542
Published on আগস্ট 13, 2014প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমালোচনা ছাড়া কেউ কোন ভাল কাজ করতে পারবে না এবং এজন্য আমি শিক্ষামন্ত্রীকে বলতে চাই যে ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ একথা পরিহার করে এগিয়ে যান।
তিনি আজ সকালে গণভবনে চলতি বছরের এইচ এস সি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল গ্রহণকালে একথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ ও ১০ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানগণ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফল তুলে দেন।
শিক্ষা সচিব ড. মোহাম্মাদ সাদিক এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আব্দুস সোবহান সিকদার ও প্রেস সচিব এ কে এম শামিম চৌধুরী।
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজে এমন কিছু মানুষ আছে ‘ভাল হোক মন্দ হোক’ সব কাজই তারা পরশ্রীকাতর।
তিনি বলেন, কে কি বললো এ নিয়ে দু:চিন্তার কোন কারণ নেই-আমাদের প্রধান কাজ হচ্ছে শিক্ষার আলো সর্বত্র পৌঁছে দেয়া।
তাঁর সরকারের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে- একথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ভালকরেই জানি আমাদের কি করতে হবে এবং কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে-জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের সে পথ দেখিয়েছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষায় ক্ষেত্রে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং এটি এখন দৃশ্যমান। শিক্ষার মানও স্বাভাবিক নিয়মে বাড়ছে। তবে কোন কিছুই রাতারাতি পরিবর্তন হয় না। যারা কাজ করে তাদের সমালোচনা হবে। কিন্তু যারা কাজ করে না, তাদের সমালোচনা করার কিছুই নেই।
তিনি বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, যে গাছ ফল দেয় সে গাছে ঢিল পড়বে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাখাতের উন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ শেখ হাসিনা বলেন, আমরা অন্ধকার যুগ থেকে দেশকে আলোর দিকে নিচ্ছি এবং এই আলো হচ্ছে শিক্ষার আলো।
কোন জাতিই শিক্ষা ছাড়া উন্নতি করতে পারে না । আমরা দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চাই- এ লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবি-কাঠি হচ্ছে শিক্ষা -একথা উল্লেখ প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল শিক্ষাই কোন একটি দেশের উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী জতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, মহান নেতা একটি স্বাধীন দেশের জন্য এবং বিশ্বের এই অংশে মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে ২৩ বছর সংগ্রাম করেছেন।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ-বিধ্বস্ত জাতি গঠনে শিক্ষার উন্নয়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ করেছেন এবং কুদরত-ই-খুদা শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কারণে এটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শুধু দেশের স্বাধীনতাই চেয়েছিলেন না, দেশের সকল সেক্টরে উন্নয়নের মাধ্যমে জাতিকে এগিয়ে নিতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ দেশের অবকাঠামো ও জনগণের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছিল। সামরিক শাসক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখল করার পর বাংলাদেশ এবং দেশের জনগণকে পুনরায় অন্ধকারে নিক্ষেপ করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসক জনগণের কল্যাণে কিছুই দিতে পারেনি। বরং তারা দুর্নীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটপাট করা এবং ক্ষমতা তাদের কুক্ষিগত করে রাখার মাধ্যমে তারা শুধু নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করা নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বিগত ১৯৯৬-২০০১ সালের মেয়াদকালে আরো একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেছিল এবং ২০০৯-২০১৩ সালের সময় আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক একটি শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করেছিলেন। দেশের সকল স্তরের মানুষ এটি গ্রহণ করেছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, নতুন শিক্ষানীতিতে তথ্য-প্রযুক্তি এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে অধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে এবং অষ্টম শ্রেণী থেকে বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রদানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকার মাল্টিমিডিয়া ক্লাস রুম চালু করেছে। গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদানে শিক্ষার্থীদেরকে স্বল্পমূল্যে কম্পিউটার দেয়া হয়েছে। অদূর ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীরা বই’র বোঝা বহন করার পরিবর্তে নেট বুক ব্যবহার করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সকলের জন্য উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, সরকার প্রতিটি জেলায় সরকারি অথবা বেসরকারি উদ্যোগে অন্তত একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে।
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, দেশের ইতিহাসে তার সরকারই প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী এইচএসসি পরীক্ষায় কৃতকার্য ছাত্র-ছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ভবিষ্যতে সফলতা অর্জনের জন্য তোমাদেরকে আরো কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরে কম্পিউটার বোতাম টিপে অন-লাইনে দশটি বোর্ডের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী অন-লাইনে ফলাফল প্রকাশের পর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এবং তিনজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন।