633
Published on মার্চ 8, 2014
তিনি বলেন, ‘আসুন, আমরা সকলে মিলে একটি সমতাভিত্তিক বিশ্ব গড়ে তোলার অঙ্গীকার করি। এমন একটি সমাজ গড়ে তুলি যেখানে নারীর ন্যায্য অধিকার, সম্মান ও মর্যাদা নিশ্চিত হবে।’
প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক নারী দিবস-২০১৪ উপলক্ষে আজ সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহিলা ও শিশু বিষযক মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। এ বছর এ দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে : ‘অগ্রগতির মূলকথা, নারী-পুরুষ সমতা।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ। মন্ত্রণালয়ের সচিব তারিকুল ইসলাম ও ইউএন ওম্যান বাংলাদেশ’র আবাসিক প্রতিনিধি ক্রিষ্টিন সুসান হান্টার এতে বক্তব্য রাখেন।
ধর্মের জিকির করে নারীদের ঘরে আটকে রাখা যাবে না- এ কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা নারী-বিদ্বেষী অপপ্রচার করেন, তারা কেন ভুলে যান রাসুলুল্লাহ’র (সাঃ) হাত ধরে প্রথম ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারী আর কেউ নন, একজন নারী, হজরত বিবি খাদিজা। তারা কেনো ভুলে যান যে, বিবি খাদিজা নিজে তাঁর ব্যবসা পরিচালনা করতেন। হজরত বিবি আয়েশা (রাঃ) নিজে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীকে গৃহবন্দী করে রাখার জন্য ধর্মের অপব্যাখ্যা এবং নারী-বিদ্বেষী অপপ্রচার বন্ধে রাজনৈতিক প্রতিরোধের পাশাপাশি সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সবার প্রতি আহবান জানান।
পবিত্র কোরআন শরীফ ও হাদিসের কোন্ জায়গায় নারীকে গৃহবন্দী করে রাখার নির্দেশ দেয়া আছে জানতে চেয়ে তিনি বলেন, ‘বরং পবিত্র ইসলাম ধর্মই নারীর সম্মান নিশ্চিত করেছে। শিক্ষা এবং সম্পত্তিতে নারীর অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে।’
তিনি বলেন, তার সরকার নারী উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০টি করা হয়েছে। ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভায় সংরক্ষিত নারী আসন এক-তৃতীয়াংশে উন্নীত করা সহ এসব আসনে সরাসরি নির্বাচনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০ জন নারী সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারই সশস্ত্রবাহিনীতে নারী অফিসার নিয়োগ শুরু করে। মাঠ প্রশাসনে নারীদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আনা হয়। এবারই প্রথম একজন নারী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে দায়িত্ব পেলেন। প্রথম মহিলা বিচারপতিও ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ দেয়া হয়।
নারীর ক্ষমতায়ন, সমঅধিকার, সুরক্ষা ও সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে “জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১” প্রণয়ন এবং এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য জাতীয় কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ নারীর সকল চাহিদা পূরণে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এমন একটি রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন- যে রাষ্ট্র হবে শোষণ-বঞ্চনামুক্ত, যে রাষ্ট্রে বেগম রোকেয়ার বর্ণিত অবরোধবাসিনী নারী পাবে তার অধিকার, সমতা ও সমমর্যাদা।
তিনি বলেন, ধন-সম্পত্তি, ক্ষমতা বা মন্ত্রীর স্ত্রী হওয়ার লোভ আমার মায়ের ছিলনা বলেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন নির্লোভ থেকে দেশের জন্য, স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করতে পেরেছিলেন।
মাতৃত্বকাল ছুটি ৪ মাসের পরিবর্তে সবেতনে ৬ মাসে বর্ধিত করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের আমলে নারী উন্নয়নে গৃহিত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন ।
তিনি বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল হেল্পলাইন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে ৭টি বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ানস্টপ-ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
নির্যাতিত নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ঢাকায় মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ছাড়াও হতদরিদ্র নারীদের সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্ত করা, বিধবা ও দুস্থ মহিলা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও বিত্তহীন মহিলাদের খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি (ভিজিডি) অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সুত্রঃ বাসস