নতুন প্রজন্মের প্রতি বিজ্ঞান চর্চার আহবান প্রধানমন্ত্রীর

706

Published on এপ্রিল 20, 2014
  • Details Image


তিনি বলেন, ‘আমি ছাত্র-ছাত্রী এবং নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞানের ওপর আরো বেশি লেখাপড়া, চর্চা ও গবেষণার আহ্বান জানাই। কেননা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে বিজ্ঞানের ওপর ব্যাপক গবেষণার প্রয়োজন।’
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমির স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ২২ জন নবীন ও প্রবীণ বিজ্ঞানীকে স্বর্ণপদক প্রদান করেন।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। একাডেমীর সভাপতি অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা এবং সেক্রেটারি ড. অধ্যাপক মেজবাহউদ্দিন আহমেদ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। অনুষ্ঠানে সম্মাননাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ড. নঈম চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ গবেষণায় অনেক সফলতা দেখিয়েছে। দেশ যে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, তা এ গবেষণার ফসল। এ দেশের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবন করা সফটওয়্যার সারা দুনিয়ায় যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা, প্রদর্শনী ও প্রবন্ধ প্রকাশনায় বিজ্ঞানীদের উপস্থাপনা বাংলাদেশের জন্য বিজ্ঞান চর্চায় সম্মান বয়ে এনেছে। পাটের জীবন রহস্য উদঘাটন দেশের কৃষি প্রযুক্তির ইতিহাসে নতুন দিগন্তর উন্মোচন করেছে।
তিনি বলেন, ‘তাঁর সরকার ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণকালে গবেষণার জন্য একটি পয়সাও ছিলো না। আমরাই প্রথম গবেষণা খাতে থোক বরাদ্দ দিই। ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে বিজ্ঞান শিক্ষায় উৎসাহিত হয় সে জন্য বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষার প্রতিটি বিষয়ই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রতিটি ক্ষেত্রে বিজ্ঞানের ভূমিকা রয়েছে। আমরা চাই বেশি করে বিজ্ঞান গবেষণা ও চর্চা হোক। এ ব্যাপারে যত রকম সাহায্যের প্রয়োজন আমরা দিয়ে যাবো।’
প্রধানমন্ত্রী নিজকে সাহিত্যের ছাত্রী হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, তিনি বিজ্ঞান বোঝেন। আর এটা শিখেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, শিক্ষা ছাড়া কোনো জাতি ও দেশ দারিদ্র্য মুক্ত হতে পারে না। আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিÑ এগিয়ে নিয়ে যাবো। আমাদের লক্ষ্যÑ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে ২০২১ সালনাগাদ এ দেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করা। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলোর অন্যতম হিসেবে দেখতে চাই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদসহ সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতা ছাড়া দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।’
বিশ্বের বুকে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচার লক্ষ্য অর্জনে তিনি বিজ্ঞানী, গবেষক ও প্রযুক্তিবিদসহ সবার সর্বাত্মক সহযোগিতা কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সীমিত সম্পদের মধ্য থেকেই বিজ্ঞান চর্চায় সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁর সরকার বিজ্ঞানীদের পাশে আছে এবং থাকবে।
বর্তমান সরকার বরাবরই বিজ্ঞান গবেষণা ও উদ্ভাবনে পৃষ্ঠপোষকতা এবং বিজ্ঞান চর্চাবান্ধব নীতি প্রণয়নে আন্তরিক উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর পরই জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বহুমুখী কর্মসূচি হাতে নেন। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পরমাণু শক্তি গবেষণার মানোন্নয়ন, শিল্প গবেষণা শক্তিশালীকরণ এবং সবুজ বিপ্ল¬ব বাস্তবায়ন।
এ ছাড়াও লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবনের জন্য ১৯৭৩ সালে বিসিএসআইআর-সহ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, ধান, পাট, মৎস্য প্রভৃতি খাতে গবেষণার জন্য বঙ্গবন্ধুর ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন, যা হবে শোষণ-বঞ্চনামুক্ত। যেখানে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষাসহ মানুষের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হবে। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমেই সাধারণ মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোনার বাংলা গড়তে হলে ব্যাপকভাবে গবেষণা দরকার। সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যথেষ্ট অবদান রাখতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ বিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও গবেষক তৈরির লক্ষ্যে ১৯৯৯ সালে এ উদ্যোগটি প্রথম গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বিএনপি-জামাত জোট সরকার এ কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়। আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠনের পর আবার তা চালু করা হয়।
এ পর্যন্ত ১৯৬ জনকে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ প্রদান করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান গবেষণা ও অন্যান্য কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য আরো প্রায় ৩ হাজার জনকে ফেলোশিপ দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। স্কুল পর্যায় থেকে তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পড়ানো হচ্ছে। ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ১১টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাসহ গত মেয়াদে ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিধারীরা বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে উঠেছে।
প্রধানমন্ত্রী বিজ্ঞান একাডেমি আয়োজিত কৃতি নবীন ও প্রবীণ বিজ্ঞানীদের মাঝে স্বর্ণপদক এবং সনদপত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলকে নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং স্বর্ণপদক ও সনদপত্রের জন্য নির্বাচিত ফেলো ও বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান।
অনষ্ঠান শেষে তিনি উপস্থিত বিজ্ঞানী ও গবেষকদের সংগে শুভেচ্ছা বিনময় করেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত