিকিউটিভ চেয়ারপার্সন এবং অপর এক সংসদ সদস্য আন্তঃপার্লামেন্টারী ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, এটি আমার সরকার ও পার্লামেন্টের প্রতি বিশ্বের সমর্থন প্রমাণ করে।
শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করা সম্পর্কে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালত এই ব্যবস্থাকে অসাংবিধানিক বলে উল্লেখ করেছে। তিনি বিএনপি সরকারের সময়ে দেশের একজ নাগরিক তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন। সর্বোচ্চ আদালতের এই আদেশ সকলকে মেনে চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সবসময় চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে। দিল্লীতে ভারতের ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে সম্পর্ক চমৎকার রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে কিছু সমস্যা থাকেই। তবে এ বিষয়ে আমার নীতি হচ্ছে কোনো মধ্যস্থতা ছাড়াই দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করা।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যেই গঙ্গার পানি বন্টন ও সীমান্ত সীমানা বিরোধসহ অনেক সমস্যার সমাধান করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্প্রতি নিউইয়র্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে খুবই আন্তরিক পরিবেশেষ আমার বৈঠক হয়েছে এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক চমৎকার রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্ত এলাকায় জনগণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের উন্মুক্ত সীমান্ত হাট রয়েছে। দু’দেশের জনগণ হাটে আসছে। ভারতের ওপর দিয়ে আসা ৫৪টি নদীর পানির হিস্যা নিয়ে পানিবিষয়ক যৌথ কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে এবং আমরা তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরে আশাবাদী।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর বিরোধিতা সত্ত্বেও তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষরে প্রধানমন্ত্রী কতটা আশাবাদী এ সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আমরা জানি তিনি কি করেছেন। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এবং অন্যান্য দলগুলো খুবই সহায়ক মনোভাবের। একমাত্র তিনিই সহায়তা মনোভাবের নয়। তবে আমি নিশ্চিত, এক সময় তিনি ঠিকই বুঝতে পারবেন এবং সহযোগিতা করবেন।
প্রধানমন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অঞ্চলে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহযোগিতা, যোগাযোগ ও বাণিজ্যের অনেক সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো ব্যবস্থা সম্ভব হবে না। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দ দারিদ্র্য বিমোচন, খাদ্য সরবরাহ, আশ্রয়, স্বাস্থ্য সুবিধা, সেনিটেশন, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জনগণের ক্ষমতায়নের মতো, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে ঐক্যবদ্ধ থাকলে দেশের অভ্যন্তরের অথবা বাইরের কোনো শক্তি আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, শুধুমাত্র বাংলাদেশে শান্তি চাই নাÑ সমগ্র অঞ্চলে শান্তি চাই। অগ্রগতির জন্য শান্তি প্রয়োজন। আমরা কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের জন্য কাউকে আমাদের ভূমি ব্যবহার করার সুযোগ দেবো না।
শেখ হাসিনা বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার জন্য অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও যোগাযোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমি ভারত, মায়ানমার ও চীন সফরকালে একই অনুভূতি পেয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সার্কের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দেশ হিসেবে এখন তারা দ্রুত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। গণতান্ত্রিকভাবে সরকার গঠন করছে। বাংলাদেশের একটি প্রস্তাব রয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটান বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শেয়ার করবে এবং সড়ক ও রেল যোগাযোগের উন্নতি করবে। এই প্রস্তাবে ভারতের প্রায় সম্মতি রয়েছে।
বাংলাদেশ, ভারত, মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোর গঠনের একটি ধারণা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি এ বিষয়টি নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক বেইজিং সফরকালে চীনা নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। আসিয়ান ও সার্ক দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান নিজের ও দুটি অর্থনৈতিক ব্লকের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমরা রেল, সড়ক ও বিমান যোগাযোগ বৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা মায়ানমারের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য রেল ও সড়ক যোগাযোগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাণিজ্য, পর্যটন, বিনিয়োগ ও কৌশলগত অংশীদারিত্বে গালফলের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চাই। শিশু শ্রমিক ইস্যু নিয়ে এবং বস্ত্রশিল্পের উন্নয়ন সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সরকার তিন হাজার পাঁচশ’ রফতানিমুখী কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৬১টি পরিদর্শন করেছে। এর মধ্যে আইন মেনে চলতে না পারায় মাত্র ২৯টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, সরকার সম্ভাব্য সকল পদক্ষেপ গ্রহণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন, উন্নয়ন অংশীদার, রফতানিকারক,বায়ার ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সক্রিয়ভাবে সম্পৃক্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেশাগত নিরাপত্তা ও শ্রমিকদের অধিকার সংরক্ষণ পরিস্থিতির উন্নয়নে আইন ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, প্রশাসনিক ব্যবস্থা, বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন ও ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার কারখানা পরিদর্শনের জন্য ৯৯৩টি পদ সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যেই ২শ’ পরিদর্শক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। একই সাথে পোশাক শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ৭৭ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)
ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়