511
Published on জুন 29, 2014গত ৫ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ২ লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট পেশ করেন। নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৪ সংসদে গৃহীত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই বাজেট পাস করা হয়।
বাজেট পাসের প্রক্রিয়ায় মন্ত্রীগণ সংশ্লি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যয় নির্বাহের যৌক্তিকতা তুলে ধরে মোট ৫৬টি মঞ্জুরি দাবি সংসদে উত্থাপন করেন। এই মঞ্জুরি দাবি প্রস্তাবগুলো সংসদে কণ্ঠভোটে অনুমোদিত হয়।
প্রধান বিরোধী দল ও স্বতন্ত্র সদস্যগণ মঞ্জুরি দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে মোট ২৪৮টি ছাঁটাই প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এর মধ্যে ৪টি দাবির ওপর আনীত ছাঁটাই প্রস্তাবের ওপর জাতীয় পার্টি ও স্বতন্ত্র সদস্যরা আলোচনা করেন। পরে কণ্ঠভোটে ছাঁটাই প্রস্তাবগুলো নাকচ হয়ে যায়।
এর পর সংসদ সদস্যগণ টেবিল চাপড়িয়ে নির্দিষ্টকরণ বিল-২০১৪ পাসের মাধ্যমে ২০১৪-’১৫ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেন।
গত ৮ জুন থেকে ২৯ জুন পর্যন্ত সংসদ নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধী দলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও অন্যান্য মন্ত্রীসহ সরকারি ও বিরোধী দলের ২৬৫ জন সদস্য ১৬ কার্যদিবসে মোট ৬৩ ঘণ্টা ০৬ মিনিট মূল বাজেট ও সম্পুরক বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
এর মধ্যে ২০১৩-১৪’ অর্থ বছরের সম্পুরক বাজেটের ওপর ২ কার্যদিবসে ১৪ জন সদস্য ৪ ঘন্টা ১১ মিনিট এবং মূল বাজেটের ওপর ১৪ কার্যদিবসে ২৫১ জন সরকার ও বিরোধী দলের সদস্য মোট ৫৮ ঘন্টা ৫৫ মিনিট আলোচনা করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠনের পর এটি প্রথম বাজেট।
বাজেটে বিদেশী অনুদাসহ মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১১ দশমিক ২ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২ দশমিক ১ শতাংশ।
বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার ১৯১ কোটি টাকা এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বরাদ্দসহ ৮৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাজেটে নতুন অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ৩ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে।
বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ। এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা, জিডিপির ১ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা জিডিপির ৩ দশমিক ২ শতাংশ। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩১ হাজার ২২১ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
গতকাল সংসদে অর্থবিল ২০১৪ পাস করা হয়েছে। বিলে আবাসন খাতে অপ্রদর্শিত আয় বিনিয়োগ করার বিধান অব্যাহত রাখা হয়েছে। ব্যক্তিশ্রেণীর করমুক্ত আয় ২ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়। মহিলা ও ৬৫ বছর উর্ধ্ব প্রবীণদের ক্ষেত্রে তা ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং প্রতিবন্ধীদের ক্ষেত্রে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া গেজেটভূক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা করদাতার ক্ষেত্রে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বেশ কিছু কর হ্রাস করা হয় এবং কর অবকাশ বহাল রাখা হয়েছে ।
বাজেটে সামাজিক অবকাঠামো খাতে ২৫.১৬ শতাংশ,এর মধ্যে মানব সম্পদ খাত-শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতে ২১ .৫৮ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খাতে ৩০ দশমিক ১৫, সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪ দশমিক ৬৯, যোগাযোগ খাতে ৯দশমিক ২৪, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ সেবা খাতে ২৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ৩ দশমিক ৪, ঋণ পরিশোধ বাবদ ১২ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ঋণদান ও অন্যান্য খাতে অবশিষ্ট ৫ দশমিক ৩৪ শতাংশ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
বাজেটে ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, মানব সম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।