542
Published on মে 28, 2014এ ব্যাপারে তিনি নতুন প্রজন্মকে একই পরিবারের সদস্য হিসেবে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেদিন বেশি দূরে নয় যখন তারা জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে সৃষ্ট সকল চ্যালেঞ্জ ও বাধা দ্রুত দূর করবে।
প্রধানমন্ত্রী জাপানের বিশিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত ‘শিক্ষা ও যুবসমাজের ক্ষমতায়ন’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেখানে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একটি পারস্পরিক মতবিনিময় অনুষ্ঠানেও যোগ দেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট উচিদা কাতসুইচিও বক্তব্য রাখেন।
শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের ক্ষমতায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, তরুণ শিক্ষার্থীদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করা আমাদের প্রজন্মের দায়িত্ব ও কর্তব্য। যাতে তারা বিভিন্ন চ্যলেঞ্জ মোকাবিলা ও কাটিয়ে উঠতে পারে।
তিনি বলেন, ‘তাঁর সরকার শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম গড়তে শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছে। কেননা শিক্ষিত তরুণ প্রজন্ম তাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় খুবই পারদর্শী হয়ে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কারণেই ‘সবার জন্য শিক্ষা’ নিশ্চিত ও সহস্রাব্দের লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে সরকার দেশের বার্ষিক বাজেটে সর্বোচ্চ বরাদ্দ শিক্ষা খাতে দিচ্ছে। যা জিডিপির ২.৩ শতাংশ ও সরকারি ব্যয়ের ১৪ শতাংশ।
জাপানকে বাংলাদেশের বিশ্বস্ত ও বৃহত্তম উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, দারিদ্রতা হ্রাস ও এমডিজি’র বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাপানের অর্থনৈতিক সহায়তা আমাদের সাহায্য করেছে।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা গত ৫ বছরে তাঁর সরকারের কয়েকটি সাফল্যের কথা তুলে ধরেন। এগুলার মধ্যে রয়েছে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৭৫ লাখে উন্নীত, ৩ জি প্রযুক্তি চালু করা হয়েছে এবং শিগগিরই ৪ জি প্রযুক্তি যুক্ত হবে, মোবাইল সিম ব্যবহাকারী ১১ কোটিতে উন্নীত এবং দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য ১৩ হাজার ৫’শ কমিউনিটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা।
তাঁর সরকার মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধিসহ শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন মানুষের গড় আয়ু ৬৯ বছর, যা ২০০৫ সালে ছিল ৬৫। বর্তমানে শিশু মৃত্যহার ৩৩, কিন্তু ২০০৫ সালে তা ছিল ৬৫। ২০০১ সালে যেখানে মাতৃমৃত্যু হার ছিল ৩২২, বর্তমানে তা ১৮২। এছাড়া নিম্ন আয় ও দরিদ্র মানুষদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
প্রতিবন্ধি ও এ জাতীয় শিশুদের উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিবন্ধী শিশুদের উন্নয়নে বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় এখন মডেল হিসেবে চিহ্নিত। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রযুক্তিগত ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার মাধ্যমে তরুণ ও অবহেলিতদের আধুনিক জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তুলছে।
১৬ কোটি মানুষের দেশের উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও ছাত্র উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এর মধ্যে তাদের একটি বড় অংশ প্রতিবছর উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণার জন্য বিদেশে যাচ্ছে।
তিনি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, এসব ছাত্র তাদের শিক্ষা ও গবেষণা শেষ করে দেশে ফিরে বাংলাদেশের উন্নয়নে বিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রসহ প্রযুক্তি, চিকিৎসা ও আইসিটি ক্ষেত্রে অবদান রাখছে।
গত ৪০ বছরে ‘জাপান ওভারসিস কো-অপারেটিভ এসোসিয়েশন’-এর বাংলাদেশে তরুণ স্বেচ্ছাসেবকদের পাঠানোর কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতি, শিক্ষা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে অবদান রাখছে।
তিনি ১৯৯৭ সালে ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয় সফরের কথা উল্লেখ করে বলেন, এখানে ভর্তি হওয়া ও শিক্ষালাভ করা মর্যাদার বিষয়। এখানকার শিক্ষার্থীদের শান্ত ও প্রাণবন্ত মুখ আমার বিগত সফরের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়। তাঁকে ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেয়া ‘অনারারী ডক্টর অব ল’ ডিগ্রী প্রদানের কথাও তিনি স্মরণ করেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ ও জাপানের চমৎকার বন্ধুত্বের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাপানি জনগণের সমর্থনের মধ্য দিয়ে এ বন্ধুত্বের শুরু। সে সময় বাংলাদেশের দুর্দশাগ্রস্তদের জন্য জাপানি স্কুল শিশুদের টিফিনের জমাকৃত অর্থ সাহায্যের কথাও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আমাদের দু’ দেশের ধ্বংস ও উন্নয়নের ইতিহাসও অভিন্ন ।
শেখ হাসিনা বলেন, জাপান যেমন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞের পর উন্নতির শিখরে পৌঁচেছে, বাংলাদেশও তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধে একই ধরণের ধ্বংসযজ্ঞের শিকার হওয়ার পর আজকের অবস্থানে এসেছে।