539
Published on মে 29, 2014আজ সকালে জাপানের জাতীয় প্রেসক্লাবে দেশটির স্থানীয় মিডিয়ার সঙ্গে আলোচনাকালে তিনি বলেন, নীতিগত ভিন্নতা থাকা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু কোন সমস্যা তৈরি হলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে তার সমাধান করা যেতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ভারতের সাথে আমরা সুসম্পর্ক বজায় রাখতে পারবো। মোদির নিজস্ব ধ্যানধারণা রয়েছে। এখন তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনিও প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়ে নিজস্ব ভুমিকা পালন করবেন।
নরেন্দ্র মোদী ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কে কোন বাধা তৈরি হবে কিনা- জাপানের এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাঁর প্রথম মেয়াদকালে ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তির কথা উল্লেখ করেন। গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তির কারণে এ নিয়ে দুদেশের দীর্ঘদিনের বিরোধের অবসান হয়।
তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির কথাও উল্লেখ করেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ায় দুদশকের জঙ্গিবাদের অবসান ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের পররাষ্ট্রনীতি খুবই স্পষ্ট- সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গেই বৈরিতা নয়। আমরা যখন থেকে সরকার গঠন করেছি, প্রতিবেশির সঙ্গে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখতে পেরেছি’।
ভারতেরও একটি পররাষ্ট্রনীতি আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করব তারা সে নীতি অনুসরণ করবে।
শেখ হাসিনা তাঁর তিন ধাপে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকালীন ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভারতে ক্ষমতাসীন চারটি পৃথক রাজনৈতিক দলের সরকারের সঙ্গে তিনি কাজ করেছেন এবং সর্বশেষ মোদী সরকার হচ্ছে তাঁর মেয়াদে পঞ্চম।
তিনি বলেন, ‘জনগণকে কিভাবে রক্ষা করতে, নিরাপত্তা দিতে ও ভাল রাখতে হয় তা আমি জানি। ভৌগলিক কারণে বাংলাদেশ ছোট ও ভারত একটি বড় দেশ হতে পারে, কিন্তু জনসংখ্যার বিবেচনায় আমরাও একটি বড় দেশ। বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র এবং আমরা আমাদের জনগণের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি’।
প্রতিবেশি দেশগুলোর প্রতি সব সময় বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সব সময় বলে আসছি যে আমাদের অভিন্ন শত্রু দারিদ্র এবং এর বিরুদ্ধে আমরা একত্রে লড়াই করছি।
তিনি বলেন, ‘আমি সব সময়ই প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলোকে গুরুত্ব দিয়েছি, যেন আমরা একে অপরকে সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পারি’।
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলের অস্থায়ী আসনে বাংলাদেশ জাপানকে সমর্থন করবে কিনা, এমন এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ ও জাপান বন্ধুত্বপূর্ণ দুটি রাষ্ট্র এবং ঢাকা টোকিওর এ বন্ধুত্বের গুরুত্ব দেয়।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপানের সর্বাত্মক সহায়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কেবল জাপানের সাধারণ জনগণই নয়, জাপানি স্কুলশিশুরাও তাদের টিফিনের অর্থ বাংলাদেশের শরনার্থী ও তাদের শিশুদের জন্য প্রদান করে অবদান রেখেছে’।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ইতোমধ্যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবেকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেন এ বছরের আগস্টের শেষ নাগাদ তিনি ঢাকা সফর করবেন।
তিনি বলেন, সফরকালে জাপানের জনগণ নিশ্চয় একটি ভাল খবর পাবেন। যদিও এ মুহূর্তে তিনি ওই বিষয়টি নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চান না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি ফিরে গিয়ে বিষয়টি নিয়ে আমার মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে অলোচনা করব। তবে
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অক্ষুন্ন রাখার লক্ষে একাধিক বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্যও তিনি অ্যাবেকে অনুরোধ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে আশ্বস্ত হওয়ায় বাংলাদেশের জনগণ চলতি বছরের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে তাঁর সরকারকে টানা দ্বিতীয়বারের মত দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার সমৃদ্ধির ধারাবাহিকতা অক্ষুন্ন এবং জনগণের কাঙ্খিত শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়তে ‘বাংলাদেশ এগিয়ে চলো’ সনদ ঘোষণা করেছে।
জাপানকে বাংলাদেশের উন্নয়নের একনিষ্ঠ ও বৃহত্তম অংশিদার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, দু’দেশের এ বন্ধুত্ব পারস্পরিক আস্থা, শ্রদ্ধা ও সহযোগিতার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, দু’ দেশ ও এর জনগণের শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে এ অংশিদারিত্বের বন্ধুত্ব অটুট থাকবে।
তিনি জাপান প্রেসক্লাবকে বাংলাদেশের একটি চিত্রকর্ম উপহার দেন এবং প্রেসক্লাব কর্তৃপক্ষও প্রধানমন্ত্রীকে কিছু উপহার সামগ্রী প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এ্যাম্বাসেডর-এট-লার্জ এম জিয়াউদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, ইআরডি সচিব মো: মেজবাহউদ্দিন, পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল উপস্থিত ছিলেন।
-বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)