রাঙ্গামাটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করতে প্রধানমন্ত্রীর আহবান

589

Published on আগস্ট 31, 2014
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী আজ বাংলাদেশ সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় পরিদর্শনকালে পাহাড়ী জেলাটিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষা সম্প্রসারণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এ নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনা চলতি বছরের জানুয়ারিতে তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রত্যেক মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসেন।

শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ প্রধানমন্ত্রীকে মন্ত্রণালয়ে স্বাগত জানান। এ সময় শিক্ষা সচিব মুহাম্মদ সাদিক ও মন্ত্রণালয়টির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার শিক্ষাখাতে ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে বিবেচনা করে। এ জন্য স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজনে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। তবে শিক্ষার উন্নয়নে এই অর্থ অবশ্যই একটি নিয়ম ও কাঠামোর মধ্যে ব্যয় হওযা প্রয়োজন।

শেখ হাসিনা পাহাড়ী জেলাগুলোর যাতায়াতে অসুবিধা এমন প্রত্যন্ত এলাকায় শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠার এবং চরাঞ্চলের ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির উপর গুরুত্বারোপ করেন।

রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ বিলম্ব হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অন্যান্য ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো সম্পূর্ণ আবাসিকভাবে এটি স্থাপনের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল।

ভুটান সরকারকে এই বিশ্ববিদ্যায়টির নকশা প্রণয়নের জন্য একজন আর্কিটেক্ট দিয়ে সহায়তা করার অনুরোধ জানানো হয়েছে এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটির স্থাপত্য নকশা সংশ্লিষ্ট এলাকায় পারিমান্ডলিক সৌন্দর্যের সাথে সঙ্গতি রেখে দৃষ্টিনন্দন করে প্রণয়ন করা প্রয়োজন এবং এটি দেশের একটি আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র হবে।

তিনি বলেন তাঁর সরকার চরাঞ্চলের গৃহহীন মানুষের জন্য আবাসন সুবিধা দেয়ার পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে এসব এলাকার ছেলে-মেয়েদের জন্য শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টির উপরও গুরুত্ব দিতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সকল জাতীয় অর্জনে ছাত্রসমাজের ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য তাদের সুষ্ঠু বিকাশে একটি আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা নীতি প্রণয়ন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ লক্ষ্যে আমরা কাজ শুরু করি। কিন্তু ২০০১ সালে ক্ষমতার পরিবর্তনের কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, জাতির ভবিষ্যত প্রজন্মকে গড়ে তুলতে দেশে দীর্ঘদিন কোনো শিক্ষা নীতি ছিলো না। বঙ্গবন্ধু শিক্ষা নীতি প্রণয়নের জন্য কুদরত-ই-খুদার নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠন করেছিলেন। কিন্তু তাঁর নৃশংস হত্যাকা-ের পর এই রিপোর্ট বাস্তবায়িত হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ দ্বিতীয়বার সরকার গঠনের পর এ ব্যাপারে পরিকল্পনা গ্রহণ করে সর্বপ্রথম একটি শিক্ষা নীতি প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়। এর ফলশ্রুতিতে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে ২০১০ সালে একটি শিক্ষানীতি প্রণীত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশ গড়তে চেয়েছিলেন। আমরা তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে চাই। বঙ্গবন্ধুর এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের অন্যতম উপকরণ হচ্ছে শিক্ষা।

তিনি বলেন, সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূর করতে হলে জাতিকে অবশ্যই শিক্ষিত হতে হবে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও জাতীয়করনের সঙ্গে নারী শিক্ষা অবৈতনিক করেছিলেন।

বর্তমান সরকার শিক্ষা খাতে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দিয়েছে- এ কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের নির্বাচনী প্রচারণায় শিক্ষা খাতে ব্যয়কে একটি জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এ জন্য আমাদের সরকার শিক্ষা খাতের ব্যয়কে বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে তা জাতি গঠনে ব্যবহার করছে।

মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষা দিয়েই এ অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার ভিত রচিত হয়েছে।

শিক্ষার হার বাড়াতে তাঁর সরকারের সাফল্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে দায়িত্ব নেয়ার সময় দেশে শিক্ষার হার ছিলো ৪৫ শতাংশ। ওই সময় একটি বিশেষ পরিকল্পনার আওতায় শিক্ষিতের হার ৪৫ শতাংশে উন্নীত হয়। কিন্তু ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের ৫ বছরের শাসনে দেশে শিক্ষিতের হার ৪৭ শতাংশে নেমে আসে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষার পাশাপাশি গবেষণা ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে বর্তমান সরকার। ১৯৯৬ সালে তাঁর সরকারের আমলেই প্রথম গবেষণা খাতে ১২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা পর্যায়ে গ্রেড মার্কিং পদ্ধতি চালুর কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরফলে বৈশ্বিক পদ্ধতির সঙ্গে আমাদের শিক্ষার সংযোগ সাধনে সহায়ক হয়েছে। তিনি প্রাথমিক স্কুল সার্টিফিকেট ও জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা চালু করতে চমৎকার কাজ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষায় ছাত্রছাত্রীদের সাফল্যের হারের সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি এখনকার ৯২ শতাংশ থেকে আগামীতে ৯৮ শতাংশ সাফল্য দেখতে চাই। আমি আমাদের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোন মেধাস্বল্পতা দেখতে চাই না।

তিনি বলেন, তবে সাফল্যের জন্য তাদের প্রতি আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। সরকার পাঠ্যপুস্তক, বৃত্তি ও ভাতা প্রদানের মাধ্যমে তাদেরকে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।

আন্দোলনের নামে বিএনপি ও তার জোটের বহু প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বছরের শুরুতে ছাত্রছাত্রীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক পৌঁছে দেয়ার জন্য তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ৭৮ লাখ ৭০ হাজার ১২৯ জন ছাত্রছাত্রীকে বৃত্তি প্রদান করেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, এ পর্যন্ত শিক্ষার সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড থেকে শুধুমাত্র মেয়েদেরকে স্নাতক পর্যন্ত পড়তে বৃত্তি প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু এ বছর থেকে ছেলেমেয়ে উভয়কেই এ ফান্ড থেকে বৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং, লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং শিক্ষা এবং সমুদ্রবিষয়ক পড়াশোনা ও গবেষণার জন্য বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। তিনি বলেন, কক্সবাজারে একটি মেরিটাইম ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংসদের আগামী অধিবেশনে আইন পাস করা হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু শিক্ষা ছাড়া তা সম্ভব নয়। তিনি গণিত ও বিজ্ঞানের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করতে শিক্ষকদের আহ্বান জানিয়ে ছাত্রদেরকে আইসিটি শিক্ষার প্রতি স্বাগত জানান। তিনি বলেন, সকল গ্রন্থ ই-গ্রন্থে রূপান্তরিত করা হবে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিজ্ঞান শিক্ষা ও গবেষণার প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আধুনিক পাঠ্যসূচিসহ প্রতিটি জেলায় বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।

-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত