608
Published on আগস্ট 18, 2014প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বাংলাদেশ সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়।
বৈঠকের পর সচিবালয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী মোট সংসদ সদস্যদের ন্যূনতম দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য পুরুষ বা নারী যে কোন বিচারকের অসদাচরণ বা অক্ষমতার জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের পর তাকে অভিশংসন করতে পারবেন।
বর্তমানে সংবিধানের বিধান অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের সর্বাপেক্ষা সিনিয়র দু’জন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিল সুপ্রিম কোর্টের যে কোন বিচারকের বিরুদ্ধে আনীত অসদাচরণের অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রয়োজনীয় সুপারিশ পেশ করবে।
অতপর ওই সুপারিশের আলোকে রাষ্ট্রপতি পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। যথাযথ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে দৈহিক ও মানসিক অক্ষমতার কারণে তিনি একজন বিচারকরকে অভিশংসনও করতে পারেন।
ভূঁইয়া বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬নং অনুচ্ছেদের মাধ্যমে ওই অভিশংসনের কর্তৃত্ব সংসদের কাছে অর্পণ করা হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ সমুন্নত রেখে ওই বিধান প্রণয়ন করা হয়।
কিন্তু জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সংবিধানের অনুপস্থিতিতে ১৯৭৮ সালে এক সামরিক ফরমানে ওই কর্তৃত্ব সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে অর্পণ করা হয়।
ওই ফরমানে সংবিধানের অনুচ্ছেদে ৯৬ বাতিল করা হয়, যা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এর সাথে সাংঘর্ষিক। এ প্রসঙ্গে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, একজন অভিযুক্ত বিচারপতি ও সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের একজন সদস্য সাধারণত দীর্ঘ দিন একই প্রতিষ্ঠানে একসঙ্গে কাজ করায় এই অভিশংসনের সিদ্ধান্তের নিরপেক্ষতা ও যথার্থতা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।
তিনি বলেন, অনুচ্ছেদ ৭ অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং কেবলমাত্র সংবিধান অনুযায়ীই এই ক্ষমতার প্রয়োগ কার্যকরী হবে।
১৯৭২ সালের সংবিধানের চেতনার আলোকে রাষ্ট্রের তিনটি স্তম্ভের জবাবদিহিতা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সংসদের কাছে করতে হবে। স্তম্ভ তিনটি হলো বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও আইন প্রণয়ন।
ভূঁইয়া বলেন, এই চেতনার আলোকে পার্লামেন্ট সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের দায়িত্ব পালনের মেয়াদকাল এবং অন্যান্য মৌলিক আইনের মতো তাদের অপসারণের কর্তৃত্বও পার্লামেন্ট রাখে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, পার্লামেন্টে পাস হওয়া সংবিধানের ১৬তম সংশোধনীতে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে কোন বিচারককে তার কৃতকর্মের জন্য ইমপিচ করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন ব্যতিরেকে এই ইমপিচমেন্ট কার্যকর হবে না।
তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের প্রধান ধারার সঙ্গে সংবিধানের ৫৪, ৭৪ (গ) এবং ৫৭(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গতি রয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো বলেন, সংবিধানের ৫৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে রাষ্ট্রতিকেও ইমপিচ করা যেতে পারে। সংবিধানের ৭৪(গ) অনুচ্ছেদে পার্লামেন্টে সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে সংসদের স্পিকারকেও ইমপিচ করা যেতে পারে।
অপরদিকে সংবিধানের ৫৭(২) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সংসদ সদস্যদের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা যেতে পারে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইন মন্ত্রণালয় খসড়াটি চূড়ান্ত করার আগে যুক্তরাজ্য, ভারত, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও শ্রীলংকার মতো প্রভাবশালী গণতান্ত্রিক দেশগুলোর আইন পর্যালোচনা করে দেখেছে। পাশাপাশি আইন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় আইন কমিশন বিচারকদের ইমপিচ করতে পার্লামেন্টের কর্তৃত্বের বিধান পুনঃসংযোজন করার বিষয়ে সদস্যদের মতামত গ্রহণ করেছে।
ভূঁইয়া বলেন, মন্ত্রিসভা মনে করে, ‘সংশোধনীটি পাস হলে স্বাধীন বিচার বিভাগের উপর জনগণের আস্থা আরো বৃদ্ধি পাবে এবং পার্লামেন্টের কাছে বিচার বিভাগের জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হবে। তিনি বলেন, ১৬তম সংশোধনী পার্লামেন্টে অনুমোদিত হলে বিচারকদের ইমপিচ করার সমগ্র প্রক্রিয়ার জন্য আরো একটি আইন প্রণয়ন করতে হবে।
সভায় মন্ত্রিবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিমন্ত্রীগণ ও সংশ্লিষ্ট সচিবগণ উপস্থিত ছিলেন।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)