493
Published on জুন 10, 2014প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ লাভজনক হবে, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং ও সেবা খাতে। তিনি বলেন, কুনমিং থেকে ঢাকায় দুই ঘণ্টার ফ্লাইটে আপনারা বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের যে সম্ভাবনা রয়েছে তা দেখে আসতে পারেন।
আজ বিকেলে প্রেসিডেন্টসিয়াল বেইজিং হোটেলে বাংলাদেশ-চীন অর্থনেতিক ও বাণিজ্যিক সহযোগিতা ফোরামে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। চায়না কাউন্সিল ফর দ্যা প্রমোশন অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড (সিসিপিআইটি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এতে সভাপতিত্ব করেন সিসিপিআইটি’র চেয়ারম্যান জিয়াং জেংউই। চীনের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং কর্পোরেট বডি, ম্যানুফ্যাকচারিং ও বাণিজ্যিক কোম্পানি, বিনিয়োগ গ্র“প, নির্মাণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ও প্রকৌশল কোম্পানিগুলোর প্রধানরা এতে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশের ইআরডি সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন, বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ আজিজুল হক, এফবিসিসিআই সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বিজিএমইএ সভাপতি আতিকুল ইসলাম, চীনের সেনি হেভি ইন্ডাস্ট্রি কোম্পানী লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার চুই ইয়ংগিয়ান এবং নিংবো ফোর সিজন ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার বাও বুইবং বক্তৃতা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া এবং চীনের বাজারগুলোর মধ্যে একটি চমৎকার জায়গা। বাংলাদেশ একটি আঞ্চলিক অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ-চীন-ভারত-মায়ানমার অর্থনৈতিক করিডোরের (বিসিআইএম-ইসি) দ্রুত অগ্রগতির অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ।
বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সরকারের দেয়া সুযোগ-সুবিধার বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগেও অংশ নিতে পারে। তারা ফার্মাসিউটিক্যাল, সিরামিকস, পর্যটন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সড়ক ও রেল যোগাযোগ, পেট্রোক্যামিকেলস এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারেন।
শেখ হাসিনা বলেন, চীনের ব্যাপক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বাংলাদেশ অভিভূত। চীন এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনৈতিক শক্তি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীন বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান উন্নয়ন ও সহযোগিতার অংশীদার।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের প্রতি চীনের সমর্থন ও সহযোগিতা গতি অর্জন করেছে। তিনি আরো বলেন, ২০১৪-১৮ মেয়াদে আমরা বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন খাতে চীনের সহযোগিতা চেয়েছি।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণেও আমরা চীনের কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যুক্ত হয়েছি।
দু’দেশের মধ্যে বিশাল বাণিজ্যিক ভারসাম্যহীনতার উল্লেখ করে চীন আরো বাংলাদেশী পাট ও পাটজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত মৎস্য, সিরামিকস এবং অন্যান্য পণ্য আমদানি করে এই বাণিজ্যিক ব্যবধান কমিয়ে আনবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন।
তিনি বলেন, ২০১৩-’১৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ চীন থেকে প্রায় ৭শ’ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। ফলে চীন আমাদের শীর্ষস্থানীয় দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যিক অংশীদার এবং ২০০৭ সাল থেকে বৃহত্তম আমদানির উৎসে পরিণত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের ৮টি রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে চীনের ৪৯টি কোম্পানি ৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। তিনি বলেন, আরো প্রায় ৩শ’ বিনিয়োগকারী ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, হুয়াউই, সিএমইসি, জেডটিই এর মতো কোম্পানিগুলো বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন, অবকাঠামো নির্মাণ, টেলিযোগাযোগ, সার, বস্ত্র, চামড়া, সিরামিকস, প্যাকেজিং ও এক্সেসোরিজ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনে কতিপয় পণ্যের উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। কারখানায় যেসব পণ্য উৎপাদিত হয় সেগুলো বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যেতে পারে। আমাদের তরুণ ও উদ্যমী শ্রমশক্তি এবং সহনীয় বেতনের ফলে এসব পণ্যের উৎপাদন ব্যয় কম হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ রক্ষা চুক্তি এবং দ্বিপক্ষীয় ট্যাক্স কনভেনশনের আওতায় বাংলাদেশে চীনের বিনিয়োগ পুরোপুরি নিরাপদ। তিনি আরো একটি আকর্ষণীয় সুবিধার কথা উল্লেখ করে বলেন, স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইইউ এবং প্রায় সকল উন্নত দেশে শুল্ক ও কোটা মুক্ত প্রবেশাধিকার ভোগ করে আসছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ১৬ কোটি মানুষের একটি বিশাল বাজার। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ লোকের বয়স ৪০ বছরের নিচে। এই তরুণ জনশক্তি উদ্যমী, মেধাবী এবং চৌকস। তারা সহজেই নতুন বাণিজ্য ও প্রযুক্তি গ্রহণ করতে পারে। সেলুলার টেলিফোন ও আইসিটি প্রযুক্তিসহ তারা একটি গতিশীল শক্তি।
আইটি ও টেলিকম খাতে বাংলাদেশের দ্রুত উন্নতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৪ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার গোটা দেশে আইসিটি সেবা সম্প্রসারিত করেছে। ফলে গ্লোবাল আইসিটি ফ্রিল্যান্সিং ডেসটিনেশনে বাংলাদেশের অবস্থান এখন তৃতীয় স্থানে। ই-সার্ভিস তরুণ প্রজন্মের চাকরি লাভ, আয়বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে সহায়তা করছে।