461
Published on মে 18, 2014প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রলাণয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণকালে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেক দেশেই সম্প্রচার নীতিমালা আছে। সমাজের জন্য ক্ষতিকারক ও নোংরা কিছু প্রচার রোধে আমাদেরও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম, টেলিভিশন ও বেতারের জন্য নীতিমালা প্রয়োজন’।
সংবাদপত্রের নীতিমালা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাই না। তবে আশা করবো সমাজ, পরিবার ও দেশের জন্য সহায়ক শক্তি হিসেবে গণমাধ্যম কাজ করে যাবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা থাকতে হবে, কিন্তু খবর ও মতামতে সব সময়ই বিবেকবুদ্ধি এবং সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে।
তিনি বলেন, অনলাইন মিডিয়া সৃষ্টি হয়েছে এবং দ্রুত এর বিস্তার লাভ করছে। সামাজিক ওয়েবসাইটগুলোর ব্যবহারও দিন দিন বাড়ছে। তবে প্রকৃত সামাজিক সুবিধা গ্রহণে এসব ব্যবহারে আরো সচেতন হতে হবে। এর অপব্যবহার থেকে সমাজ, শিশু ও তরুণদের রক্ষা করতে হবে। এ জন্য সামাজিক সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়ে তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়কে আরো তৎপর হওয়ার নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু শুভেচ্ছা বক্তৃতা করেন। তথ্য সচিব মর্তুজা আহমদ, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং অন্যান্য অধিদপ্তর ও সংস্থার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
জাতির পিতার যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে ইতিহাসের জঘন্যতম ও মর্মান্তিক ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে জাতির পিতার গৃহীত সেই কর্মকান্ড বন্ধ হয়ে যায়। বিঘিœত হয় স্বাধীন দেশের স্বাধীন গণমাধ্যমের পথচলা। আসে সেন্সরশীপ। যা অসাংবিধানিক ও অবৈধ সরকারের মেয়াদকে দীর্ঘায়িত করতে সাহায্য করে।
তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা থাকা আবশ্যক। তাহলেই তাঁর সরকারের ঘোষিত সময়ের মধ্যেই ক্ষুধা ও দারিদ্র মুক্ত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ উপহার দিতে পারবে।
শেখ হাসিনা বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, মনের মাধুরী মিশিয়ে অনেকে সংবাদ লিখেই যাচ্ছেন। তাতে বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক কোন তথ্য নেই। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অর্থ শুধু মনের মাধুরী মিশিয়ে লিখে যাওয়া নয়, বস্তুনিষ্ঠ, গঠনমূলক ও মননশীল চর্চার মাধ্যমে মিডিয়াকে এই স্বাধীনতা ভোগ করতে হবে। এটি পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্ব তথ্য মন্ত্রণালয়ের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা থাকা ভাল, তবে সেই সঙ্গে বোধটাও থাকতে হবে। যেন ওই সংবাদের প্রতিক্রিয়া বৃদ্ধ ও শিশুদের উপরে গিয়ে না পড়ে।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, বিদেশে যখন বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস পড়ানো হতো, তখন এই বাংলাদেশে একটি গোষ্ঠী মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও আমাদের আত্মত্যাগের ইতিহাস বিকৃত করে শিশুদের সামনে তুলে ধরেছে।
শিশুদের সঠিক ইতিহাস জানানোর তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, শিশুদের মিথ্যা ও বিকৃত ইতিহাস পড়ানো হলে, তাদের চরিত্রও বিকৃত হবে।
প্রধানমন্ত্রী তথ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে। তাই সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নানা অনুষ্ঠান তৈরি ও প্রচার করতে হবে। যেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারে।
আর্কাইভ থেকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তথ্য সরিয়ে ফেলার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আধুনিক আর্কাইভ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। শত বছর পরেও যেন তা ব্যবহার করা যায়, সেভাবেই এ আর্কাইভকে গড়ে তুলতে হবে।
চলচ্চিত্রকে শিল্প ঘোষণা করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সুস্থ চলচ্চিত্র নির্মাণে তাঁর সরকার অনুদানসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, চলচ্চিত্রেও ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন একটি বাস্তবতা। এর ফলে তথ্য প্রবাহ অনেক সহজ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের বিনোদনের সুযোগ বাড়াতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরের সিনেমা হলগুলোকে ডিজিটালাইজড করার এবং বন্ধ হলগুলো চালু করার উদ্যোগ গ্রহণের ওপর জোর দেন।
সিনেমা হলের চাহিদা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মালিকদের সঙ্গে এক সময় আমার কথা হয়েছিল, তাদের একটু সুযোগ দিলে তারা হলগুলো ডিজিটালাইজড করতে আগ্রহী।’ এ বিষয়ে তিনি মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সাংবাদিক সহায়তা ভাতা চালু করা হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এজন্য একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
সরকারের গৃহীত নীতি ও উন্নয়ন কর্মকান্ড সঠিকভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরার গুরুদায়িত্ব তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওপর ন্যস্ত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তথ্য মন্ত্রণালয়কে গতানুগতিক ধারায় এগুলে চলবে না। এখানে তৎক্ষণাৎ ও সৃষ্টিশীলতাকে প্রাধান্য দিতে হবে। এর সঙ্গে ডিজিটাল প্রযুক্তির সমন্বয় করতে হবে।
তিনি বলেন, যেন সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে এগিয়ে যাওয়া যায়। যাতে দেশ-বিদেশের জনগণ দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সঠিক ও সর্বশেষ তথ্য সময়মতো জানতে পারে।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার দেশকে প্রযুক্তিতে এগিয়ে নিয়ে গেছে। এখন উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে হবে। আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। বিশ্বে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত হবে।
সুত্রঃ বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস)