দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে প্রতিটি উপজেলায় কারিগরী স্কুল স্থাপন করা হবেঃ প্রধানমন্ত্রী

514

Published on এপ্রিল 23, 2014
  • Details Image

আজ ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স, বাংলাদেশ (আইডিইবি)’র ২০তম জাতীয় সম্মেলন ও ৩৮তম কাউন্সিল অধিবেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইডিইবি’র সভাপতি একেএমএ হামিদ। আইডিইবি’র সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম ‘আমাদের কথা’ শিরোনামে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের দ্রুত উন্নয়নের জন্য তাঁর সরকার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। একটি সরকার সঠিক পরিকল্পনার সঙ্গে আন্তরিকভাবে কাজ করলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আইডিইবি’র সদস্য পদ প্রদান করা হয়। তাঁর হাতে সদস্য পদের সনদপত্র তুলে দেন আইডিইবি’র সভাপতি একেএমএ হামিদ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইডিইবি’র সদস্যপদ গ্রহণ করে সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আজ আমাকে আপনাদের প্রতিষ্ঠানের সম্মানি সদস্যপদ প্রদান করে কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন। ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার মূলত যারা দেশের সকল উন্নয়ন কমর্কান্ডের মূল চালিকা শক্তি তাদের পরিবারের একজন গর্বিত সদস্য হতে পেরে আমি আনন্দিত। এ সম্মানের জন্য আপনাদের জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ।

তিনি বলেল, আপনাদের এবারের সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘জীবন-জীবিকা সমৃদ্ধির জন্য দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা’। আমি মনে করি এই প্রতিপাদ্যটি যথার্থ এবং সময়োপযোগী হয়েছে। শুধুমাত্র শিক্ষার জন্য শিক্ষা নয়, বরং দক্ষতাভিত্তিক সুশিক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার উদ্ধৃতি ‘সোনার বাংলা গড়ার জন্য সোনার মানুষ চাই’ বাক্যটি উল্লেখ করে বলেন, ‘সোনার মানুষ গড়তে হলে আমাদের নৈতিক মূল্যবোধ সম্পন্ন দক্ষ মানুষ গড়ে তুলতে হবে। এ কাজটি শুধুমাত্র সরকারি উদ্যোগে সম্ভব নয়।

তিনি বলেন, বর্তমান বিশ্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দক্ষতার কোন বিকল্প নেই। জনসংখ্যাকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে পারলে তারাই হতে পারে আমাদের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এ লক্ষ্যে সরকার নানামুখী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে চলেছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আইডিইবি’র স্টাডি ও রিসার্চ সেলের মাধ্যমে আপনারা দেশের জনগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে স্টাডি করে সরকারের নিকট বেশ কিছু সুপারিশ পেশ করেছেন। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে, রেল ব্যবস্থার উন্নয়নে, নদী খনন ও নদী পথের গুরুত্ব, আবাসন সমস্যার সমাধানে, দুর্নীতি রোধে, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে সুপারিশসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আপনারা বেশ কয়েকটি সুপারিশ সরকারের নিকট পেশ করেছেন। আমরা এই প্রস্তাবগুলো গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবো।

তিনি বলেন, শিক্ষার ব্যাপারে আমাদের সরকারই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। কারণ শিক্ষাই জাতি ও দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে। আমরা সেদিকে লক্ষ্য রেখে জনশক্তিকে সুদক্ষভাবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারই সর্বপ্রথম সারাদেশে প্রায় ১৮০০টি বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি (ভোকেশনাল) কোর্স প্রবর্তন করেছে। আমরা সরকারি উদ্যোগে ৩টি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ ৫১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট এবং বেসরকারি পর্যায়ে ৪ শতাধিক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট’র মাধ্যমে ৪ বছর মেয়াদি ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পরিচালনা করে মধ্যম স্তরের দক্ষ প্রকৌশলী তৈরি করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, সরকারি ৫১টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে দ্বিতীয় শিফ্ট চালু করা হয়েছে। এছাড়া মেয়েদের জন্য আরো ৩টি সহ মোট ২৫টি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার প্রতি উপজেলায় ১টি করে টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনের মাধ্যমে বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের বেতন বৈষম্য নিরসনসহ কয়েকটি পেশাগত সমস্যা সমাধান ও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র-শিক্ষকদের সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২টি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি সরকারের নিকট সুপারিশ প্রদান করেছে। আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটির সুপারিশের বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, দেশের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহে শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণসহ ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। ছাত্রদের বৃত্তি ও অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেনিং ভাতা বৃদ্ধির বিষয়গুলো সরকারের সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে।

তিনি বলেন, কারিগরি শিক্ষায় মেয়েদের আকৃষ্ট করা এবং চাকরিতে তাদের অগ্রাধিকার দেয়ার বিষয়টি সরকার গুরুত্বের সাথে দেখবে।

অনুষ্ঠানে কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৫ আইডিইবি সদস্যকে আইডিইবি সম্মাননা পদক প্রদান করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ পদক তুলে দেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন- বিশিষ্ট রাজনীতিক এ্যাডভোকেট রহমত আলী এমপি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, আইডিইবি’র সাবেক সভাপতি শফিউদ্দিন সরকার, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা আব্দুল জাব্বার খান ও রমানন্দ মল্লিক।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত