577
Published on জুলাই 26, 2014তিনি বলেন,“ আমি মনে করি, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এই সফর অত্যন্ত সফল ও ফলপ্রসূ হয়েছে এবং এর মাধ্যমে আমাদের দু'দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের গত পাঁচ বছর ছিল মাইলফলক। আমরা এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছি”।
প্রধানমন্ত্রী আজ শনিবার সকালে গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন। লন্ডন সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সন্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী এবং প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক আন্থনি লেকের আমন্ত্রণে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত গার্ল সামিটে যোগ দিতে ২১ থেকে ২৩ জুলাই তিন দিনের সরকারি সফরে লন্ডন যান।
তিনি ব্রিটেনের রাজধানী লন্ডনে অনুষ্ঠিত গার্ল সামিট-২০১৪’তে ২০ সদস্য বিশিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
‘ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন (এফজিএম)’ এবং জোরপূর্বক ও বাল্য বিবাহ বন্ধে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা জোরদারের লক্ষ্যে যুক্তরাজ্য সরকার ও ইউনিসেফ প্রথমবারের মতো এ সামিটের আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী সামিটের উচ্চ পর্যায়ের অধিবেশনে যোগ দেন এবং ওয়ালওর্থ একাডেমিতে বুর্কিনা ফাঁসোর ফাস্ট লেডি চাঁতাল কম্পাওর ও পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিশু শিক্ষাকর্মী মালালা ইউসুফ জাইয়ের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
সফরকালে প্রধানমন্ত্রী ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে দ্বিপাক্ষিক ও পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লি¬ষ্ট বিভিন্ন বিষয় স্থান পায়।
ব্রিটেন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু। বিশেষ করে ব্রিটেনের গণমাধ্যম ও নাগরিকরা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে যে অকৃত্রিম সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছিল তা সব সময়ই কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ব্রিটেন সব সময়ই আমাদের পাশে ছিল। সেই প্রেক্ষাপটে এই সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি, বাল্য বিবাহের মতো সংবেদনশীল সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার ক্ষেত্রে গার্ল সামিট ছিল একটি মাইলফলক। লন্ডনের ওয়ালওর্থ একাডেমিতে ২২ জুলাই অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে ৫৫টি দেশের প্রতিনিধিগণ অংশ নেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,এ সম্মেলনে তিনি বাংলাদেশের বৈশ্বিক পর্যায়ে তার সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ, অঙ্গীকার, কর্মপরিকল্পনা ও সুপারিশসমূহের ওপর বক্তব্য রাখেন। শীর্ষ পর্যায়ের প্লেনারিতে বিভিন্ন আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, বুরকিনা ফাসোর ফার্স্টলেডি চাতাল কাম্পাত্তরে, পাকিস্তানের মানবাধিকার কর্মী মালালা ইউসুফজাই ও ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক এন্থনী লেক।
শেখ হাসিনা বলেন, সম্মেলনে তিনি ২০২১-এর মধ্যে ১৫ বছরের নীচের বাল্যবিবাহ সম্পূর্ণ বন্ধ করার ঘোষণা দেন। একই সময়সীমার মধ্যে ১৫-১৮ বছরের মেয়েদের বিবাহ এক তৃতীয়াংশে কমিয়ে আনারও ঘোষণা দেন।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সাথে প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এ সফরের অন্যতম একটি অর্জন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও নারী উন্নয়ন, বিশেষ করে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বাধীনতা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমাদের উদ্যোগ এবং অর্জনের প্রশংসা করেন। তিনি জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের মূলোৎপাটনে আমাদের সরকারের কঠোর অবস্থানেরও ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি বাংলাদেশ সফর করে এই অর্জনের কৌশল নিজ চোখে দেখতে চান এবং যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত বন্ধু হিসাবে অভিহিত করেন। ডেভিড ক্যামেরন বলেন, আমাদের প্রয়োজন সামনের দিকে তাকানো এবং শেখ হাসিনার সরকারের সাথে তার সরকারের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।
ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক এবং ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়ানের সাথে বৈঠকের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেক তাকে ‘সিম্বল অব লিবারেল প্রগ্রেসিভ গ্লোবাল লিডার’ হিসেবে অভিহিত করেন। এছাড়াও শিশু অধিকার বিশেষ করে মেয়ে শিশুদের অধিকার রক্ষায় তার সরকারের অবদানের জন্য প্রশংসা করেন।
বাংলাদেশে এমডিজি’র ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘যখন আমি এমডিজি’র চার্ট দেখি তখন সকল ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে গ্রীন দেখি।’
ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ডেসমন্ড সোয়ানের সাথে বৈঠকের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসময় তিনি বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের ব্যাপকতা বৃদ্ধি, তাজা মাছ, সবজি ইত্যাদি রফতানি বৃদ্ধির লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক মানের একটি রাসায়নিক পরীক্ষাগার স্থাপন, কম খরচে জ্বালানি বিকল্প তৈরিতে গবেষণায় কারিগরি সাহায্য এবং বাংলাদেশে অধিক হারে ব্রিটিশ বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্য সরকার তথা ডিএফআইডি'কে সহায়তা করার অনুরোধ জানান বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিটিশ ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডগলাস আলেকজান্ডারের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূমিকার প্রশংসা করেন এবং আগামীতেও তাকে একই ধরনের বলিষ্ঠ ভূমিকায় দেখার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
এ ছাড়াও ২২ জুলাই বিকেলে হোটেলে লর্ড শেখ-এর নেতৃত্বে ব্রিটেনের ৫ সদস্যের একটি সংসদীয় দল এর সাথে তার বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসু হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
ব্রিটিশ হাউজ অব কমন্সের স্বরাষ্ট্র বিষয়ক পার্লামেন্টারি কমিটির চেয়ারম্যান লেবার পার্টির এমপি কিথ ভাজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন উল্লেখ করে বলেন, সাক্ষাতে তিনি প্রধামন্ত্রীকে গার্ল সামিটে অংশ নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।
তিনি (কিথ ভাজ) বলেন, ‘ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ, কেননা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শুধু একজন নারী প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি এমন একজন বিশ্ব নেতা, যিনি সারাজীবন কন্যা শিশু ও নারী উন্নয়নের জন্য কাজ করছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন’।
কিথ ভাজ আরও বলেন, তিনি অচিরেই ডেভিড ক্যামেরনকে একটি চিঠি লিখতে যাচ্ছেন যেখানে উল্লেখ থাকবে গার্ল সামিটে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণই ছিল এর সাফল্যের অন্যতম কারণ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২২ জুলাই বিকেলে হোটেলে লর্ড শেখ-এর নেতৃত্বে ব্রিটেনের ৫ সদস্যের একটি সংসদীয় দল তার সাথে দেখা করতে আসলে তিনি তাদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সমুদ্রসীমা নির্ধারণ মামলায় মায়ানমার ও ভারতের সাথে বিজয় এবং এ বিজয় বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি করেছে বলে জানান।
ইতোপূর্বে জাপান ও চীন সফরের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এসকল সফর ছিল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ। শুধু জাপান বা চীনই নয়, বিশ্বের সকল অর্থনৈতিক শক্তির সাথে সম্পর্ক আরো দৃঢ় ও স্থায়ী করাই তার সরকারের লক্ষ্য।
বিভিন্ন দেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আমাদের সরকার যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেষ্ট উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের সুপারওয়েতে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘসহ বিশ্বের অনেক দেশ সরকারের উন্নয়নকে এখন মডেল হিসেবে দেখছে।
তিনি বলেন, “আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি বলেই বাংলাদেশ আজ শক্ত অর্থনেতিক ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়েছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচকেই অত্যন্ত ইতিবাচক ধারা আজ অব্যাহত”।
প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে সাথে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।