বাঘ অধ্যুষিত দেশসমূহকে বাঘ সংরক্ষণে তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত বাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

665

Published on সেপ্টেম্বর 14, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি যে, বাংলাদেশসহ বাঘ-অধ্যুষিত দেশসমূহের বাঘ সংরক্ষণের আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আসুন সকলে মিলে আমরা বাঘ বাঁচাই, প্রকৃতি বাঁচাই। এ ক্ষেত্রে আমাদের সরকার প্রয়োজনীয় সব ধরনের পদক্ষেপ নেবে।’

তিনি আজ হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাঘ অধ্যুষিত দেশসমূহ ও গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ পার্টনারস’র ২য় বিশ্ব বাঘ স্টকটেকিং সম্মেলন উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বাঘ অধ্যুষিত দেশসমূহকে তাদের পূর্ববর্তী পরিকল্পনা পর্যালোচনার পাশাপাশি নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও এর বাস্তবায়নে কৌশল উদ্ভাবনের পদক্ষেপ নিতে হবে।

আমরা বিশ্ব বাঘ সংরক্ষণ পরিকল্পনার তিন বছর পাড়ি দিয়েছি- এ কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি এখন আমরা বাঘ রক্ষার কাক্সিক্ষত লক্ষ্যের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছেছি।

প্রধানমন্ত্রী সুন্দরবন রক্ষায় বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাঘ রক্ষা করে সুন্দরবনকে, আর সুন্দরবন রক্ষা করে বাংদেশকে।

বাঘ সংরক্ষণে বিশ্ব ব্যাংকসহ গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ, গ্লোবাল টাইগার ফোরাম ও উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় বাংলাদেশ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের আওতায় বন বিভাগ তিনদিনের এই সম্মেলনের আয়োজন করছে। বাঘ রক্ষার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের পর্যালোচনা ও এ লক্ষ্যে একটি সুপারিশ প্রণয়নে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর সভাপতিত্বে এ সম্মেলনে একই মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, সচিব মো. নজিবুর রহমান, বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাঠ, গ্লোবাল টাইগার ফোরামের মহাসচিব রাজেশ গোপাল, গ্লোবাল টাইগার ইনিশিয়েটিভ’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার এন্ড্রু ভি কুশিন ও বন বিভাগের প্রধান কনজারভেটিভ অফিসার মো. ইউনুস আলী বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে বাঘ সংরক্ষণে মুখ্য ভূমিকা পালনের জন্য সম্মেলনের আয়োজদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রতিকী প্রশংসাপত্র দেয়া হয়।

সম্মেলনে বাঘ অধ্যূষিত ১৩টি দেশসহ ২০ দেশের প্রতিনিধ অংশগ্রহণ করছেন। বাঘ অধ্যুষিত ১৩ দেশ হচ্ছে বাংলাদেশ, ভূটান, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, লাওস পিডিআর, মালয়েশিয়া, মায়ানমার, নেপাল, রাশিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও উত্তর কোরিয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনাদিকাল ধরে এশিয়ার প্রকৃতি ও সংস্কৃতিতে বাঘ একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে।

তিনি বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, অপরিকল্পিতভাবে শিল্প-কারখানা তৈরি, বনভূমি ধ্বংস এবং সার্বিকভাবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাপে বাঘের প্রাকৃতিক আবাসস্থল দিন দিন কমে আসছে। পাশাপাশি অবৈধভাবে বাঘ শিকার ও বাঘের আবাসস্থল সঙ্কোচনের ফলে বাঘ আজ বিলুপ্তির পথে। গত একশ বছরে বাঘের সংখ্যা ১ লাখ থেকে হ্রাস পেয়ে ৩ হাজার ৭’শ-তে দাঁড়িয়েছে।

বিলুপ্তপ্রায় এই অনিন্দ সুন্দর প্রাণীর বৃদ্ধি, সংরক্ষণ ও নিরাপদ জীবন নিশ্চিত করতে আজকের এই সম্মেলন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

বাঘ সংরক্ষণের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে ২০১০ সালের নভেম্বরে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত বাঘ-অধ্যুষিত দেশগুলোর সরকার প্রধানগণের আন্তর্জাতিক শীর্ষ সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সম্মেলনে আমরা বিদ্যমান বাঘের সংখ্যার ভিত্তিতে ২০২২ সালের মধ্যে এর সংখ্যা দ্বিগুণ করার ঘোষণা ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ২০১২ সালের অক্টোবরে ভূটানের রাজধানী থিম্পুতে বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে দ্বিতীয় এশীয় মন্ত্রীপর্যায়ের সম্মেলনে ৯-দফা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

তিনি বলেন, সম্মেলনে বাঘ-অধ্যুষিত দেশগুলোর প্রতিনিধি দলের প্রধানরা আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি, আবাসস্থল সংরক্ষণ ও বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা জোরদারের অঙ্গিকার করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৩ সালে চীনের কুনমিং-এ ‘বাঘ ও অন্যান্য বিপন্নপ্রায় প্রজাতির আন্তঃদেশীয় সংরক্ষণ এবং বন্যপ্রাণীর অবৈধ ব্যবসা বন্ধের কৌশল বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সমুদ্র উপকূলবর্তী প্রায় ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন অবস্থিত। এই সুন্দরবনেই বিশ্বখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বসবাস।

তিনি বলেন, ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার আমাদের জাতীয় পশু এবং সুন্দরবন রক্ষায় এ পশু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাঘ ছাড়া সুন্দরবনের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এলাকা হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, সমুদ্রউচ্চতা বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তন, সাইক্লোন, লবণাক্ত পানির অনুপ্রবেশ ইত্যাদি কারণে সুন্দরবনের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে।

তিনি বলেন, তদুপরি, এই বনভূমির উপর প্রায় ১২ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা নির্ভরশীল। এসব কর্মকা- বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে।

শুধু বাঘ রক্ষাই নয়, প্রাণী বৈচিত্রের বিপুল আধার হিসেবে সুন্দরবনকে রক্ষা করা জরুরি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং জীব-পরিবেশের এক অনন্য নিদর্শন এই সুন্দরবন।

জাতীয় প্রাণীকে রক্ষা করার জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার জাতীয় বাঘ পুনরুদ্ধার কর্মসূচি (এনটিআরপি) ও বাংলাদেশ বাঘ কর্মপরিকল্পনা (২০০৯-০১৭) বাস্তবায়ন করছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ প্রণয়ন করেছি এবং জামিন অযোগ্য এ আইনে বাঘ শিকারী বা হত্যাকারীর ২ থেকে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদ- এবং ১ লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদ-ের বিধান রয়েছে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র পুনরুদ্ধার, সক্ষমতা গঠন ও বন্যপ্রাণী সুরক্ষা জোরদার করতে বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় বাংলাদেশ, ভূটান ও নেপালের মধ্যে ‘বন্যপ্রাণী সুরক্ষার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, বন বিভাগের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ইউনিট বন্যপ্রাণী পাচার, অবৈধ বিক্রি ও প্রদর্শন রোধে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় কাজ করে যাচ্ছে। অসুস্থ বাঘের সেবাদানের জন্য খুলনায় একটি বন্যপ্রাণী উদ্ধার কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন বিভাগ বাঘের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ও জরিপের জন্য গত বছরের এপ্রিল মাস থেকে ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের সহায়তায় পরীক্ষামূলকভাবে ক্যাপচার ক্যামেরা ব্যবহার করছে। এই জরিপ শেষ হলে সুন্দরবনে বাঘের প্রকৃত সংখ্যা নিরূপন করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, ‘২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জরিপের ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।’

তিনি বলেন, আমাদের গৃহীত পদক্ষেপের ফলে বিগত দুই বছরে বাংলাদেশে কোন বাঘ হত্যা হয়নি। পূর্বে বছরে মানষের হাতে গড়ে ৩-৪টি বাঘের মৃত্যু হত। বাঘের আক্রমণে মানুষ মৃত্যুর সংখ্যাও ২৫-৩০ জন থেকে কমে মাত্র ৪ জনে এসে দাঁড়িয়েছে।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

ছবিঃ ইয়াসিন কবির

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত