সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যঃ পাঁচটি লক্ষ্যে গুরুত্বপুর্ন অগ্রগতি

1190

Published on সেপ্টেম্বর 7, 2014
  • Details Image

এমডিজির আটটি লক্ষ্যের মধ্যে শিশু মৃত্যুহার হ্রাস ও মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন—এ দুটি পুরোপুরি অর্জিত হবে। অন্য যেসব লক্ষ্যে সাফল্য লাভ করেছে সেগুলো হলো চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন এবং লিঙ্গসমতা অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়ন।

এমডিজির অগ্রগতি নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (ইআরডি) প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ উপলক্ষে গতকাল রোববার পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

উল্লেখ্য, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য হ্রাসের উদ্দেশ্যে জাতিসংঘের উদ্যোগে ২০০০ সালে আটটি উন্নয়ন লক্ষ্য ঠিক করে, যা সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্য বা এমডিজি নামে পরিচিত। ২০১৫ সালের মধ্যে এসব লক্ষ্য অর্জনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়। লক্ষ্যসমূহ হলো চরম দারিদ্র্য ও ক্ষুধা নির্মূল, সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন, লিঙ্গসমতা অর্জন ও নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু মৃত্যুহার কমানো, মাতৃস্বাস্থ্যের উন্নয়ন, এইচআইডি/ এইচডস, ম্যালেরিয়া ও অন্য রোগব্যাধি দমন, পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ এবং সার্বিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাপী অংশীদারি গড়ে তোলা।

এসব লক্ষ্য অর্জনে ৬০টি সূচক ব্যবহার করা হয়। নির্দিষ্ট সময় পরপর নিজেদের এমডিজির অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। গতকাল প্রকাশ করা হয় সপ্তম প্রতিবেদন।
সূচকে অগ্রগতি: লক্ষ্য অর্জনে ৬০টি সূচকের মধ্যে ইতিমধ্যে এক-তৃতীয়াংশ সূচকের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে কিংবা অর্জনের পথে রয়েছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিশুর অপুষ্টি দূর, প্রাথমিক শিক্ষায় ছেলে ও মেয়ের অনুপাত, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, যক্ষ্মা প্রতিরোধসহ ১২টি সূচকে ইতিমধ্যে লক্ষ্য অর্জিত হয়ে গেছে।

অন্যদিকে নয়টি সূচকের লক্ষ্য অর্জনে সঠিক পথেই এগোচ্ছে বাংলাদেশ। যেমন, প্রাথমিক শিক্ষায় নিবন্ধন বৃদ্ধি, শিশু মৃত্যুহার হ্রাস, টিকাদান কর্মসূচি, মাতৃমৃত্যুহার হ্রাস, জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর ম্যালেরিয়া প্রতিরোধ, যক্ষ্মায় মৃত্যুহার হ্রাস ও নিরাপদ পানির প্রাপ্যতা।

দারিদ্র্য বিমোচনে সাফল্য: এমডিজির এই প্রধান লক্ষ্য অর্জনের চারটি সূচকের মধ্যে দারিদ্র্য হার হ্রাস সূচকেই লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। এ ছাড়া দারিদ্র্য ও চরম দারিদ্র্য হারের মধ্যে ব্যবধান কমানোর লক্ষ্যও ইতিমধ্যে পূরণ হয়েছে। ২০১৫ সালের মধ্যে এই ব্যবধান হার ৮ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য ছিল। বর্তমানে এ ব্যবধান সাড়ে ৬ শতাংশে রয়েছে।

২০১৫ সালের মধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর ৩৫ দশমিক ১ শতাংশ মানুষ দৈনিক এক ডলারের বেশি আয় করবেন—এমন লক্ষ্য ছিল। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বর্তমানে এমন মানুষের সংখ্যা হলো মোট জনগোষ্ঠীর ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ।

আলোচনা: এমডিজি অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী দু-তিন বছরের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে আসবে বাংলাদেশ। এ জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে।
ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘জীবনের একটি সময় আমি দরিদ্র মানুষ হিসেবে সংগ্রাম করেছি। সে সময় আমি দারিদ্র্যের কুৎসিত ও রূঢ় বিষয়টি অনুধাবন করেছি।’ তিনি মনে করেন, দারিদ্র্য বিমোচনে ভালো করলেও সন্তুষ্ট হওয়ার কিছুই নেই। ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য নির্মূল করার লক্ষ্য অর্জন করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান বলেন, উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুত অর্থ ছাড় না করার একটি বড় কারণ হলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর চাহিদার ভিন্নতা। তিনি মনে করেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর বৈদেশিক সহায়তার চেয়ে বড় প্রয়োজন হলো বেসরকারি বিনিয়োগ।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত