1115
Published on সেপ্টেম্বর 1, 2014তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে দেশ সমুদ্রকে যতো বেশি ব্যবহার করতে পেরেছে, সে দেশ তার অর্থনীতিকে ততো এগিয়ে নিতে পেরেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসও এর ব্যতিক্রম নয়।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে দুদিনব্যাপী ‘ব্লু ইকোনমি বিষয়ক আন্তর্জাতিক কর্মশালা’ উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে।
এতে অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান, মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রী সায়েদুল হক, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এসিসট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল আর্নি ম্যাথিসেন বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী দেশের বিপুল সমুদ্রসীমা থেকে সমুদ্রসম্পদ আহরণে দক্ষ জনবল তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্রের জলরাশি এবং এর তলদেশে রয়েছে জানা-অজানা জৈব এবং খনিজ সম্পদের ভান্ডার।
তিনি বলেন, এসকল সম্পদের প্রাপ্যতা, উত্তোলন এবং ব্যবহার সম্পর্কে আমাদের পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের অভাব রয়েছে। সুতরাং দেশের বিপুল জলসীমা থেকে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণে আমাদের দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ এবং বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বিদ্যমান খনিজ সম্পদের উত্তোলনেও আমাদের প্রযুক্তির অভাব রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্য্র বিমোচন, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা,জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলাসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সমুদ্র সম্পদের ভুমিকা অপরিসীম।
তিনি আরো বলেন ভূ-কেন্দ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি সমুদ্রভিত্তিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকান্ড তথা ব্লু ইকোনমি উপকূলীয় রাষ্ট্র এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের সামনে খুলে দিতে পারে উন্নয়নের নতুন দিগন্ত।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের রয়েছে বঙ্গোপসাগরের অসীম সম্ভাবনাময় সমুদ্র সম্পদ। বাণিজ্য সম্প্রসারণ, জ্বালানি নিরাপত্তায় সমুদ্রের খনিজ সম্পদের ব্যবহার, সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, সমুদ্রের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র রক্ষার মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরকে আমরা উন্নয়নের নিয়ামক ভূমিকায় দেখতে পারি।
দেশের আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যকে পুরোপুরি সমুদ্রনির্ভর উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রায় ১৩০ ডলারের জিডিপি নিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি জিডিপি’র আকারে আজ বিশ্বে ৪৪তম।
প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূর দৃষ্টিসম্পন্ন উদ্যোগের কথা স্মরণ করে বলেন, বঙ্গোপসাগরের বহুমাত্রিক বিশাল সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সমুদ্রে বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটার্স এন্ড ম্যারিটাইম জোন্স অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ আইন প্রণয়ন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী দেশ হিসেবে সমুদ্রে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ জড়িত। বঙ্গোপসাগরে দেশের অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল মিয়ানমার ও ভারতের সাথে অমীমাংসীত সীমানা। এ বিষয়টি সবার জানা থাকলেও বিগত ৪০ বছর এ সমস্যা সমাধানে কেউ কোন বাস্তব পদক্ষেপ নেয়নি। বরং এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে, প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর আপত্তির মুখে কেবল সমুদ্রসম্পদ আহরণের প্রক্রিয়াই বাধাগ্রস্ত হয়নি দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে তাঁর সরকার ২০০১ সালে আনক্লস অনুসমর্থন করে এবং এর মধ্য দিয়ে সমুদ্রে বাংলাদেশের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক আইন ও আন্তর্জাতিক বিধিবিধানকে ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিনের অমিমাংসিত এ বিষয় নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আন্তর্জজাতিক সমুদ্রসীমা সম্পর্কিত আদালতে দায়েরকৃত মামলায় তাঁর সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ মিয়ানমার ও ভারতের বিরূদ্ধে জয়লাভ করে। এতে মহীসোপান এলাকার ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত সকল প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদের উপর বাংলাদেশের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিনা বাধায় সমুদ্রের তলদেশ থেকে বিপুল খনিজ সম্পদ উত্তোলনের সুযোগ সৃষ্টি হয় ।
সমুদ্রপথে বাণিজ্য সম্প্রসারণে বাংলাদেশের বন্দরসমূহের গুরুত্ব প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্প্রতি বর্তমান সরকারের প্রতিবাদের মুখে আন্তর্জাতিক মেরিটাইম ব্যুরো দীর্ঘ ২০ বছর পর জলদস্যুতার জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে বাংলাদেশের নাম বাদ দিয়েছে। এছাড়া এ দেশের সমুদ্র এলাকায় বিদ্যমান জলদস্যুতা এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কার্যক্রম রোধে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের দক্ষতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথ অবাধ বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলের জন্য উন্ম্ক্তু ও নিরাপদ রাখা এবং একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল ও মহীসোপান এলাকার প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদের অবৈধ ব্যবহার প্রতিরোধে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী এবং কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, এরফলে বাংলাদেশের বন্দরসমূহে আন্তর্জাতিক জাহাজের আগমন বৃদ্ধি পাবে ।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই বিশাল জলভাগ ও তার তলদেশ, সংলগ্ন সমুদ্র বা মহাসমুদ্রে বিদ্যমান প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের যথাযথ ব্যবহার করে ব্লু ইকোনমি’র টেকসই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পদক্ষেপ নেয় অত্যন্ত সময়োপযোগী।
তিনি বলেন, এ সকল সম্পদের প্রাপ্যতা, উত্তোলন ও ব্যবহারের পাশাপাশি গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণ এবং বঙ্গোপসাগরের তলদেশে বিদ্যমান খনিজ সম্পদের উত্তোলনে বাংলাদেশের প্রযুক্তির অভাব রয়েছে। এ জন্য এসব ক্ষেত্রে দক্ষ জনবল তৈরির জন্য বর্তমান সরকারের উদ্যোগে ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিজ্ঞান বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষাদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজারের রামুতে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম “সমুদ্র-বৈজ্ঞানিক সম্প্রদায়”। এছাড়া শিল্পোন্নত দেশসমূহের সহায়তায় এসকল ক্ষেত্রে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়েও উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
শেখ হাসিনা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন রক্ষায় বঙ্গোপসাগরের অপরিসীম অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, আনক্লস’র সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বঙ্গোপসাগরের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্তমান সরকার সচেতন রয়েছে। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের সাথে সম্মিলিতভাবে বঙ্গোপসাগরের নির্দিষ্ট এলাকাকে ‘মেরিটইম প্রোটেকটেড এরিয়া’ ঘোষণার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক এই কর্মশালার সাফল্য কামনা এবং আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, এ সেমিনারের মাধ্যমে একটি কার্যকর সুপারিশমালা তৈরি হবে এবং যা সংশ্লিষ্ট সকলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল