সুরক্ষিত ও নিরাপদ নৌপথ গড়ে তুলতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহবান

461

Published on সেপ্টেম্বর 7, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে নৌপথ নিরাপদ ও সুরক্ষিত করতে নদ-নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে। কারণ ভৌগলিক দিক থেকে নৌপথ বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

তিনি মন্ত্রণালয়সমূহের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর মতবিনিময় পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে মতবিনিময় করেন।

নৌপরিবহন মন্ত্রী অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তৃতা করেন। এসময় নৌপরিবহন সচিব সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম এবং মন্ত্রণালয়ের অধিনস্থ সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

দেশের অন্যান্য নদ-নদীকে যেন বুড়িগঙ্গার মতো ভাগ্য বরণ করতে না হয় সেলক্ষ্যে কর্মকর্তাদের প্রতি দেশের নদী দূষণ রোধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কর্ণফুলি, সুরমা বা কুশিয়ারাকে আবর্জনা ও তেল নি:সরণ থেকে রক্ষা করতে হবে।

তিনি বুড়িগঙ্গা রক্ষায় ওয়াক ওয়ে ও পিলার নির্মাণসহ ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়ায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, নদীর তীর দখলের অবৈধ পেশা বন্ধ করতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সম্প্রতি তাঁর বুড়িগঙ্গা ভ্রমণের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নদীটির দূষণ দেখে আমি সত্যিই কষ্ট পেয়েছি। নদীটি সম্পূর্ণ মরে গেছে এবং এ থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে দেখে আমার কান্না আসছিল। এটা আমাদের জন্য নিদারুণ উদ্বেগের বিষয়। কারণ ঢাকা এই বুড়িগঙ্গার তীরেই অবস্থিত।’

চট্টগ্রামে কর্ণফুলি, খুলনায় ভৈরব, সিলেটে সুরমা, কুশিয়ারা ও মনু এবং বরিশালের নদীগুলোও ভবিষ্যতে বুড়িগঙ্গার মতো ভাগ্য বরণ করতে পারে। কিন্তু আমরা আমাদের নদ-নদীকে মরে যেতে দিতে পারি না। আমরা ইতোমধ্যে ঢাকার আশ-পাশের সব নদী ড্রেজিংয়ের পদক্ষেপ নিয়েছি। অবশ্য এ ক্ষেত্রে আরো সক্রিয় ব্যবস্থা নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, শহরের ময়লা-আবর্জনার উৎস চিহ্নিত এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে তা পরিশোধন ও নিষ্কাষণ করতে হবে। দূষণের পথ বন্ধ না হলে বুড়িগঙ্গা পরিচ্ছন্ন হবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জাতীয় নদী কমিশন আইন যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৫৩টি নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে ৩৬টি নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে। অন্যগুলোও পর্যায়ক্রমে ড্রেজিং করা হবে।

তিনি বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের ফলে ১ হাজার কিলোমিটার নৌপথ ও ২ হাজার একর জমি উদ্ধার হয়েছে। এসব জমি স্থানীয় ও বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মাধ্যমে শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলার কাজে ব্যবহার করা হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় ঢাকার চারদিকের ৪টি নদী ড্রেজিং করছে। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে মাঝে-মধ্যেই একাজ বন্ধ করে দেয়। আমি খোঁজ নিলে আবার তা শুরু করে।’

শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তিও নদীর উপর স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলেছেন। এসব স্থাপনা ভাঙ্গতে বলা হলে তারা এ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

হাজারীবাগ থেকে ট্যানারী সরিয়ে নেয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রকল্পটি পরিকল্পনা কমিশনে ৩ বছরসহ দীর্ঘ সময় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিলো। এক সপ্তাহ আগে এর অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগের সকল ট্যানারী মালিককে তাদের প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নিতে সময়সীমা বেধে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের পর হাজারীবাগের সব ট্যানারী বন্ধ করে দেয়া হবে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ৮টি সংস্থার সঙ্গে অটোমেশন ও ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবহার উদ্বোধন করেন। তিনি এখান থেকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ মেরিন একাডেমীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌ পরিবহন ও জাহাজ চলাচল সেক্টরের দুর্বল দিকগুলো সংশোধন করতে হবে এবং আইন কড়াকড়িভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে নৌপথে দুর্ঘটনা বন্ধ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে একটি নিরাপদ নৌ পরিবহন ব্যবস্থা উপহার দিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। এটা আমাদের নির্বাচনী অঙ্গীকার। এর বাস্তবায়নে সকল সংস্থা, মালিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এক সঙ্গে কাজ করতে হবে।

নৌ পরিবহন কেবল যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের সঙ্গেই সংশ্লিষ্ট নয়, এ সেক্টর বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রাণশক্তি। আমদানি ও রফতানি এবং বন্দর ব্যবস্থাপনায়ও এর বিরাট ভূমিকা রয়েছে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ সেক্টরের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। তিনিই ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন।

তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ৮ জুলাই থেকে ১৯৭৫ সালের ২৬ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে জাহাজ চলাচল মন্ত্রণালয় নিজের হাতে রাখেন এবং এ মন্ত্রণালয়কে দৃঢ়ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের সম্পদ সীমিত। এই সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে আমাদের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে।

তিনি দেশের উত্তরাঞ্চলে একটি ম্যারিটাইম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার জন্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন, যাতে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা এই বিশেষ বিষয়ে পড়াশুনা করতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে উপকূলীয় জাহাজ চলাচল বিষয়ে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে। এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তিনি আরো বলেন, অনুরূপ চুক্তি মায়ানমার ও শ্রীলংকার সঙ্গেও সম্পদিত হবে।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত