জাতীয় সম্প্রচার নীতি প্রণয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বললেন, কোন প্রতিষ্ঠান নীতিমালা ছাড়া সুষ্ঠুভাবে চলতে পারে না

430

Published on সেপ্টেম্বর 10, 2014
  • Details Image


তিন আজ জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটে (নিমকো) রাজধানীর দারুসসালমে নব গঠিত বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইন্সটিটিউট (বিএফটিআই) এবং এর প্রথম কোর্সের উদ্বোধনকালে একথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের বিকাশমান সম্প্রচার মাধ্যমকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি অনুযায়ী পরিচালনার জন্য জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা-২০১৪ প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আলোকে সম্প্রচার কমিশন গঠন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে তোলপাড় চলছে। অনেকে এর বিরোধিতা করছেন। কিন্তু পৃথিবীর সবদেশেই সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং এর ভিত্তিতে সবকিছু পরিচালিত হচ্ছে।
সাংবাদিকরা দীর্ঘ দিন থেকেই জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়নের দাবী জানিয়ে আসছিলেন। তাদের দাবী অনুযায়ী সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হলে একদল এর প্রতিবাদ জানালো এবং এখন এর বিরোধিতা চলছে একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে এই নীতিমালা ওয়েব সাইটে দিয়ে সবার মতামত নেয়া হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু অনুষ্ঠানে বিশেষ অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং সভাপতিত্ব করেন তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ।
বিএফটিআই’র প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মাদ জাহাঙ্গীর হোসেন ও ইন্সটিটিউটের প্রথম কোর্সের পরিচালক মশিউদ্দিন শাকের অনুষ্ঠানে প্রতষ্ঠানটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরে বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার উন্নয়ন ও গণতন্ত্র সমুন্নত রাখতে গণমাধ্যমের প্রসার ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। এ লক্ষ্যে তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করতে তথ্য অধিকার আইন-২০০৯ প্রণয়ন ও তথ্য কমিশন গঠন করা হয়েছে।
তিনি বলেন,সংবাদপত্রকেও শিল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। ৮ম সংবাদপত্র ওয়েজ বোর্ড গঠন এবং এর সুপারিশের আলোকে সাংবাদিকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো ঘোষণার পাশাপাশি সংবাদপত্রের বিজ্ঞাপণ হারও যৌক্তিকহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার “সাংবাদিক সহায়তা ভাতা/অনুদান নীতিমালা-২০১২” প্রণয়ন করে প্রতিবছর সাংবাদিকদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। তাদের কল্যাণে একটি স্থায়ী ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় “বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন-২০১৪” জাতীয় সংসদে পাশ হয়ে ইতোমধ্যে তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়েছে।
তিনি চলচ্চিত্রের আধুনিকীয়নের উপর গুরুত্বারোপ করে দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের প্রসারে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দেশের চলচ্চিত্রের মান খুবই উন্নত। এ শিল্পে সুস্থ পরিবেশ সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া হলে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র বিশ্বের যে কোন চলচ্চিত্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
তিনি বলেন, আমি সিনেমা দেখার তেমন সময় পাই না । কেবল বিদেশে গেলে বিমানে আমি সিনেমা দেখার সময় পাই। ওই সময় আমি বাংলা সিনেমা দেখি এবং বাংলা ছবি দেখে আমি খুবই অভিভূত হই। এ সময় দর্শক গ্যালারী মুহুর্মুহু করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে।
শেখ হাসিনা বলেন, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন দুই’ই শক্তিশালী গণমাধ্যম। দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এ মাধ্যম দু’টির তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রয়েছে। এছাড়া সাহিত্য, সঙ্গীত, অভিনয়, সাজসজ্জা, চিত্রকর্ম, আলোকচিত্র, নৃত্যসহ শিল্পকলার প্রায় সকল শাখার নান্দনিক উপস্থাপন এ দুই মাধ্যমে হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন তথ্য প্রদানের পাশাপাশি মানুষের চিত্তবিনোদনের খোরাক যোগায়। মনের কথা বলে। পরিবার ও সমাজ জীবনের আনন্দ-বেদনা, প্রেম-বিরহ, সংগ্রাম আর ন্যায়-অন্যায়ের উপাখ্যান তুলে ধরে। যা শুভবোধকে জাগিয়ে তোলে। বিবেককে শাণিত করে। চেতনার বিকাশ ঘটায় এমনকি ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাতেও গভীর প্রভাব বিস্তার করে। তাই যুগ যুগ ধরে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিক্ষাবিস্তার, জাতিগঠন ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে আসছে।
তিনি সমাজ সংস্কার ও গঠনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের উপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, চলচ্চিত্র এমন ভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন এ সৃষ্টি যুব সমাজকে বিপথগামী না করে। একই সঙ্গে পল্লীর মানুষের চাহিদার প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
গণমাধ্যমের বিকাশ ও উন্নয়নে গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদকালে বেসরকারি খাতে টেলিভিশন চ্যানেল পরিচালনার অনুমোদন দিয়ে দেশে গণমাধ্যমের প্রসারে এক নতুন দিগন্তের উন্মোচন করেছে।
তিনি বলেন, ‘তথ্যের অবাধ প্রবাহ বিস্তৃত করতে আমাদের সরকার বাংলাদেশ টেলিভিশন, বিটিভি ওয়ার্ল্ড ও সংসদ টেলিভিশনের পাশাপাশি ৪১টি বেসরকারি টিভি চ্যানেল, ২৪টি এফ এম রেডিও সেন্টার ও ৩২টি কমিউনিটি রেডিও স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘এর ফলে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী এখন উন্নয়নের মূলধারায় সম্পৃক্ত হতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করে যে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট- সৃজনশীল, মেধাবী, দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অন্যতম সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
তিনি আরো আশা প্রকাশ করেন যে এই ইনস্টিটিউট প্রশিক্ষিত ও দক্ষ চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোগ্রাম নির্মাতা ও কলাকুশলী গড়ে তুলতে এবং তাদের প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব দরবারে টিকে থাকার উপযোগী সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র ও প্রোগ্রাম নির্মাণে অণুপ্রেরণা যোগাবে।
প্রধানমন্ত্রী ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের এমন চলচ্চিত্র ও টিভি প্রোগ্রাম নির্মাণের আহ্বান জানান যা মানুষের মানবিক গুণাবলী বিকাশ ঘটাবে। সন্ত্রাস হানাহানি ও লোভ-লালসার বিরুদ্ধে দর্শকদের বিবেক জাগ্রত করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্র এমন দুটি মাধ্যম- আমাদের অব্যাহত অগ্রগতির জন্য যার ভারসাম্যপূর্ণ বিকাশ অবশ্য প্রয়োজনীয়।
ইনু সুষ্ঠু বিনোদনের প্রয়োজনীয়র ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, সুষ্ঠু ও সুন্দর বিনোদন আমাদের প্রেরণা দেয়। চেতনাকে শানিত করে ও দক্ষতা বাড়িয়ে দেয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মৌলবাদী শক্তিকে ধ্বংস ও পরাস্ত করে তাঁর ঋণ পরিশোধ করবো।’
ইনু বলেন, ’৭১, ’৭৫ এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাকারী ঘাতকদের বিচার চলবে। কিন্তু ওই সব জঘণ্য অপরাধের পরিকল্পনাকারী ও ঘাতকদের রক্ষা এবং ক্ষমতা দখলের ষড়যন্ত্র থেমে নেই।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, এটা সত্য যে মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা ও বঙ্গবন্ধুকে হেয় করার ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি জঙ্গিদের তৎপরতাও অব্যাহত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি বলতে চাই যে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ হলো এক ‘অতিকায় হস্তির ন্যায়।
ইনু বলেন, একজন কমান্ডার অবশ্যই তার আত্মজীবনী লিখবেন কিন্তু আমার মত এক পিপড়াসম কমান্ডার অথবা মুক্তিযোদ্ধার ইতিহাস বিকৃত করা সঠিক কাজ নয়।
বাসস
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত