1142
Published on মার্চ 5, 2014
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দারিদ্র্য পীড়িত হত দরিদ্রদের কল্যাণ বিবেচনায় একটি সামগ্রিক নিরাপত্তা বেষ্টনি কৌশলের প্রয়োজন উপলব্ধি করে ‘জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল’ প্রণয়নও করতে যাচ্ছে।
তিনি আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের এনামুল হকের ‘দেশের অর্থনীতিকে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে সরকারের পরিকল্পনা’ সম্পর্কিত প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, “সরকারের বিগত মেয়াদের উন্নয়ন পরিকল্পনার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকার আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’-এর আলোকে অচিরেই রূপকল্প-২০২১-কে একটি প্রকৃত দীর্ঘমেয়াদী প্রেক্ষিত পরিকল্পনা হিসাবে রূপকল্প-২০৪১-এ রূপান্তর করবে।”
‘জাতীয় সামাজিক সুরক্ষা কৌশল’ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ কৌশল যাতে সামাজিক নিরাপত্তার মধ্যে নিরাপত্তা বেষ্টনি কর্মসূচিসমূহ, বীমা ধরনের সামাজিক বীমা, শ্রমবাজার নীতিমালা ও আত্মকর্ম সহায়ক কার্যক্রমসমূহ অন্তর্ভুক্ত থাকবে এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ভঙ্গুরতা দূর করে মানব সম্পদে রূপান্তরের সুযোগ সৃষ্টি করবে।
সরকার টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করণে ‘জাতীয় টেকসই উন্নয়ন কৌশলপত্র’ অনুমোদন করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই কৌশলপত্রের মূল লক্ষ্য হচ্ছে, টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের পাশাপাশি পরিবেশ সুরক্ষা এবং সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠাকরণ।
পরিকল্পনা কমিশন উক্ত কৌশলপত্রটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা, রূপকল্প ২০২১ এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন, পৃথিবীর উষ্ণতার পরিবর্তন ইত্যাদি ঋণাত্মক প্রভাব অভিযোজনের লক্ষ্যে তাঁর সরকার পানি সম্পদ, কৃষি, দুর্যোগ, পর্যটন, নৌ-সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাপনা সম্বলিত ৫০-১০০ বছর মেয়াদি ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্লান ২১০০’ প্রণয়নের কাজ হাতে নিয়েছে।
তিনি বলেন, এ ধরনের পরিকল্পনা বৈশ্বিক উষ্ণতা মোকাবেলায় এবং টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান সরকারের দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক পরিকল্পনার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি দিক তুলে ধরেন।
পরিকল্পনাগুলো হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ, ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্য রেখার নিচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা, একই সময়ের মধ্যে সবার জন্য দৈনিক ন্যূনতম ২১২২ কিলো ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ ও জনসংখ্যার অন্তত পক্ষে ৮৫ শতাংশের জন্য মানসম্মত পুষ্টিকর খাদ্য নিশ্চিত করা।
এছাড়াও বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা বর্তমান ১০ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট উন্নীতকরণ, বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীর বর্তমান হার ৬২ শতাংশ হতে বৃদ্ধি করে ২০২১ সালের মধ্যে সকলের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনাগুলো হচ্ছে রাজস্ব আয়ের বর্তমান হার জিডিপি’র ১৪ দশমিক ১ শতাংশ হতে ২০২১ সালের মধ্যে ২০ শতাংশ উন্নীত করতে বাজেটের আকার বর্তমান জিডিপির ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হতে ২০২১ সালের মধ্যে ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি, দ্বিতীয় পদ্মা সেতু ও দ্বিতীয় যমুনা সেতু নির্মাণসহ সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠাসহ মহেশখালীতে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস স্থাপনা (এলএনজি টার্মিনাল) নির্মাণ।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মধ্যমেয়াদী ষষ্ঠ ও পরবর্তীতে ২০১৫-১৬ অর্থবছর হতে ২০১৯-২০ অর্থবছর মেয়াদে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা মেয়াদান্তে ২০২১ সালে বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ২০০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
একই সাথে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার অন্যতম আরেকটি সূচক, মানব সম্পদ সূচক (হিউম্যান অ্যাসেট ইনডেক্স)-এর ভিত্তিতেও বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার শর্ত পূরণে সক্ষম হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সাথে বলেন, আগামী ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে।
সুত্রঃ বাসস