740
Published on আগস্ট 27, 2014
প্রধানমন্ত্রী আজ ‘ হজ্জ কার্যক্রম ২০১৪ ’ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন। নগরীর আশকোনায় হাজীক্যাম্পে অনুষ্ঠিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান। ধর্ম মন্ত্রণালয় আয়োজিত এতে বক্তব্য রাখেন বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন,ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বজলুল হক হারুন এমপি,সাবেক মন্ত্রী এডভোকেট সাহরা খাতুন ও ঢাকাস্থ সৌদী রাষ্ট্রদূত আবদুল্লা বিন নাসের আল বুশাইরি। স্বাগত ভাষন দেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব চৌধুরী মোহম্মদ বাবুল হাসান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,গত পাঁচ বছরে হজ্ব ব্যবস্থাপনায় হাজীদের সেবাপ্রদান অনেক সহজলভ্য ও উন্নয়ন হয়েছে। হজ্জ ব্যবস্থাপনায় উন্নতির লক্ষ্যে আমরা বেশ কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২০০৯ সালে হজ্জ উইং এর অফিস জেদ্দা হতে মক্কাস্থ বাংলাদেশ হজ্জ মিশনে স্থানান্তর করি। আমাদের এ সিদ্ধান্তের ফলে গত পাঁচ বছরে হজ্জ ব্যবস্থাপনায় হাজীদের সেবা প্রদান অনেক সহজলভ্য ও উন্নততর হয়েছে।
বিএনপি-জামাত জোট ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হজ্জ যাত্রীদের দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা উল্লেক করে তিনি বলেন, হজ্জযাত্রী পরিবহনে চরম বিশৃঙ্খলা ও অনিয়ম সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছিল। ২০০৯ সালে আমাদের সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই হজ্জ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি অগ্রাধিকার লাভ করে। হজ্জযাত্রী পরিবহন, মক্কা-মদিনায় আবাসন ব্যবস্থা, চিকিৎসা সেবাসহ সকল ক্ষেত্রে পূর্বের সরকারগুলোর যাবতীয় অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা দূর করার উদ্যোগ গ্রহণ করি। এর ফলে হাজীদের সুযোগ-সুবিধাদি বৃদ্ধিসহ হজ্জব্রত পালন সুনিয়ন্ত্রিত পদ্ধতির আওতায় এসেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, আমাদের পক্ষক্ষেপ করার ফলে হজ্জ ব্যবস্থাপনায় প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিয়েছে। বিগত পাঁচ বছরে হজ্জ ব্যবস্থাপনায় যে গুণগত পরিবর্তন সাধিত হয়েছে তা সৌদি আরবের হজ্জ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ব্যাপক প্রশংসা লাভ করেছে। সৌদি হজ্জ মন্ত্রণালয় হজ্জ ব্যবস্থাপনায় উন্নতি সাধিত হওয়ায় বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় বলে স্বীকৃতি দিয়ে বাংলাদেশের সরকারকে পত্র প্রেরণ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজ্জ ব্যবস্থাপনায় উন্নতির লক্ষ্যে আমরা বেশ কিছু প্রশাসনিক উদ্যোগ গ্রহণ করি। ২০০৯ সালে হজ্জ উইং এর অফিস জেদ্দা হতে মক্কাস্থ বাংলাদেশ হজ্জ মিশনে স্থানান্তর করি। আমাদের এ সিদ্ধান্তের ফলে গত পাঁচ বছরে হজ্জ ব্যবস্থাপনায় হাজীদের সেবা প্রদান অনেক সহজলভ্য ও উন্নততর হয়েছে।
হজ্জ ব্যবস্থাপনায় তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ প্রয়োগ নিশ্চিত করে হজ্জ ব্যবস্থাপনার আধুনিকায়ন এবং হজ্জ বিষয়ক ওয়েবসাইট প্রস্তুত করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে হাজী সাহেবগণ সহজেই তাঁদের যাবতীয় সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। দেশ-বিদেশ থেকে হজ্জযাত্রীদের আত্মীয়-স্বজনগণ হাজী সাহেবদের অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারছেন। হজ্জযাত্রীরা ভিসা, পাসপোর্ট, আবাসন, মেডিকেল সুবিধা, সৌদি আরব গমন, প্রত্যাগমন সহজ সেবা পাচ্ছেন। হজ্জযাত্রীদের সুবিধার্থে ২০১০ সাল থেকে জেদ্দা টার্মিনাল প্লাজা ভাড়া করা হয়।
আশকোনায় হাজীক্যাস্পের উন্নয়ন সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হজ্জযাত্রীদের হযরত শাহজালাল (রহঃ) বিমানবন্দর সংলগ্ন আশকোনা হজ্জ ক্যাম্পে রিপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হয়। হজ্জ ক্যাম্পের হাজীদের সুবিধার্থে এখানে ৪ টি লিফট স্থাপন করা হয়েছে। হজ্জক্যাম্পের বিমান, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন এলাকায় সেন্ট্রাল এসি স্থাপন করা হয়েছে।
চার দলীয় জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় হজ্জযাত্রীর কথা জানিয়ে করে তিনি বলেন,সে সময় হাজীর সর্বোচ্চ সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৭ হাজার ৯৮৩ জন এবং ৪৫ হাজার ৭৬৩ জন। আমাদের সরকারের বিগত সময় হজ্জযাত্রীর সর্বোচ্চ সংখ্যা বছরে ১ লক্ষ ০৯ হাজার ৯৫২ জন। আমাদের সরকারের সময়ে হজ্জযাত্রী বৃদ্ধির পরিসংখ্যান থেকেই বোঝা যায় যে, হজ্জ ব্যবস্থাপনায় আমরা কতটা উন্নতি করেছি।
তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ সব সময় ইসলামের খেদমতে নিবেদিত। আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে। ইতোমধ্যে সরকারি পর্যায়ে সর্বপ্রথম আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কুরআনের প্রচার ও প্রসারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ কর্মসূচী ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে একটি বিরাট মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠনের সাথে সাথেই ৬৪৩ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা দিয়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রকল্প পুনরায় চালু করি। এর ফলে এদেশে হাজার হাজার আলেম ওলামার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। তিনি বলেন, আমরা ক্ষমতায় আসার পূর্বে বাংলাদেশে ইসলামের নামে মানুষ হত্যা, খুন, বোমাবাজি ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়। আর এসব করা হয়েছে পবিত্র ধর্ম ইসলামের নামে। কতিপয় বিপথগামী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী এখনও ইসলামের নামে ধ্বংসাত্মক ও জঙ্গী কর্মকা-ে লিপ্ত রয়েছে। এ কলঙ্কের হাত থেকে দেশকে উদ্ধার করতে আমরা জঙ্গীবাদ বিরোধী কর্মসূচী গ্রহণ করেছি।
হজ্জ ব্যবস্থনায় বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপগ্রহণের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন সত্যিকার অর্থে মনেপ্রাণে একজন খাঁটি মুসলমান। তাঁর সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য অসামান্য অবদান রেখে গেছেন তা আমাদের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনিই সর্বপ্রথম ১৯৭৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন। তিনিই প্রথম রমনা রেসকোর্সে ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন। আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন। টঙ্গিতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ, কাকরাইলে তাবলীগ জামাতের মসজিদের জন্য ভূমি প্রদান, বেতার ও টেলিভিশনে অনুষ্ঠানের শুরু ও সমাপ্তিতে কুরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেছিলেন। মুসলিম বিশ্বের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও এ দেশের মর্যাদা তুলে ধরতে তিনি লাহোরে অনুষ্ঠিত ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেছিলেন।
‘হজ্জ ব্যবস্থাপনায় সফলতার এ ধারা আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে ’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের শাসনতন্ত্র উপস্থাপনকালে গণপরিষদে প্রদত্ত ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, “২৫ বছর আমরা দেখেছি ধর্মের নামে জুয়াচুরি, ধর্মের নামে শোষণ, ধর্মের নামে বেঈমানী, ধর্মের নামে অত্যাচার, ধর্মের নামে খুন, ধর্মের নামে ব্যভিচার -এই বাংলাদেশের মাটিতে এ সব চলেছে। ধর্ম একটি পবিত্র জিনিস। পবিত্র ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা চলবে না।”
‘আমি আজ আল্লাহর ঘরের মেহমানদের সম্মানে এখানে উপস্থিত হতে পেরে নিজেকে গৌরবান্বিত মনে করছি। হজ্জের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ থেকে আল্লাহর মেহমান হিসেবে যারা পবিত্র মক্কা ও মদিনায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে ঘর থেকে বের হয়েছেন, আমি আজ তাঁদের উদ্দেশ্যে কথা বলার পূর্বে মহান আল্লাহর নিকট শোকরিয়া আদায় করছি ’ এ অভিমত রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন,সম্মানিত হজ্জযাত্রীরা সুষ্ঠু ও নিরাপদে হজ্জব্রত পালন করে দেশে ফিরে আসবেন এ দোয়া করছি। হজ্জ পালনকালে বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য হাজীদের দোয়া করতে তিনি অনুরোধ করেন।
-বাসস
ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল