659
Published on মে 31, 2014দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমের প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
উপস্থিত সকলকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি।
আমি জাপানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-এর আমন্ত্রণে ২৫-২৮ মে, ২০১৪ চারদিনের সরকারি সফরে ২৫শে মে দুপুরে টোকিও পৌঁছি এবং সফর শেষে ২৯ মে সকালে দেশে ফিরেছি।
৫ জানুয়ারি, ২০১৪ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তৃতীয় বারের মতো সরকার গঠনের পরে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে এটিই আমার প্রথম সরকারি সফর। এর আগে ২০১০ সালে এবং ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে আমি সরকারি আমন্ত্রণে জাপান সফর করি। বিরোধী দলীয় নেত্রী হিসাবে ১৯৯৪ সালে আমি জাপানে শুভেচ্ছা সফর করি।
এবার সরকার গঠনের পর এই সফর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-এর সাথে দ্বিপাক্ষিক শীর্ষ বৈঠক এবং আমাদের আলোচনার প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে জাপানের সর্বাত্মক সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি এই সফরকে সফল করেছে। এই সফর অত্যন্ত সফল বলে আমি মনে করি এবং এর মাধ্যমে আমাদের দু’দেশের মধ্যে সুসম্পর্ক এক নতুন মাত্রায় উন্নীত হবে।
জাপানের সাথে আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানের জনগণ, এমনকি জাপানের শিশুরা তাদের টিফিনের টাকা দিয়ে আমাদের সাহায্য করেছে। আমাদের স্বাধীনতার পর যেসব রাষ্ট্র বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান করে জাপান তার মধ্যে অন্যতম। ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাপান স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং সেদিন থেকে জাপান আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে জাপান অন্যতম বন্ধুরাষ্ট্র।
জাপানের সাথে বাংলাদেশের সুসম্পর্কের ভিত্তি রচিত হয় আমাদের জাতির পিতা, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭৩ সালের অক্টোবর মাসে জাপানে তাঁর সরকারি সফরের মধ্য দিয়ে। তখন থেকেই জাপান আমাদের অবকাঠামো, মানব সম্পদ উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতির পিতার অনুরোধে যমুনা নদীর উপর সেতুর (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু) সম্ভাব্যতা জরিপ জাইকা শুরু করে ১৯৭৩ সালে।
আমি ১৯৯৭ সালে জাপান সফরে যাই। তখন জাপান পদ্মা সেতু এবং খুলনায় রূপসা সেতু নির্মাণের জন্য সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। আমরা রূপসা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করি। পদ্মা সেতু নির্মাণের সমীক্ষা জাপান সরকার করে দেয়। ২০০১ সালের জুলাই মাসে পদ্মা সেতু নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করি। বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতায় আসে ২০০১ সালের অক্টোবর মাসে। ক্ষমতায় এসে তারা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। জাপানকে পুনরায় সমীক্ষা করতে বলে। সেতুর নির্মাণ স্থান পরিবর্তন করে মাওয়ার পরিবর্তে পাটুরিয়াতে নিয়ে যেতে চায়। পুনরায় সমীক্ষা করার পর মতামত পাওয়া যায় যে মাওয়াতেই পদ্মা সেতু নির্মাণের সঠিক স্থান। কাজেই জাপান সবসময় বাংলাদেশের পাশে আছে।
২০০০ সালে জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করেছিলেন। এর ফলে বাংলাদেশ-জাপান বন্ধুত্ব সুদৃঢ় হয়।
এবারও জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আশা করি, তিনি খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ সফরে আসবেন।
আমার এবারের চারদিনের সরকারি সফরে জাপান সরকার আমাকে এবং আমার সফরসঙ্গীদের যে উষ্ণ অভ্যর্থনা ও আতিথেয়তা দিয়েছে তা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রতি জাপানের সম্রাট, প্রধানমন্ত্রী, সরকার ও জনগণের গভীর আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ।
রাজপ্রাসাদে জাপান সম্রাট আকিহিতোর সাথে আমার সাক্ষাৎকালে তিনি বাংলাদেশের সাথে জাপানের দীর্ঘদিনের সুসম্পর্কের কথা বলেন এবং জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্ব অব্যাহত থাকবে বলে আশ্বাস দেন। তিনি বাংলাদেশের দারিদ্র্য বিমোচনে আমাদের সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচীর প্রশংসা করেন। আমি মহামান্য সম্রাটকে বাংলাদেশ সফরের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে-এর সাথে আমার আলোচনা অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে। শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশ-জাপান সুসম্পর্ক আরো গভীর এবং দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করার জন্য আমরা একমত হই।
শীর্ষ বৈঠকে দুই দেশের সরকারের একাধিক মন্ত্রী এবং শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তাগণ অংশ নেন। বৈঠকে বাংলাদেশও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
শীর্ষ বৈঠক শেষে আমরা দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী একটি যৌথ ইশতেহারে স্বাক্ষর করি।
২১-দফা যৌথ ইশতেহারে জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং আমি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে সার্বিক অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্কে (Japan-Bangladesh Comprehensive Partnership) রূপায়ণ করার ঘোষণা দিয়েছি এ অংশীদারিত্বমূলক সম্পর্ক বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় জাপানের অংশগ্রহণকে আরও বেগবান করবে; যার সুফল আমাদের জনগণ দীর্ঘ মেয়াদে ভোগ করবে।
এবারের সফরে সবচেয়ে বড় সফলতা হলো বাংলাদেশকে জাপানের ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা প্রদানের প্রতিশ্রুতি। এই সহায়তা আগামী ৪-৫ বছরে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ করা হবে। এ লক্ষ্যে অতিশীঘ্র একটি জাপানী অর্থনৈতিক সমীক্ষা দল বাংলাদেশ সফর করবেন এবং আমাদের অগ্রাধিকার প্রকল্পসমূহ নির্ধারণ ও প্রণয়নে সমীক্ষা চালাবেন। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো হচ্ছে গঙ্গা ব্যারেজ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে অপর একটি রেল সেতু নির্মাণ, যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল, ঢাকা ইস্টার্ন বাইপাস নির্মাণ এবং ঢাকার চারপাশের চারটি নদী দূষণ মুক্তকরণ।
বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময় থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ৪২ বছরে জাপান সরকার বাংলাদেশকে ১১ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই অনুদান ও ঋণের সিংহভাগই এসেছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে।
আনুষ্ঠানিক আলোচনা শেষে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রী 35th ODA Loan Package এর Exchange of Notes স্বাক্ষর করেন। এ Loan Package এর আওতায় জাপান সরকার বাংলাদেশকে সহজ শর্তে ১২০ বিলিয়ন জাপানী ইয়েন (প্রায় ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) ঋণ প্রদান করবে। এ প্যাকেজের আওতায় ১২০০ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র Matarbari Ultra Super Critical Coal Fired Power Plant স্থাপিত হবে। এছাড়া অন্য যে প্রকল্পগুলোতে ঋণ সহায়তা প্রদান করবে সেগুলো হচ্ছে- Inclusive City Governance Project, Haor Flood Management and Livelihood Improvement Project, Natural Gas Efficiency project, Small and Marginal Sized Farmers Agricultural Productivity Improvement and Diversification Financing Projects.
আমার সরকারের গত মেয়াদে জাপান বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা দেয় এবং এর ফলে আমাদের রপ্তানি গত ৫ বছরে ২০০ মিলিয়ন ডলার থেকে ১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়।
বাংলাদশেরে রপ্তানী বৃদ্ধির ক্ষেত্রে নীট পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে Rules of Origin আরো শিথিল করার বিষয়টি জাপান সরকার গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছে এছাড়া দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে দু’দেশের পক্ষে সম্ভাব্য করণীয় পদক্ষেপসমূহ বিবেচনার জন্য আশ্বাস দেন এবং জাপানী প্রধানমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট র্কতৃপক্ষকে এ বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে নির্দেশ দেন।
বাংলাদেশে একটি Peace building Center স্থাপনের ক্ষেত্রে জাপান কারিগরি সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছে ।
দু’দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পকসহ অন্যান্য বিষয়ে নিয়মিত বার্ষিক আলোচনার জন্য Foreign Office Consultations এর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
এছাড়া দু’দেশের কূটনৈতিক ও অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদরে জন্য পারস্পরিক ভিসা অব্যাহতি প্রদানের ক্ষেত্রে র্শীষ বৈঠকে ঐক্যমতে পৌছান।
বাংলাদেশের সরকারী কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের জন্য জাপান সরকারের বৃত্তির সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ইতিবাচকভাবে বিবেচনার আশ্বাস দেন।
বাংলাদেশের পাঁচটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে জাপানী ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের জন্য ৪০টি প্লট এবং ২ টি শিল্প ইমারত সংরক্ষিত রাখার বিষয়ে সমঝোতা হয়। এ বিষয়ে জাপানের জেট্রো এবং বাংলাদেশের বেপজা’র মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক ২৭ মে স্বাক্ষরিত হয়। এছাড়া, জাপানী বিনিয়োগকারীদের জন্য চট্টগ্রামে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকা স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে।
আমি সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ ও সুষ্ঠ ব্যবহার, সমুদ্র গবেষণা, নৌ পরিবহন এবং পর্যটনের উপর গুরুত্ব আরোপ করে আগামী সেপ্টেম্বরে ঢাকায় Expert Group Meeting on Blue Economy জাপানের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানাই।
আমি বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবে জাপানে এক জোড়া রয়েল বেঙ্গল টাইগার পাঠানোর প্রতশ্রিুতি দিয়েছি যাতে জাপানের জনগণ বিশেষ করে শিশুরা বাংলাদেশের প্রকৃতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে পারে।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী অবকাঠামো উন্নয়ন, স্থিতিশীল জ্বালানি সরবরাহ, শিল্প পার্ক স্থাপন এবং পারমিটস, লাইসেন্স ইত্যাদি ত্বরান্বিত করাসহ বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নয়নের ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। আমরা ফুকোশিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের র্দুঘটনার অভিজ্ঞতা ও এক্ষেত্রে লব্ধ জ্ঞানের বিনিময়ের বিষয়ে একমত হই। আমি বাংলাদেশে আরকেটি পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে জাপানী সরকাররে সহযোগিতা কামনা করি।
আগামী ২০২০ সালে টোকিওতে অলিম্পিক ও প্যারা-অলিম্পিক অনুষ্ঠিত হবে। এ অলিম্পিক অনুষ্ঠান সংক্রান্ত নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার জন্য বহু সংখ্যক বিদেশী দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হবে। এছাড়া, জাপানের সুনামী বিধ্বস্ত এলাকায় চলমান পুনঃনর্মিাণ ও পুনর্বাসন কার্যক্রমেও বিদেশী শ্রমিক নিয়োগের প্রয়োজন আছে। এ সকল উল্লেখ করে আমি জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে এই নির্মাণ কার্যক্রমে বাংলাদেশের শ্রমিক নিয়োগের আহবান জানাই। প্রত্যুত্তরে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনার আশ্বাস দেন।
আমি জাপান শিল্প ও বণিক সমিতির সদস্যদের উদ্দেশে ভাষণে জাপানী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশের সাথে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করার জন্য আহ্বান জানাই। আমাদের সরকারের অনুসৃত নীতির ফলে বাংলাদেশ আজ অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি দেশ। এ বিষয়টি আমি তাঁদের অবহিত করি। জেট্রো-এর সদর দপ্তরে বিজনেস সেমিনারে আমি বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগের সম্ভাবনার কথা বলি। আমার সাথে সফরসঙ্গী হিসাবে আমাদের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সদস্যবৃন্দ বিজনেস সেমিনারে জাপানী ব্যবসায়ীদের সাথে বাণিজ্য-বিনিয়োগ বিষয়ে আলোচনা করেন।
আমার সফরের একটি আনন্দময় সময় আমি কাটিয়েছি ২৭ মে ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করে। সেখানে আমি আমার ভাষণে যুদ্ধ নয়, শান্তি; ধ্বংস নয়, উন্নয়ন; এই লক্ষ্য নিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্মকে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ উপহার দেয়ার প্রত্যয় ঘোষণা করি। ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৯৭ সালে আমাকে সম্মানসূচক ডক্টরেট অব ল ডিগ্রী প্রদান করেছিল।
২৮ মে জাপান ন্যাশনাল প্রেস ক্লাবে আমার মিট দি প্রেস অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত প্রাণবন্ত ছিল। ১৯৭৩ সালের ২৯ অক্টোবর আমাদের জাতির পিতা জাপান প্রেস ক্লাব সফর করেন এবং সেখানে ভিজিটারস বইতে স্বাক্ষর করেন। ৪১ বছর পরেও আমাদের জাতির পিতার সেই স্বাক্ষরটি আজো অত্যন্ত যত্ন ও সম্মানের সাথে প্রেস ক্লাব কর্তৃপক্ষ সংরক্ষণ করছে। আমি অভিভূত ও আবেগাপ্লুত হয়েছি। আমি জাপান প্রেস ক্লাবকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের বইতে আমার স্বাক্ষর রেখেছি।
২৮ মে সন্ধ্যায় জাপানে প্রবাসী বাঙালি সম্প্রদায় আমার ও আমার সফরসঙ্গীদের জন্য এক নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে। আমি তাঁদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জাপানে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধির জন্য আহ্বান জানাই।
আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমাদের সরকারের গত পাঁচ বছর ছিল মাইলফলক। আমরা এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে চলেছি। জাপান সফরের সাফল্য এরই প্রমাণ। শুধু জাপানই নয় চীন, ভারতসহ প্রতিবেশী সকল দেশের সাথেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নে আমার সরকার যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি সচেষ্ট।
আমি চীন সফরে যাচ্ছি। আশা করি, এ সফরেও আমাদের কাঙ্ক্ষিত সফলতা থাকবে। এশিয়াসহ বিশ্বের অর্থনৈতিক জায়ান্টদের সাথে আমাদের সুসম্পর্ক আরো দৃঢ় ও স্থায়ী করাই আমার সরকারের লক্ষ্য। আমরা বাংলাদেশকে দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছি। জাতিসংঘসহ বিশ্বের অনেক দেশ আমাদের উন্নয়নকে এখন মডেল হিসেবে দেখছে। আমরা গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি বলেই বাংলাদেশ আজ নিরবচ্ছিন্নভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতি দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সামষ্টিক অর্থনীতির প্রতিটি সূচকেই অত্যন্ত ইতিবাচক ধারা আজ অব্যাহত।
বিগত পাঁচ বছরে গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন আমাদের অর্থনৈতিক নীতির সাফল্যের স্বাক্ষর। ২০২১ সালের মধ্যে প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি। মাথাপিছু আয় আজ ১ হাজার ১৮০ ডলারে উন্নীত হয়েছে যা ২০০৮ সালে ছিল মাত্র ৬৩০ ডলার। রপ্তানি আয় আজ ৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০০৮ সালে ছিল ১৪ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে। যা ২০০৮ সালে ছিল প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার। গত ৫ বছরে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ হয়েছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহের (এমডিজি) ১ থেকে ৬ পর্যন্ত আমরা অর্জন করেছি। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে।
দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ১১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি যার সুফল দেশের জনগণ আজ ভোগ করছে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ জাতীয় পতাকা প্রদর্শন এবং বিশ্বে সর্বাধিক মানুষ একসাথে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে আমরা ইতিহাস সৃষ্টি করেছি। গিনেস বুক অব রেকর্ডে স্থান করে নিয়েছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। গ্রামের মানুষও ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা পাচ্ছে। মোবাইল ফোনে থ্রি-জি প্রযুক্তি চালু করেছি এবং ফোর-জি চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধীদের বিচার চলছে এবং রায় বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে।
আমি আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করতে চাই আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সকলকে সাথে নিয়ে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবো। জাতির পিতার সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন পূরণ করবো। নিশ্চয়ই আল্লাহ আমাদের সহায় হবেন।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু
বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।