552
Published on আগস্ট 31, 2014
শেখ হাসিনা বলেন, আমার রাজনীতিও সেই একই আদর্শে অনুপ্রাণিত। তিনি বলেন, দেশের দারিদ্র্য বিমোচন, একটি উন্নত জাতি হিসেবে দেশকে গড়ে তোলা এবং একটি গৌরবান্বিত জাতি হিসেবে বাংলাদেশকে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্য নিয়ে আমি রাজনীতি করছি।
তিনি আজ বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আওযমী লীগের এক সমাবেশে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৯তম শাহাদাৎ বার্ষিকী এবং জাতীয় শোক দিবস পালন উপলক্ষ্যে দলের নেয়া মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর শাখার উদ্যোগে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতির স্বার্থ রক্ষায় আপোষহীন ছিলেন বলেই তাঁকে এভাবে জীবন দিতে হয়েছে। তিনি জনগণের ভাগ্য পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন এবং তাদের কল্যাণে কাজ করতে চেয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে পারলে বঙ্গবন্ধুর আত্মত্যাগ এবং আমাদের সংগ্রাম সফল হবে।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য যথাক্রমে তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী,এডভোকেট সাহারা খাতুন, খাদ্যমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির পুনরুত্থানের সুযোগ আর কখনো দেবে না এবং দেশের মাটিতে খুনীদের কোনো ঠাঁই নেই। আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিচার করেছি এবং রায় কার্যকর করেছি। তিনি বলেন, পলাতক খুনীদের বিচারের রায়ও কার্যকর করা হবে ইনশাআল্লাহ।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। অথচ জিয়াউর রহমান দেশে তাদের পুনর্বাসন করেছে এবং স্বাধীনতার পর জাতীয়তা ত্যাগকারী বাঙালিদের অনেককে দেশে ফিরিয়ে এনেছিলেন। তারা এখন যন্ত্রণায় আছে, তারা এখনো পাকিস্তানের দাসত্বকে মেনে নিয়ে আছে। তারা নিজেদের মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় না। বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া মীরজাফরদের সহযোগী।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের মানুষ যখন শান্তিতে বসবাস করে এবং বাংলাদেশ বিদেশ থেকে সম্মান বয়ে আনে, বেগম জিয়ার তখন ভালো লাগে না। তিনি কষ্ট পান। তবে বাঙালি জাতিকে আর পিছে ফিরিয়ে নিতে কেউ দেবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের উদ্দেশ্য ছিলো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন আনা এবং স্বাধীনতার সকল অর্জন, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও চেতনা ধ্বংস করা।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এবং চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করার পর জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সেনাবাহিনীতে উনিশ বারেরও বেশি অভ্যুত্থান হয়। দেশের স্বাধীনতার জন্য যে সেনাবাহিনী যুদ্ধ করেছে তাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ৬৬৫ জন কর্মকর্তার পাশাপাশি প্রায় ২ হাজার ৫শ’ সেনা কর্মকর্তা ও সেনা সদস্যকে হত্যা করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান ধীরে ধীরে সেনাবাহিনী থেকে সকল মুক্তিযোদ্ধাকে সরিয়ে দেয় এবং ক্ষমতায় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে বসায়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এবং যারা রাজাকার ও আল-বদর বাহিনী গঠন করেছিলো তাদের ক্ষমতায় বসায়।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বাসঘাতক মুস্তাক ও জিয়াউর রহমানও বঙ্গবন্ধুর খুনী। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে উপ-সেনাপ্রধান করেছিলেন এবং তার পরিবারকে রক্ষায় তাকে ঢাকা নিয়ে এসেছিলেন। অথচ সেই জিয়া বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ে জড়িত। বঙ্গবন্ধুর খুনীরা বিবিসিসহ বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়ে পরিস্কার বলেছেন, তারা খন্দকার মুস্তাক ও জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে ১৫ আগস্টে হত্যাকা-ের প্রস্তুতি নেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জিয়া পাকিস্তান দখলদার বাহিনীর সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং পাক জেনারেল আসলাম বেগমকে লেখা পত্রে এ কথা উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মুস্তাক জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান করেছিলেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেনÑ তাদের মধ্যে আঁতাত না থাকলে মুস্তাক কেনো জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনী প্রধান করলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে নিজেকে দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দেন। এটি সামরিক আইনের সম্পূর্ণ লংঘন। জিয়াউর রহমান সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করার সময়ে সহ¯্রাধিক রাজনৈতিক নেতা-কর্মীকে হত্যা করেন।
শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসের স্মরণ করে বলেন, মাত্র ১৫ দিন আগে তিনি তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে জার্মানী গিয়েছিলেন। সে সময়ে তাঁর স্বামী সেখানে কর্মরত ছিলেন। তারা দীর্ঘ সময় দেশে ফিরে আসতে পারেননি।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর বাসভবন তালাবদ্ধ করে রাখেন। দেশে ফিরে আসার পর আমি বাড়িতে মিলাদ দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু জিয়াউর রহমান এই বাড়িতে আমাকে প্রবেশ করতে দেয়নি। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনীদের বিদেশী মিশনে চাকরি দিয়েছেন এবং দেশের রাজনীতিতে তাদের পুনর্বাসিত করেছেন। জিয়াউর রহমান খুনীদের বিশ্বের অনেক দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার বন্ধ করতে চেষ্টা করেছে। বিএনপি আদালতে বিচারককে যেতে বাধা দিতে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায়ের দিনে হরতাল দিয়েছে। তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের দোসরদের দেশের প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রী বানিয়েছেন এবং তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও রাজাকার ও আল-বদর প্রধানকে মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী বানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা ১৫ আগস্টে কেক কেটে জন্মদিন পালন করায় খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, কোনো বিকৃত মস্তিষ্কের লোক ছাড়া জাতীয় শোক দিবসে এমন ফান করতে পারে না। খালেদা জিয়া ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন করে খুনী ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে রয়েছেন এবং তিনি দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর কন্যাই ননÑ তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের একজন সৈনিকও। তিনি বলেন, আমি দেশের জনগণের একজন সেবকও। তিনি দেশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সতর্ক থাকতে দেশবাসীর প্রতি আহবান জানান।
-বাসস
ছবিঃ ইয়াসিন কবির জয়