559
Published on আগস্ট 8, 2014আজ ওসমানী মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় বক্তারা বঙ্গমাতার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে তাঁর এই অবিস্মরণীয় ভূমিকার কথা স্মরণ করেন।
তারা বলেন, ইতিহাস অবশ্যই বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি হিসেবে বঙ্গবন্ধুর কৃতিত্বের পাশে রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত সচেতন এই মহীয়সী দেশ প্রেমিকের অবদান মূল্যায়ন করবে।
বক্তারা বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসাকে জাতীয় ইতিহাসের এক সাহসী, প্রজ্ঞাময়, নিবেদিত ও স্নেহপরায়ন অনুপ্রেরণাদাত্রী হিসেবে অভিহিত করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ও আওয়ামী লীগের আন্দোলনে তাঁর বিপুল অবদান রয়েছে।
বঙ্গমাতার ৮৪তম জন্মবার্ষিকীতে নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী এবং বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
আয়োজক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিচালক সেলিনা হোসেন, জাতীয় সংসদে মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতি রেবেকা মোমেন এবং জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান প্রফেসর মমতাজ বেগম বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর জীবন তাঁর পিতার আদর্শ এবং তাঁর মাতার দৃঢ়তা দ্বারা পরিচালিত।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অনেক সংকটময় সময়ে যখন সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া অপরিচার্য হয়ে পড়েছিল। এসব গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে দলের নেতা ও কর্মীদের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন বেগম মুজিব।
বঙ্গবন্ধুর সব রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত বঙ্গমাতা জাতির পিতার রাজনৈতিক জীবনে পাকিস্তানী জান্তার নির্যাতনের মাঝে যেকোন পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত ছিলেন একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সব সময় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মতো সহজ-সরল জীবনযাপন করতেন এবং যা তিনি তাঁর মেয়েদের শিক্ষা দিয়েছেন।
দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বঙ্গমাতার স্নেহবাৎসল্যের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের খোঁজ-খবর নিতে এমনকি তাঁকেও কাজে লাগানো হতো। এছাড়া তাদের নিত্যদিনের বাজার ও চিকিৎসার টাকাও দিতেন বঙ্গমাতা।
তিনি বলেন, বঙ্গমাতা পাকিস্তানী শাসকদের বিধি-নিষেধ উপেক্ষা করে কারাবন্দী বঙ্গবন্ধু ও দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে সংবাদ বিনিময় করতেন। বাঙ্গালীদের উপর পাকিস্তানী শাসকদের অবহেলা ও নির্যাতন সহ্য করতে পারতেন না বলে বঙ্গমাতা কখনো করাচি বা পাকিস্তানের কোথাও যাননি।
শেখ হাসিনা বলেন, ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কোন সংকটকালে কখনো কষ্ট বোধ করেননি। বরং তিনি সাহস ও ধৈর্যের সঙ্গে যে কোন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আগারতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়েরের পরও তিনি উদ্বিগ্ন হননি।
বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা বলেন, জাতির পিতার ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে তাঁর মাতার বড় ভূমিকা ছিল।
আমার পিতা বার্টান্ড রাসেলের আদর্শে অনুপ্রাণিত ছিলেন একথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি (বঙ্গবন্ধু) রাসেলের সৃষ্টিকর্মের অনুবাদ করে মাকে শুনাতেন এবং এই প্রখ্যাত দার্শনিকের নামে তাঁর কনিষ্ঠ পুত্রের নামও রেখেছিলেন।
তিনি বলেন, আমার মা সবসময় ছায়ার মতো আমার বাবার সঙ্গে কাজ করতেন। আমার মায়ের মতো এমন সঙ্গ না পেলে বাংলাদেশের ইতিহাস হয়তো ভিন্নরকম হতে পারতো।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গমাতার প্রজ্ঞা, দক্ষতা ও দৃঢ়চেতা চরিত্রের কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালো রাতে খুনীরা তাঁকে হত্যা করে।
এখন ইসরাইলীরা গাজায় যেভাবে গণহত্যা চালাচ্ছে একইভাবে খুনীরাও এই বর্বর হত্যাকান্ড সংঘটিত করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি গাজায় বেপরোয়াভাবে নারী ও শিশু হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে এনিয়ে বৃহৎ শক্তিগুলোর নিরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
এই হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরাও এধরনের বর্বরতার শিকার। এজন্য বিশ্বের যে কোন স্থানে এধরনের বর্বর ঘটনা ঘটলে এর প্রতিবাদ আমাদের জানাতে হবে।
শেখ হাসিনা বঙ্গমাতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং একটি সুখী, সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ বাংলাদেশ গড়তে তাঁর (বঙ্গমাতা) আদর্শ লালনের জন্য দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জীবন-কর্মের উপর একটি প্রামাণ্য ভিডিও চিত্র প্রদর্শন করা হয়।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)