সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথ দায়িত্ব পালনে শীঘ্রই সিভিল সার্ভিস অ্যাক্ট পাস করা হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

497

Published on আগস্ট 10, 2014
  • Details Image

সিভিল সার্ভিস এ্যাক্ট গঠনের কাজ মোটামুটি সম্পন্ন হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আইনটি বর্তমানে মন্ত্রণালয়ে রয়েছে, শিগগিরই মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পরে সংসদে পাঠানো হবে। ¬

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা শিগগিরই আইনটি পাস করবো এবং এর ফলে সরকারি কর্মকর্তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হবেন।’

প্রধানমন্ত্রী আজ সাভারে বাংলাদেশ লোকপ্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) আয়োজিত ৫৬তম বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ কোর্সের সমাপনী অনুষ্ঠানে একথা বলেন।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও জনপ্রশাসন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদিক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন।

বিপিএটিসি’র রেক্টর খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দারের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে কোর্স উপদেষ্টা ড. মাহমুদুল হাসান ও কোর্সে অংশগ্রহণকারী বেগম মাহফুজা সুলতানাও বক্তব্য রাখেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ৫৩তম প্রশিক্ষণ কোর্সে অংশগ্রহণকারী ২৬৩ জনের মধ্যে ৩০ জনকে ‘রেক্টর মেডেল’ ও ‘মেরিট মেডেল’ প্রদান করেন।

কোর্সে অনন্য কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য মো. নাসির উদ্দিন ‘রেক্টর মেডেল’ লাভ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দক্ষ ও সেবামুখী জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারি অফিসে সিটিজেন চার্টার বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম পোর্টাল ‘জাতীয় তথ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। এসব কর্মসূচির ফলে সিভিল সার্ভিসের সক্ষমতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের যথাযথ বেতন-ভাতা প্রদানের লক্ষ্যে বেতন ও চাকরি কমিশন ২০১৩ গঠন করা হয়েছে।

প্রজাতন্ত্রের নতুন কর্মকর্তাদেরকে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের স্থপতি হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে ঔপনিবেশিক আমলের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে দেশপ্রেম, নিষ্ঠার সাথে কাজ ঔপনিবেশিক আমলের মানসিকতা থেকে বেরিয়ে এসে জনগণের সেবা করার নির্দেশ দেন।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, “আমাদেরকে নিজেদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে হবে এবং ব্রিটিশ আমলের ‘লাল দালান’ রক্ষার কোন যুক্তি নেই। তাহলে যারা আমাদেরকে শোষণ করেছে এবং দাসে পরিণত করেছিল, কেন আমরা তাদের ওইসব সংরক্ষণ করব?”

শেখ হাসিনা তাদেরকে সাধারণ মানুষের কথা গুরুত্ব সহকারে ও মনোযোগ দিয়ে শোনার এবং তাদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে অনুরোধ করেন।

তিনি বলেন, “দেশের মানুষ খুব সহজ-সরল এবং সামান্য সেবা দিয়ে তাদের মন জয় করা সম্ভব। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, জনগণের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আপনারা বর্তমান সরকারের জন-বান্ধব নীতি বাস্তবায়ন করবেন।”

শেখ হাসিনা বলেন, নতুন কর্মকর্তারা তাদের চাকরিস্থলে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন, অন্যদিকে তারা অপরিমেয় উপযোগিতাময় বৈচিত্র প্রত্যক্ষ করতে পারেন।

তিনি বলেন, “কিন্তু আপনাদেরকে সাধারণ মানুষের সমস্যা ও সম্ভাবনা হৃদয় থেকে উপলব্ধি করতে হবে, যারা অনন্য প্রচেষ্টার মাধ্যমে সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করছে।”

একটি সুপ্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনপ্রশাসনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর।

তিনি বলেন, “কিন্তু সরকারের একার পক্ষে এ লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে একটি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনপ্রশাসন সহায়ক শক্তি হতে পারে।”

শেখ হাসিনা মেধা ও চিন্তার সমন্বয়ে বিশ্বায়নের নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমন্বয়ের এই কৌশলগুলো শেখা সম্ভব।”

তিনি বলেন, এই লক্ষ্য সামনে রেখেই বুনিয়াদি প্রশিক্ষণের মেয়াদ চারমাস থেকে বাড়িয়ে ছয়মাস করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও বিপিএটিসি এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য শুধুমাত্র স্বাধীন বাংলাদেশ ছিল না।

তিনি বলেন, “তাঁর (বঙ্গবন্ধু) লক্ষ্য ছিল এ দেশের জনগণের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা এবং সে কারণে তিনি যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে আত্মনিয়োগ করেন”।

শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগের সরকার গঠনের পর আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে উন্নয়ন শুরু হয়েছিল। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে, দারিদ্র্যের হার হ্রাস ও শিক্ষার হার বৃদ্ধি পায় বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, পাশাপাশি দেশ দারিদ্র বিমোচন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী, খাদ্য নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ উৎপাদন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে অভাবনীয় সাফল্য প্রত্যক্ষ করে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউএনডিপি’র প্রতিবেদন অনুসারে, মানব উন্নয়ন সূচকে ১৮৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান চার ধাপ অগ্রগতির মাধ্যমে ১৪২ হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলংকা বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, তিনি যেসব অর্জনের কথা উল্লেখ করেছেন, সেগুলো স্বপ্নের বাংলাদেশ বিনির্মানের পথে সামান্য পদক্ষেপ মাত্র। তিনি বলেন, “আমাদেরকে আরও পথ পাড়ি দিতে হবে এবং সেই গৌরবময় পথ পরিভ্রমনে অংশনিতে আপনারা জনপ্রশাসনে যোগদান করেছেন।”

এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিপিএটিসি’র কেন্দ্রীয় ‘ওয়াই-ফাই সিস্টেম’ এবং ডরমেটরী- ২ ও ৩-এর বর্ধিত অংশের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন।

পরে তিনি বিপিএটিসি লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।

 

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত