সতর্ক ও বিনিয়োগবান্ধব মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক

500

Published on আগস্ট 1, 2014
  • Details Image

শনিবার ২৬ জুলাই গভর্নর ড. আতিউর রহমান কেন্দ্রিয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে এক সংবাদ সম্মেলনে মুদ্রানীতির বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন।

এ সময় তিনি বলেন, বিগত ষান্মাসিক মুদ্রানীতির ন্যায় এবারের মুদ্রানীতিতেও বিনিয়োগের বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী মুল্যস্ফীতি সীমিত রাখতে ঋণপ্রবাহের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।

তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর কাজ শুরুর পাশাপাশি চীন ও জাপান বড় কয়েকটি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়বে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

এই প্রথমবারের মতো বেসরকারি খাতে বৈদেশিক আমদানি উৎস থেকে আসা ঋণপ্রবাহকে মুদ্রানীতির হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বেসরকারিখাতে মোট ঋণ প্রবৃদ্ধি গত ৬ মাসের ন্যায় এবারও সাড়ে ১৬ শতাংশ। উল্লেখ্য, বিগত মুদ্রানীতির সময়ে বেসরকারি খাতের মোট ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ।

সংবাদ সম্মেলনে চার ডেপুটি গভর্নর আবুল কাশেম, আবু হেনা মো. রাজী হাসান, এস কে সূর চৌধুরী ও নাজনীন সুলতানা, গভর্নরের পরামর্শক আল্লাহ মালিক কাজমী, প্রধান অর্থনীতিবিদ হাসান জামানসহ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এবারের মুদ্রানীতি প্রোগ্রামে ডিসেম্বর নাগাদ মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে মূল্যস্ফীতি এই পর্যায়ে নিয়ে আসা এক ধরনের চ্যালেঞ্জ বলে গভর্নর মনে করেন।

গভর্নর বলেন, মুদ্রানীতি কার্যক্রমের লক্ষ্য হবে অর্থনীতিতে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মাত্রায় জোরালো করার ক্ষেত্রে সহায়তার পাশাপাশি গড় বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে এনে স্থিতিশীল করা। এজন্য আগের মতোই বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রানীতি কৌশলাদির পাশাপাশি ঋণ ও অর্থায়ন নীতি কৌশলাদিও প্রয়োজনমত ব্যবহার করবে। নতুন অর্থবছরে প্রকৃত অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কর্মকান্ডে গতিশীলতা বেড়ে বাজারে বিদ্যমান তারল্য যোগানের পূর্ণ সদ্ব্যবহার হবে বলে তিনি প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

ড. আতিউর বলেন, এই নতুন মুদ্রানীতি মুদ্রা ও পুঁজিবাজারে স্বস্তিকর স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় স্থিতিশীল রেখে দারিদ্র্য বিমোচন, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন প্রয়াসে আস্থা ও উৎসাহ যোগানে অবদান রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

বিভিন্ন উৎপাদনমুখী খাতে অর্থায়ন সুলভতর করার জন্য মুদ্রানীতি প্রোগ্রামের আওতায় থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিদ্যমান সমর্থন উদ্যোগগুলো জোরদার করা হচ্ছে। এর একটি উদাহরণ হলো রফতানি উৎপাদনের উপকরণাদি সংগ্রহে অর্থায়নের জন্য সম্প্রতি রফতানি উন্নয়ন তহবিল ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার থেকে ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারে উন্নীতকরণ।

এক প্রশ্নের উত্তরে গভর্নর বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জোরালো করার পাশাপাশি ‘ফাইন্যান্সিয়াল সিস্টেম স্ট্যাবিলিটি’ শক্তিশালী করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা হয়েছে। রাাষ্ট্রায়ত্ত্ব একটি ব্যাংকের এমডিকে অপসারণ করা হয়েছে। এর পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের সুপারিশে ওই ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নের উত্তরে ডেপুটি গভর্নর এস কে সূর চৌধুরী বলেন, বেসিক ব্যাংকের বিরুদ্ধে যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের করা তদন্ত প্রতিবেদন দুদকে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। দুদক এখন এসব বিষয়ে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেবে। এর পাশাপাশি বেসিকের আত্মস্যাৎ করা অর্থ যদি বিদেশে পাচার হয়ে থাকে, তার তথ্যাদি পেতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে বলে তিনি জানান।

তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামের বড় কয়েকজন ব্যবসায়ীর কাছে যে বিশাল অংকের ঋণের অর্থ আটকে আছে, তা আদায়ে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে। ব্যাংকগুলো এই অর্থ আদায়ে এখন আলাদা টিম গঠন করেছে। তারা চেষ্টা করছে। যদি ব্যাংকগুলো এই অর্থ আদায়ে ব্যর্থ হন, তখন কেন্দ্রিয় ব্যাংক যথাপোযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত