২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করলেন অর্থমন্ত্রী

1061

Published on জুন 5, 2014
  • Details Image

বাজেটে মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সূত্রে আয় ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা, যা জিডিপি’র ১১ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া, এনবিআর বহির্ভূত সূত্র থেকে কর রাজস্ব ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ০.৪ শতাংশ। কর বহির্ভূত খাত থেকে রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ২.১ শতাংশ, বৈদেশিক অনুদান ৬ হাজর ২০৬ কোটি টাকা।

প্রস্তাবিত বাজেটে অনুন্নয়নসহ অন্যান্য খাতে মোট ১ লাখ ৭০ হাজার ১৯১ কোটি টাকা যা জিডিপির ১২.৭ শতাংশ। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেটে সার্বিক বাজেট ঘাটতি ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা দেখানো হয়েছে, যা জিডিপির ৫ শতাংশ । এ ঘাটতি অর্থায়নে বৈদেশিক সূত্র থেকে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা সংস্থানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ৩১ হাজার ২২১ কোটি এবং সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক বহির্ভূত খাত থেকে ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা সংগ্রহের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭.৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা ২০২১ সালে ১০ শতাংশে উন্নীত হবে বলে অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্টতৃতায় উল্লেখ করেছেন।

এর আগে আজ দুপুরে সংসদ ভবনের মন্ত্রিসভা কক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিপরিষদের সভায় প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করা হয়। এর পরই রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ প্রস্তাবিত বাজেট অনুমোদন করেন।

এছাড়াও অর্থমন্ত্রী আজ ২০১৩-১৪ অর্থবছরের জন্য ২ লাখ ১৬ হাজার ২২২ কোটি টাকার সংশোধিত বাজেট পেশ করেন। চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ছিল ২ লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকা।

অর্থমন্ত্রী বিকেল ৪ টায় বাজেট বক্তৃতার শুরুতে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, অকুতোভয় বীরযোদ্ধা এবং গণতন্ত্র ও মৌলবাদ বিরোধী আন্দোলনে আত্মদানকারী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সাথে সাথে তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে অর্থমন্ত্রী করায় তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সংগে নিয়ে অধিবেশন কক্ষে প্রবেশ করেন।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সংসদে রাষ্ট্রপতির বক্সে বসে বাজেট বক্তৃতা শোনেন। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনসহ বিভিন্ন বিদেশী দূতাবাসের কূটনীতিক, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধি, বিশিষ্ট আমন্ত্রিত ব্যক্তি এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারাও বাজেট বক্তৃতা শোনেন।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় গত ৫ বছরে বিভিন্ন খাতে সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন চিত্র বিস্তারিত ভাবে তুলে ধরেন। বিশেষ করে গত সাড়ে চার বছরে মন্দা মোকাবেলায় সাফল্য, বিদুৎ - জ্বালানি, ডিজিটাল বাংলাদেশ, কৃষি , খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, যোগাযোগ, শিল্প-বানিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, প্রবাসী কল্যাণ, নারী ও শিশু , ভূমি ব্যবস্থাপনা, বিনিয়োগ বৃদ্ধি, আমদানি রপ্তানি, রেমিট্যান্স ও জনশক্তি রপ্তানী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বিনিময় হার, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, স্থানীয় সরকার পুর্নগঠন ও ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণসহ সকল ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্যের বর্ননা করেন।

তিনি বলেন, রূপকল্প ২০২১ কে সামনে রেখে ২০০৯ সালে সরকার যে অভিযাত্রা শুরু করেছিল এ মেয়াদেও তা অব্যাহত থাকবে। সরকারের লক্ষ্য ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত করা। সরকারের প্রতিটি বাজেট সে লক্ষ্য পূরণের হাতিয়ার হিসাবে প্রণীত হয়েছে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার নিরিখে যে বাজেট কাঠামো আগামী অর্থবছরে বাস্তবায়ন করা হবে তা প্রবৃদ্ধি সহায়ক, মূল্য স্ফীতি সংযত রাখা সর্বোপরি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটানো সম্ভব হবে।

প্রস্তাবিত বাজেটে সামাজিক অবকাঠামোগত খাতে ২৫ দশমিক ১৬, যার মধ্যে মানব সম্পদ খাত- শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সংশ্লিষ্ট খাতে মোট বরাদ্দের ২১.৫৮ শতাংশ, ভৌত অবকাঠামো খতে ৩০.১৫- যার মধ্যে রয়েছে সার্বিক কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন খাতে ১৪.৬৯, বৃহত্তর যোগাযোগ খাতে ৯.২৪ শতাংশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে ৪.৬২ শতাংশ। এছাড়া সাধারণ সেবা খাতে ২৩ ৫৮ শতাংশ, সরকারি বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ৩.৪, সুদ পরিশোধ বাবদ ১২.৩৯ শতাংশ, নিট ঋণদান ও অন্যান্য খাতে অবশিষ্ট ৫.৪ শতাংশ বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রস্তাবিত বাজেটে,ভৌত অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিজ্ঞান- প্রযুক্তি ও কৃষি খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। এরপরই বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের অবস্থান।

অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেন, ‘আমি আগেও বলেছি কালো মেঘের আড়ালে সেনালী রেখা দেখতে পাই। বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্ভবনায় এদেশের তরুনদের মতো আমিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

তিনি বলেন, এ অপিরিমেয় সম্ভাবনার স্বার্থে একটি অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র আমরা চাই।’ বাংলাদেশের জনগণও প্রতিটি কঠিন সময়ে এ আদর্শে বিশ্বাস রেকে এগিয়ে গেছে। এবারও তার কোন হেরফের হবে না বলে অর্থমন্ত্রী দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত