1148
Published on মে 14, 2014তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনক যে, অতীতে ডিজিএফআই’কে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আমরা একে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চাই না। বরং এর সুনাম অক্ষন্ন রেখে একে একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অটুট রাখতে ডিজিএফআই’এর অগ্রগতি অব্যাহত রেখেছে।
তিনি আজ ঢাকা সেনানিবাসে ডিজিএফআই’র সদর দফতরে ডিজিএফআই’র কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের দরবারে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও ডিজিএফআই’য়ের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আকবর হোসেন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ডিজিএফআই গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা সমুন্নোত এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার মধ্য দিয়ে তার পুরুদ্ধার হওয়া গৌরব ক্রমশঃ আরো বাড়িয়ে তুলতে পারবে।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর সংবিধান লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের সংস্কৃতি শুরু হয়। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল ও কুক্ষিগত করতে ডিজিএফআই’কে ব্যবহার করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা আকড়ে রাখার জন্য এ বাহিনীকে ব্যবহার করে এর ভাবমূর্তি ও মর্যাদাকে ভুলন্ঠিত করা হয়েছিল। তিনি বলেন, এ বাহিনীর ওপর জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট করে দেয়া হয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে ডিজিএফআই’কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার বন্ধ করে এবং এর হারানো গৌরব পূনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেয়।
তিনি বলেন, কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এ বাহিনীকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে তাঁর সরকার আবার ক্ষমতায় এসে ডিজিএফআই’কে দায়িত্বশীল জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে আন্তরিক উদ্যোগ গ্রহণ করে।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা অব্যাহত না থাকলে, দেশ তার কাঙ্খিত আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অর্জন করতে পারে না। তিনি বলেন, ১৯৭৫ এর পর সশস্ত্র বাহিনীতে ১৮টি অভ্যূত্থান ঘটে এবং এ জন্য এ বাহিনীকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, এসব অভ্যূত্থানে অনেক অফিসার ও জওয়ান নিহত হয়েছে। এতে অনেক বাবা-মা তাদের সন্তান এবং বোন তাদের ভাই হারিয়েছে।
তিনি বলেন, তাঁর দল সব সময়ই অভ্যূত্থান, পাল্টা অভ্যূত্থান ও হত্যাকান্ডের বিরোধী এবং দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অক্ষুন্ন রাখতে চায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অতীতের স্বৈরাচারী শাসকরা ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। কিন্তু আমরা কাউকে মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেব না।’
শেখ হাসিনা ডিজিএফআইয়ের সদস্যদের প্রতি পবিত্র সংবিধান সমুন্নত এবং গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সব ধরণের হুমকির মোকাবেলায় প্রস্তুত থাকার আহবান জানান।
তিনি বলেন, ‘দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা ঐক্যবদ্ধভাবে নিজেদের প্রস্তুত রাখতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ডিজিএফআই’র সদস্যরা পারস্পরিক আস্থা, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব, দায়িত্বশীলতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করবে ।
প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, তবে কোন দেশ আক্রমণ করলে প্রতি আক্রমণের জন্য ডিজিএফআই’কেও প্রস্তুত থাকতে হবে।
দেশের আইন-শৃংখলা পরিস্থিতি নিযন্ত্রণে রাখতে ডিজিএফআই’র সদস্যদের ভূয়সী প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনে আগাম গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে বিশেষ সহায়তা প্রদান করেছে।
তিনি বলেন, অন্যান্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তথ্যগত সহায়তা দিয়ে জঙ্গীবাদে দমনে তারা সাহসী ভূমিকা পালন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, প্রতিষ্ঠান, শিল্প এলাকা ও বিমানবন্দরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগাম গোপন তথ্য সরবরাহ ছাড়াও গোয়েন্দা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে বিভিন্ন জঙ্গী বাহিনীর নাশকতা রোধে ডিজিএফআই কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে।
ডিজিএফআই’র বেসামরিক ও সামরিক সদস্যদের কল্যাণে তাঁর সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরে ১৫৮ জন বেসামরিক কর্মকর্তা ও কর্মচারী পদোন্নতি পেয়েছে এবং সাংগঠনিক কাঠামোতে বিভিন্ন শ্রেণীর ৬৩৪টি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
মুহুর্মুহু করতালির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ডিজিএফআই’র সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ বিশেষ ভাতা ঘোষণা করেন। বর্তমান মাস থেকে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৩ সালে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই)’র সাংগঠনিক কাঠামোতে ১৭টি পদ সৃজন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ২ জন ব্রিগেডিয়ার, ৭ জন কর্নেল, ৩ জন লে. কর্নেল এবং ৫ জন মেজর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের সদস্যদের উন্নত প্রশিক্ষণ এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশে প্রশিক্ষণের সুযোগ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দল সরকার গঠন করার পর প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের সদর দপ্তরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত বিভিন্ন শাখার ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা সদর দপ্তর এবং ঢাকা, ঘাটাইল, বরিশাল, কক্সবাজার, বান্দরবান, বগুড়া ও খুলনা উল্লেখযোগ্য। এ সকল স্থানে অফিস এবং বাসস্থানের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সারাদেশে নিরাপত্তা কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য ডিজিএফআই সদর দপ্তরে অত্যাধুনিক ডিজিটাল কমান্ড সেন্টার (ডিসিসি) স্থাপন করা হয়েছে। ডিজিএফআই সদর দপ্তর-এর কর্মকাণ্ড আরো গতিশীল এবং আধুনিকায়নের জন্য ডাটা সংরক্ষণে সফটওয়্যার তৈরি করা হয়েছে। যা সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ারই সম্পূরক প্রচেষ্টা।
তিনি বলেন, ২০০৯-২০১৪ পর্যন্ত এ সংস্থার প্রশাসনিক এবং আভিযানিক কার্যক্রমকে বেগবান করার লক্ষ্যে সদর দপ্তরসহ শাখাগুলোর জন্য ৩৮৫টি নতুন যানবাহন ক্রয় করা হয়েছে। এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করে বর্তমান অর্থবছরেও আরও কিছু নতুন যানবাহন ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখা যায় তাহলে বাংলাদেশ অবশ্যই সমৃদ্ধ ও উন্নত দেশ হবে।’
পরে শেখ হাসিনা ডিজিএফআই’র নতুন লোগো উন্মোচন করেন।