732
Published on জুলাই 5, 2014তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, সকল স্তরের কমান্ডারদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ও তাদের প্রতি অনুগত থাকলে যে কোন কাজ দক্ষতা, শৃংখলা ও নিপুনতার সাথে স¤পন্ন করা সম্ভব। নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সকল কাজে আপনারা এগিয়ে যাবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি”।
প্রধানমন্ত্রী আশা করেন, কমান্ডারগণও তাদের অধীনস্থদের প্রতি সবসময়ই প্রয়োজনীয় মনোযোগ বজায় রাখবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ঢাকা সেনানিবাসে স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৩৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দেয়া ভাষণে এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব ) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সেনা বাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভুইয়া, নৌ বাহিনী প্রধান ভাইস-এডমিরাল মুহম্মদ ফরিদ হাবিব, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ এনামুল বারী, স্বশস্ত্রবাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার ল্যা. জেনারেল আবু বেলাল মুহাম্মদ সফিউল হক সহ সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আনোয়ার সোহেল সিদ্দিকী ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পিজিআর হেডকোয়াটার্সে এসে পৌছলে পিজিআর-এর একটি চৌকস দল তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী গার্ডদের সালাম গ্রহণ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামরিক জীবনে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জিত হয় এবং নৈপূণ্য নিশ্চিত করা যায়। সঠিক প্রশিক্ষণ সকলকে পেশাগত জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার হিসেবে বর্তমান সরকার সর্বক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকল ক্ষেত্র ও প্রতিষ্ঠানের ন্যায় পিজিআর তার দায়িত্ব পালনে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করেছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার তাদের কায়িক শ্রম লাঘব এবং নিরাপত্তা বিধানকে আরও কার্যকরী করেছে। কর্তব্য পালনের পাশাপাশি পিজিআর নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলন চালিয়ে যাবেন বলে প্রধানমন্ত্রী আশা ব্যক্ত করেন।
তিনি সমগ্র জাতির পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং মহান আল্লাহ-তাআলার দরবারে তাদের বেহেশত কামনা করে বলেন, ১৯৭৫ সালের ০৫ জুলাই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার অসামান্য দূরদর্শিতায় রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে এই রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠা করেন।
এ সময় বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে তিনি বলেন, সময়ের আবর্তে সে দিনের সেই রেজিমেন্টটি উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আজ একটি স্বতন্ত্র রেজিমেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দায়িত্বপালনকালে এই রেজিমেন্টের সদস্যদের সাথে প্রতিদিনই দেখা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আপনাদের দক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও একাগ্রতা প্রমাণ করে আপনারা সকলেই বিশেষভাবে নির্বাচিত ও নির্ভরযোগ্য গার্ডস সদস্য। আপনারা অত্যন্ত বিশ্বস্ততা, আনুগত্য, শৃংখলা ও পেশাদারিত্বের সাথে গার্ডস-এর দায়িত্ব পালন করছেন। সরকার প্রধান হিসেবে এ রেজিমেন্টের সাথে আমার একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে”।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের নিরলস পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে “গার্ড রেজিমেন্ট” আজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুসংহত ও সর্বজন প্রশংসিত। দিবা ও রাত্রীকালীন সময়ে রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে রেজিমেন্টের একনিষ্ঠ কর্তব্য পালন দেখে তিনি মুগ্ধ ও গর্বিত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিদিনই রেজিমেন্টের কাজের চাপ বাড়ছে। চাপ লাঘবের জন্য রেজিমেন্টের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে। ৪৮১ জন জনবল বৃদ্ধির সাথে ২৩টি এপিসিসহ ৬৫টি যানবাহন, ১২২২টি বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র এবং ৯৪টি বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সরঞ্জামাদিও সংযোজন করা হয়েছে বলে তিনি তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন।
গার্ড সদস্যদের জন্য তার সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের সরকারই সর্ব প্রথম ১৯৯৮ সালে গার্ডস সদস্যদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে, গার্ডস ভাতার প্রচলন করে। বিগত বছরে গণভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত অবস্থানকারী গার্ডস সদস্যদের জন্য একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। এতে করে বাসস্থানের নিকটে নামাজ পড়ে আল্লাহর ইবাদত করার সুযোগ হয়েছে।
এছাড়াও গণভবনে গার্ডস সদস্যদের আবাসস্থল স্বল্পতার সমস্যা নিরসনে ১৫০ জনের বসবাসযোগ্য একটি ব্যারাক নির্মাণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সর্বোপরি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট একটি স্বতন্ত্র রেজিমেন্ট হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ও নতুন ফরমেশন সাইন প্রবর্তিত হওয়ায় তিনি অত্যন্ত আনন্দিত। প্রধানমন্ত্রী আশা করেন যে কোন অবস্থায় নির্ভীক সৈনিকের মত তারা তাদের কর্তব্যবোধকে সবসময় সমুন্নত রাখবেন।
স্বশস্ত্রবাহিনীকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, স্বশস্ত্রবাহিনীকে আধুনিক এবং শক্তিশালী করার জন্য যা যা প্রয়োজন তার সরকার সবেই করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ১৯৯৭ সালে সৈনিকদের জন্য দুপুরে রুটির পরিবর্তে ভাত এবং ১৫ জানুয়ারি ২০১০ তারিখ থেকে সেনাবাহিনীতে কর্মরত জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের জন্য শুকনা ও তাজা রসদ বৃদ্ধি করে নতুন ‘রেশন স্কেল’ প্রণয়ন করেছে। সেনাবাহিনীর সকল সদস্যদের জন্য ২০১০ সাল থেকে মূল বেতন ও বিভিন্ন ভাতাদি বৃদ্ধি করে নতুন ‘জাতীয় বেতন স্কেল ২০১০’ প্রবর্তন করা হয়েছে। গত ১ এপ্রিল ২০১৪ তারিখ থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চাকরিরত সকল জেসিওগণকে ১ম শ্রেণী এবং সার্জেন্টগণকে ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত করণের আদেশ জারী করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সেনাবাহিনী শান্তি রক্ষায় বিভিন্ন দেশে নিয়োজিত আছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় দক্ষতা ও নিরলস পরিশ্রমের মাধ্যমে তাদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেছে। এজন্য দেশ ও জাতি হয়েছে গর্বিত ও আশান্বিত।
প্রেসিডেন্ট রেজিমেন্টের গার্ডের সবাই সেই গর্বিত ও দক্ষ সেনাবাহিনী থেকে বিশেষভাবে নির্বাচিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টকে একটি সুশৃংখল ও পেশাদার বাহিনীর প্রতিবিম্ব হিসাবে দেখতে পান।
প্রধানমন্ত্রী পরে পিজিআর আয়োজিত ইফতার পার্টিতে যোগ দেন। এসময় জাতির সুখ শান্তি, সমৃদ্ধি এবং অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।