494
Published on জুলাই 2, 2014প্রধানমন্ত্রী সব প্লাবন এলাকা ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে সব জাতের মাছ সংরক্ষণে জন্য সচেতনতা আরো বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব আরোপ করে এক্ষেত্রে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে প্রয়োগের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১৪ উদ্বোধনকালে এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবছর মৎস্য সপ্তাহ পালন মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধিতে প্রচুর অবদান রাখছে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক নদী, খাল-বিল, পুকুর এবং বর্ষাকালে বিশাল প্লাবন এলাকা ও প্রাকৃতিক জলাশয় ও উর্বর কৃষি জমির কারণে ‘ভাতে মাছে বাঙালি’ প্রবাদ চালু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে দীর্ঘদিনের অবহেলার কারণে অনেক নিচু ও প্লাবন এলাকা এবং পুকুর ভরাট হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বছরের পর পর কীটনাশক, নগরায়ন ও শিল্প দূষণ, অপরিকল্পিত সড়ক ও বাঁধ নির্মাণের ফলে মাছের আবাস ও প্রজনন এলাকা সংকুচিত হয়ে পড়েছে। মাছের পোনা ও রেনু ধরার ফলে মৎস্য উৎপাদন কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছে না।
অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী মো. ছায়েদুল হক, প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ ও সচিব সেলিনা আফরোজ উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছরের প্রতিপাদ্য ‘অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, মাছ চাষই সমাধান’ খুবই সময়োপযোগী বিষয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। বর্তমানে ৩০ শতাংশ মাছের উৎপাদন প্রাকৃতিকভাবে হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর জনগণের পুষ্টির চাহিদ পূরণ, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের লক্ষ্যে মৎস্য খাতের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সরকারি জলাশয় ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯, মৎস্য হ্যাচারি আইন-২০১০, মৎস্য খাদ্র ও প্রাণী খাদ্য আইন -২০১০, মৎস্য খাতের জন্য ক্ষুদ্র রূপরেখা প্রণয়ন এবং চিংড়ি প্লট নবায়ন ও ইজারা নীতি-২০১৩ সহ মৎস খাতের উন্নয়নে তাঁর সরকার প্রণীত বিভিন্ন আইন কার্যকরের কথা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে মধুমতী, গড়াই, যমুনা, বুড়িগঙ্গা ও কুশিয়ার নদীর নাব্যতা বাড়ানো হয়েছে। গড়াই ও মধুমতী নদী খননের কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় অংশে পানির প্রবাহ বৃদ্ধি ও লবণাক্ততা হ্রাস পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে মাছের নিরাপদ আবাসের সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি সুন্দরবন ও এর আশেপাশের এলাকার জীববৈচিত্র বৃদ্ধি পেয়েছে।
সমুদ্রসীমা নিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে বিরোধ সমাধানের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এর ফলে ১ লাখ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কিলোমিটারের ওপর বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকার মৎস্য সম্পদের উন্নয়ন ও এর বিকাশে এই বিস্তীর্ণ এলাকাকে কাজে লাগাতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, গত পাঁচ বছরে মাছের উৎপাদন ৮ লাখ মেট্রিক টন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে মানুষের দৈনিক গড়ে মাছ খাওয়ার পরিমাণ ৪৫ গ্রাম থেকে ৫২ গ্রামে উন্নীত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাটকা ও ডিমওয়ালা মাছ রক্ষার মাধ্যমে জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সরকার জেলেদেরকে ১ লাখ ২২ হাজার ৯শ’ ২৫ টন খাদ্য সরবরাহ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রপ্তানিযোগ্য মাছের গুণগত মান নিয়ন্ত্রণের জন্য ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় তিনটি আধুনিক পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং একটি আন্তর্জাতিক মানের রেফারেন্স ল্যাব প্রতিষ্ঠার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন মাছ প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য প্রচুর সংখ্যক দক্ষকর্মী রয়েছে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে। ফলে রপ্তানি বাজারে চিংড়ির চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, একসময় জেলেরা সমাজে অবহেলিত ছিল। আমরা পরিস্থিতির পরিবর্তন করেছি। এছাড়া সরকারি সুযোগ সুবিধা পওয়ার জন্য প্রায় দুই লাখ জেলেকে পরিচয়পত্র দেয়া হয়েছে।