621
Published on এপ্রিল 5, 2014
তিনি বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, শিক্ষার আলোকে আলোকিত হয়ে স্কাউটিংয়ের সুমহান ব্রতকে তোমরা জীবনের সকল ক্ষেত্রে ধারণ করে সুনাগরিক হিসাবে গড়ে উঠবে’।
প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে নবম বাংলাদেশ ও প্রথম সার্ক স্কাউট অর্গানাইজেশন (সানসো) স্কাউট জাম্বুরীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
গাজীপুরের মৌচাকে জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে স্কাউটদের এ জাম্বুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাঙলাদেশ স্কাউটসের সভাপতি আব্দুল করিম। আরো বক্তৃতা করেন স্কাউটসের প্রধান জাতীয় কমিশনার আবুল কালাম আজাদ ও জাম্বুরী সাংগঠনিক কমিটির চেয়ারম্যান সিনিয়ন সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন।
প্রধানমন্ত্রী শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে জাম্বুরীর উদ্বোধন ঘোষণা করেন। পওে তিনি দেশের সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের ওপর স্কাউট সদস্যদের প্রদর্শিত বর্ণাঢ্য ডিসপ্লে উপভোগ করেন। তিনি স্কাউটসদের বিভিন্ন তাঁবু এলাকা পরিদর্শন করেন।
প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোনা ক্যাম্পের সামনে গেলে ওই ক্যাম্পের এক কিশোর স্কাউট তাঁকে অভিবাদন জানায় । তার অনুরোধে সাড়া দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেত্রকোনা ক্যাম্পের ভিতর পরিদর্শন করেন।
সপ্তাহব্যাপী এ জাম্বুরীতে বাংলাদেশ, নেপাল, শ্রীলংকা ও ভুটানের প্রায় ৯ হাজার স্কাউট অংশগ্রহণ করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিশু, কিশোর ও যুবদের সৎ, চরিত্রবান, আত্মপ্রত্যয়ী ও আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে স্কাউট আন্দোলনের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ স্কাউটস এ ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ অবদানের জন্য দেশে এবং বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, জাম্বুরীর এবারের থিম ‘শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য স্কাউটিং’। আমি মনে করি এ থিম অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং উদ্দীপনামূলক।
তিনি বলেন, স্কাউটের মূলমন্ত্রই হচ্ছে ‘সদা প্রস্তুত’। আমি আশা করবো, তোমরা এই মুলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে দেশের উন্নয়ন, শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য ‘সদা প্রস্তুত’ থাকবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি জানি, দেশের সকল প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় স্কাউট সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করে থাকে। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ও শীতার্ত মানুষের সেবায় তোমাদের কার্যক্রম জনগণের কাছে প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন, বৃক্ষরোপণ, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্য-শিক্ষা, টিকাদান কর্মসূচীসহ পরিবেশ সচেতনতা বিষয়ে তোমরা শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত কাজ করে থাকো। আদর্শ স্কাউট হিসাবে তোমাদের সেবামূলক কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও বিস্তৃত করবে- এটাই আমার প্রত্যাশা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে এগিয়ে যাচ্ছে। তথ্য প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তোমাদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। নিজেদের আধুনিক বিশ্বের উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন ও দক্ষ তথ্যপ্রযুক্তিবিদ তৈরির লক্ষ্যে সরকার স্কুলগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষাদানের জন্য কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুমের ব্যবস্থা করেছে। পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নে ‘ইউনিয়ন তথ্য সেবাকেন্দ্র’ চালু করা হয়েছে। সরকার ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়।
তিনি বলেন, ‘সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার এই লড়াইয়ে তোমাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে। ভবিষ্যতে এদেশকে তোমরাই নেতৃত্ব দেবে। তাই, শিক্ষা, মেধা, মনন ও সততার সংমিশ্রনে নিজেদের তৈরি করতে হবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি তোমাদের সাথে ২০০৯ থেকে ২০১৩ মেয়াদে দেশব্যাপী স্বাস্থ্যক্যাম্প এবং বিদ্যুৎক্যাম্পে অংশগ্রহণ করেছি। তোমাদের সাথে এ কর্মসূচিগুলোতে তথ্য- প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্স করেছি।
তিনি স্কাউটদের বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এর ফলে তোমরা স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মকান্ডে আরও দক্ষতার পরিচয় দিচ্ছ এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কার্যকর অবদান রেখে চলেছ’।
তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে বাংলাদেশ স্কাউটস এর সহযোগিতা নিয়ে নিয়মিত বিদ্যুৎক্যাম্প ও স্বাস্থ্যক্যাম্প পরিচালনার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে স্কাউট আন্দোলনকে জোরদার করতে সম্ভাব্য সবধরণের সহযোগিতা দেয়া হচ্ছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাবিং সম্প্রসারণ প্রকল্প এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট থ্রু স্কাউটিং প্রকল্পের মাধ্যমে অধিকাংশ সরকারি-বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও সমপর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে কাব- স্কাউট ও স্কাউট দল গঠন করা সম্ভব হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১২ সালে ঢাকায় প্রথমবারের মত এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল স্কাউট কনফারেন্স আয়োজন করা হয়েছিল। এর মাধ্যমে বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের সুনাম আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মৌচাকের জাতীয় স্কাউট প্রশিক্ষণ কেন্দ্রকে একটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ট্রেনিং কমপ্লেক্সে পরিণত করতে ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের সহযোগিতায় বাংলাদেশ স্কাউটস সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি মৌচাকের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য একটি পৃথক প্রকল্প গ্রহণের জন্য স্কাউট নেতৃবৃন্দকে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান। এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া ও কাজ সম্পন্ন করতে যা যা করা দরকার, সরকার তা করবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জেলা পর্যায়ের স্কাউট কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান করবে। সকল জেলায় স্কাউট ভবন নির্মাণ করে দক্ষ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্য তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে অনুরোধ জানান।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, উন্নত ও দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে বাংলাদেশ স্কাউটস সবসময় উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তাই সরকার স্কাউটিংয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দক্ষ জনগোষ্ঠী তৈরিতে সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়ে যাবে’।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ স্কাউটসের সদস্য সংখ্যা বর্তমানে ১৩ লক্ষ, যা জনসংখ্যার তুলনায় খুব একটা বেশি নয়। স্কাউটসের গুণগত মান অক্ষুণœ রেখে এ সংখ্যা আরো বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য স্কাউট নেতৃবৃন্দের প্রতি তিনি সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অন্তত দুটো করে স্কাউট দল গঠন করার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ স্কাউটস গার্ল-ইন-স্কাউটিং কার্যক্রম তাদের ২০ বছর পূর্তি উদ্যাপন করছে এবং স্কাউটিংয়ে মেয়েদের সংখ্যা ১ লাখ ৫২ হাজার ৬৬৭ জন হয়েছে জেনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ স্কাউটসকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, স্কাউটিংয়ে মেয়েদের সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে, এজন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী মৌচাকে স্কাউটদের এ মধুর মিলনমেলা আনন্দময় ও সাফল্যমন্ডিত হোক এবং তাদের মধ্যে জনসেবার মনোবৃত্তি জাগ্রত হোক- এ কামনাও করেন।
সার্কভূক্ত দেশ থেকে আগত স্কাউটদের স্বাগত জানিয়ে শেখ হাসিনা এই জাম্বুরীতে অংশগ্রহণ এবং প্রথম সার্ক জাতীয় স্কাউট জাম্বুরী আয়োজনে বাংলাদেশকে সুযোগ দেয়ায় প্রতিটি সার্ক দেশকে ধন্যবাদ জানান।