541
Published on সেপ্টেম্বর 6, 2014আজ বিকেলে এখানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দু’দেশের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই ঘোষণা দেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে জাপানের বন্ধুপ্রতীম জনগণ ও সরকারের সমর্থন ও সহমর্মিতা আমরা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি।
শেখ হাসিনা আরো বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় জাপানের অব্যাহত ও জোরালো সহায়তার প্রেক্ষিতে এবং জাতিসংঘের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপের সংহতি ও ঐক্যের স্বার্থে আনন্দের সাথে ঘোষণা করছি যে, বাংলাদেশ ২০১৬-১৭ মেয়াদের জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি অস্থায়ী আসনের জন্য এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপের পক্ষ থেকে জাপানের প্রার্থীতার প্রতি সমর্থন দেবে।
শেখ হাসিনা আলোচনাকালে বাংলাদেশের পক্ষে এবং প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে জাপানের পক্ষে নেতৃত্ব দেন।
বাংলাদেশের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী আসনের জন্য প্রার্থীতা প্রত্যাহার এবং এই পদে জাপানের প্রতি সমর্থন প্রদান করায় শেখ হাসিনার কাছে আমি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
অ্যাবে বলেন, তিনি এবং জাপান এই সিদ্ধান্তের ভূয়সী প্রশংসা ব্যক্ত করছে এবং এই সিদ্ধান্ত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরো জোরদার করবে যা এই সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তিনি বলেন, এতে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরো জোরদার হবে।
শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন যে, স্বাধীনতা লাভের পর আমাদের দেশ ১৯৭৯-৮০ এবং ১৯৯৯-২০০০ মেয়াদে দুই বার আমাদের বন্ধুদের ব্যাপক সমর্থন পেয়ে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে সফলভাবে বিজয়ী হয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দায়িত্ব পালন করে।
তিনি বলেন, কয়েক বছর আগে আমরা ২০১৬-১৭ মেয়াদের জন্য এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে নিরাপত্তা পরিষদে নতুন করে প্রার্থী হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করি। ২০১১ সালে আমাদের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু জাপানও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় গ্রুপ থেকে একই মেয়াদের জন্য তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন থেকেই বাংলাদেশ ও জাপান সরকার বহুপক্ষীয় ফোরামে আমাদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও গ্রুপের সংহতি সমুন্নত রাখার লক্ষ্যে ঘনিষ্ঠভাবে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, কিছুক্ষণ আগে তারা আন্তরিক ও ফলপ্রসূ আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি জাপানী শিল্প ও ব্যবসা খাতে বিশিষ্ট নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে আসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবেকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, জাপানের বিশিষ্ট শিল্প উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে চমৎকার বন্ধুত্ব রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে জাপান বাংলাদেশে বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমাদের স্বাধীনতা লাভের পর থেকে জাপান ১২ বিলিয়ন ডলারের বেশি আর্থিক সহায়তা দিয়েছে এবং চলতি বছর থেকে আগামী ৪-৫ বছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেছে।
তিনি বলেন, ‘তা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, জাপানের অঙ্গীকার কোন অংকে সীমাবদ্ধ থাকবে না। চলতি বছর ২৬ মে টোকিও নগরীতে আমি ও প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা আরো সম্প্রসারিত ও গভীর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ-জাপান ‘সমন্বিত অংশীদারিত্ব’ সূচনা করি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপান বিনিয়োগ পরিবেশ ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সহায়তা দিতে ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি)’ এর অধীনে বাংলাদেশের জন্য একটি কর্মসূচি শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমি স্বাস্থ্য ও নার্সিং খাত এবং জাপানী নির্মাণ কর্মীদের জন্য অবদান রাখার ব্যাপারে আমাদের প্রস্তুতির কথা জানিয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বিষয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ও জাপানের চমৎকার সমঝোতা ও সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।
তিনি বলেন, বিশেষ করে জাপান সব সময় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা ও শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে আমাদের ভূমিকার প্রতি সমর্থন দিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমার জাপান সফরকালে ঢাকায় ‘পিস বিল্ডিং সেন্টার’ স্থাপনের লক্ষ্যে কারিগরি সহায়তা দেয়ার বিষয়ে জাপান প্রস্তাব দিয়েছে। ইতোমধ্যে এ লক্ষ্যে প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে।’
তিনি আরো বলেন, বৈশ্বিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার লক্ষ্যে এই সহযোগিতা এবং জাপানের অঙ্গীকার ও অবদানের জন্য আমরা গভীর প্রশংসা ব্যক্ত করছি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী তার বিবৃতিতে আগামী ৪-৫ বছরে ৬ বিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি উল্লেখ করেন, ইতোমধ্যে প্রায় ১.২০ বিলিয়ন ডলার ইয়েন ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী আরো উল্লেখ করেন যে, দুই প্রধানমন্ত্রী দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সকল ক্ষেত্রে সহযোগিতা আরো সম্প্রসারণ ও গভীর করার লক্ষ্যে ‘জাপান-বাংলাদেশ সমন্বিত অংশীদারিত্ব’ গড়ে তোলার বিষয়ে একমত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাপান উভয় দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ‘বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিগ-বি)’ এর অধীনে বাংলাদেশের জন্য একটি কর্মসূচি শুরু করেছে।
তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই প্রক্রিয়া দুই দেশের সমৃদ্ধি অর্জনে সহায়ক হবে।
শিনজো অ্যাবে বলেন, শেখ হাসিনা ও তিনি শান্তি গঠনের ক্ষেত্রে আগামী বছরের শুরুতে আরো সহযোগিতা এবং পারমাণবিক শক্তির শন্তিপূর্ণ ব্যবহারের জন্য চলতি বছরের মধ্যে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে দু’দেশের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে মতবিনিময় করেন।
তিনি আরো বলেন, ২০১৪ সালে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর পরস্পরের দেশ সফর দ্বিপাক্ষীক সম্পর্কের ইতিহাসে একটি বিশেষ ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর আগে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবের কাছে দু’টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি সম্বলিত একটি এ্যালবাম হস্তান্তর করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর সাম্প্রতিক জাপান সফরকালে বন্ধুতের নিদর্শন হিসেবে জাপানে দ’ুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী অ্যাবে বাংলাদেশ ও জাপানী মুদ্রার একটি বাক্স শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। এই প্রথামবারের মতো জাপানের টাকশাল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি সম্বলিত বাংলাদেশী কয়েন তৈরি করেছে।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)