471
Published on জুন 14, 2014তিনি বলেন, ‘সফরের প্রতিটি পর্যায়ে উষ্ণ অভ্যর্থনা, আন্তরিক আতিথেয়তা এবং গভীর সৌহার্দ্য প্রদর্শন ছিল বাংলাদেশ-চীন বন্ধুত্বের অকুণ্ঠ সমর্থনেরই প্রতিফলন। এত চীনের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ বাংলাদেশকে যে তাদের পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেছেন তারই স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রেও এ সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আজ শনিবার বিকেল তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ সব কথা বলেন। সদ্য সমাপ্ত চীন সফরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতেই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
শেখ হাসিনা চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং এর আমন্ত্রণে গত ৬ থেকে ১১ জুন ছয়দিনের এক সরকারি সফরে ওই দেশ সফর করেন।
সফরকালে দু’ দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আনুষ্ঠানিক আলোচনা ছাড়াও ঢাকা ও বেইজিংয়ের মধ্যে ৭টি দলিল স্বাক্ষরিত হয়। এর মধ্যে দুটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক রয়েছে।
চুক্তিগুলো হচ্ছে - বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতা এবং পটুয়াখালীতে যৌথ উদ্যোগে কয়লাভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা।
সমঝোতা স্মারকগুলো হচ্ছে- চট্টগ্রামে চীনের অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ অঞ্চল প্রতিষ্ঠা, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ এবং মুন্সিগঞ্জ জেলার গজারিয়ায় গার্মেন্টস পল্লী প্রতিষ্ঠা।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর চীন সফর ছাড়াও অন্যান্য বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন । তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশ হিসাবে আমরা সকলের সাথেই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চাই। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তুলতে হলে অর্থনৈতিক উন্নতি দরকার। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যারা সহযোগিতা করবে তাদের সাথেই বাংলাদেশ সর্ম্পক গড়ে তুলবে। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। যারা বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে আমাদের তাতে সাড়া দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলনের শুরুতেই সম্প্রতি তাঁর ছয় দিনের চীন সফরের সময় অর্জিত সাফল্যগুলো লিখিতভাবে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশকে চীন কৌশলগত অংশীদার হিসেবে দেখতে চায়। একই সঙ্গে চীন সরকার বাংলাদেশকে ভূকৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও মনে করে।
তিনি বলেন, সফরকালে চীনের রাষ্ট্রপতি আশা করেন, দুই দেশের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে এবং পর্যায়ক্রমে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছবে। পারস্পরিক বিশ্বাস, সমতা এবং একে অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে অর্থনৈতিক অংশীদার থেকে পর্যায়ক্রমে কৌশলগত অংশীদারে উন্নীতকরণের বিষয়ে চীন সরকারের সঙ্গে তাঁর গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে।
সফরকালে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের সহযোগিতা চুক্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যমআয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্য উন্নত দেশে পরিণত করতে চীনের আরও সমর্থন ও সহযোগিতা চেয়েছি। চীনের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। সফরকালে বাৎসরিক চীনা প্রকল্প অনুদান আরএমবি ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হতে প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন বিশিষ্ট ট্যানেল নির্মাণে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই ট্যানেল নির্মাণ কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে।
সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ নিয়ে অনেক দেশ আমাদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে। যারা আমাদের এটা দ্রুত নির্মাণ করে দিতে পারবে তাদেরই আমরা কার্যাদেশ দেব। তবে বিষয়টি এখনও আমাদের পরীক্ষাধীন রয়েছে। তিনি বলেন, অর্থনৈতিক করিডর সৃষ্টির মাধ্যমে আঞ্চলিক সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপনে বাংলাদেশ ও চীন দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশ এবং মিয়ানমারের সঙ্গে একযোগে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। চীন সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মায়ানমারের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর বাস্তবায়নের জোর প্রচেষ্টা চলছে এবং এর দ্রুত অগ্রগতি ও বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে আমার গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্যমূলক সম্পর্ককে আরও সুসংহত করবে। তিনি বলেন, প্রায় ৫ মাস হলো আমরা টানা দ্বিতীয়বারের মতো সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য আগামী ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। এ লক্ষ্যে আমরা বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্টের ওপর জোর দিয়েছি। ইতোমধ্যে আমরা সফলও হয়েছি।
গত দুই সপ্তাহে জাপান ও চীন সফরের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুটি বন্ধুপ্রতিম দেশই আমাদের অনেকগুলো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এবং এ ব্যাপারে চুক্তি ও এমওইউএস স্বাক্ষরিত হয়েছে। আমরা বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে উন্নত ও শান্তির দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আসুন অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশকে আমরা বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অভিষিক্ত করতে যার যার অবস্থান থেকে একযোগে কাজ করে যাই।
সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মূল মঞ্চে ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব একেএম শামীম চৌধুরী। কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ ছাড়াও সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারাও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।