এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে শক্তিশালী অংশীদারিত্ব গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

500

Published on অক্টোবর 16, 2014
  • Details Image

তিনি আরো বলেন, দুই মহাদেশের মধ্যে যত বেশি আদান-প্রদান ও যোগাযোগ হবে ততবেশী অংশীদারিত্ব গড়ে উঠবে এবং সকলের জন্য সুফল নিশ্চিত হবে। ‘আসুন আজ আমরা এ ধরনের অংশীদারিত্বের অঙ্গীকার গ্রহণ করি।’

প্রধানমন্ত্রী গতকাল সন্ধ্যায় ইতালির মিলানে এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম)-এর দশম শীর্ষ সম্মেলনে ‘এশিয়া পার্টনারশীপ ইন এড্রেসিং গ্লোবাল ম্যাটার্স ইন এন ইন্টার-কানেকটেড ওয়ার্ল্ড’ শীর্ষক পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে ভাষণকালে এ আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের সাথে জনগণের যোগাযোগ, শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিনিময় এবং সামাজিক আদান-প্রদান ও অভিবাসনের ভিত্তিতে এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে একটি শক্তিশালী ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। তিনি বলেন, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এই সম্পর্ক হাতিয়ার হতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অভিবাসন, সন্ত্রাসবাদ, সমুদ্র বিষয়াদি, প্রতিবন্ধিতা, দুযোর্গ ঝুঁকি হ্রাস ও ব্যবস্থাপনা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা এবং মানবাধিকারসহ বৈশ্বিক ইস্যুসমূহও এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব বহন করে। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব বৈশ্বিক ইস্যুও ব্যাপারে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা গড়ে তুলতে পারলে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পারবো।’

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বর্তমানে বাংলাদেশের বৃহত্তম রফতানির গন্তব্য হিসাবে উল্লেখ করে বলেন, অনেক এশীয় দেশ ইইউ’র সঙ্গে বৃহত্তর বাণিজ্যের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।

শেখ হাসিনা দারিদ্র্য বিমোচন ও শিক্ষার অধিকারকে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার জন্য বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী এখনো ১৩০ কোটি মানুষ চরম দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করে এবং বিপুল সংখ্যক শিশু শিক্ষার বাইরে রয়েছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচন ও শিক্ষার অধিকারকে ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডার মূল বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে হবে। ’

তিনি বলেন, এমডিজি’র ব্যাপারে আমাদের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সম্পদের যোগানের ওপরই মূলত ২০১৫ পরবর্তী এজেন্ডার সাফল্য নির্ভর করছে।

তিনি বলেন, আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাংলাদেশ কয়েকটি বিশাল অবকাঠামো ও সংযোগ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এছাড়া সম্ভাব্য বিনিয়োগ আকর্ষণে দেশব্যাপী বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৮ বছর আগে এশিয়া-ইউরোপ মিটিং (আসেম)-এর যাত্রার শুরু থেকেই বাংলাদেশ আগ্রহের সঙ্গে এর অগ্রযাত্রা পর্যবেক্ষণ করে আসছে। গত শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশ এ সংস্থার সদস্যপদ লাভ করে। তিনি বলেন, ‘এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে যোগাযোগ জোরদারের ব্যাপারে আমি আমাদের জনগণের মধ্যে উচ্চ আশা দেখেছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক আন্তঃনির্ভরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং দুই মহাদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ দুই ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, এশিয়া হচ্ছে ইউরোপের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার। ইউরোপের বৈদেশিক বিনিয়োগের প্রায় এক-চতুর্থাংশই এশিয়ায় আসে।

জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। এখানকার উপকূলীয় এলাকা বর্ধমান সমুদ্র স্তরের কারণে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় অক্ষম। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের ৩ কোটি লোককে অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন পড়তে পারে।

তিনি বলেন, নিম্ন আয়ের দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ভোগান্তি লাঘব এবং অভিযোজনে ৩৮ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে।

বাংলাদেশ সফলভাবে এমডিজি-১ ও এমডিজি-৬-এর লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দারিদ্র্যের হার ১৯৯১ সালের ৫৭ থেকে ২৫ ভাগে হ্রাস পেয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি এবং মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত লিঙ্গ সমতা নিশ্চিত করেছে। এদেশের শতকরা ৯৩ ভাগ লোক সুপেয় পানি পান ও স্যানিটেশন সুবিধা পাচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ আইসিটি খাত সম্প্রসারণে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। জনগণ ৪ হাজার ৫শ’ ইউনিয়ন তথ্যকেন্দ্র থেকে ২শ’রও বেশি সেবা পাচ্ছে এবং গ্রামীণ জনগণ সাড়ে ১৩ হাজার তথ্যপ্রযুক্তি সংযুক্ত কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক থেকে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ আয়ের দেশে পরিণত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত