585
Published on মার্চ 9, 2014
তিনি আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ-২০১৪-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিধির ভাষণ দিচ্ছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে তার সরকার প্রাথমিক স্তরে কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক ও নারী শিক্ষার অগ্রগতির জন্য উপবৃত্তি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে।
তিনি বলেন, শতভাগ স্বাক্ষরতা অর্জনের লক্ষ্যে বয়স্কদের জন্য উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার পূরণে ইতোমধ্যে তার সরকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করেছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক, স্থানীয় নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ সম্মাননা ও পদক প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রী সেই সঙ্গে জাতীয় পর্যায়ের খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারী ২৫০ জন শিক্ষার্থীর মাঝেও মেডেল ও সনদ বিতরণ করেন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান এমপি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। স্বাগত বক্তৃতা করেন একই মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আক্তার হোসেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক শ্যামল কান্তি ঘোষ।
প্রধানমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষকদের দাবি-দাওয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল আছেন উল্লেখ করে বলেন, তাদের পেশা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
তিনি বলেন, শিক্ষকরা মানুষ গড়ার কারিগর। তাই তার সরকার প্রাথমিক শিক্ষকদের পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে তৃতীয় থেকে দ্বিতীয় শ্রেণীতে উন্নীত করেছে। অন্যরাও যেন এই পেশা গ্রহণে আগ্রহী হয়, এ জন্য প্রাথমিক শিক্ষকদের সুযোগ সুবিধা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়ে কাজ করে চলেছে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষাখাতে ৯৯ হাজার ১৮১ জন শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দেয়া হচ্ছে। এ বছরও বিএনপি-জামায়াতের হরতাল, অবরোধ, মানুষ খুন ও নাশকতার মাঝে প্রায় ৩০ কোটি বই নতুন বছরের প্রথমদিন শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষিত জাতি গঠনে সরকার প্রতিবছর প্রাথমিক স্তরে প্রায় ৭০ লাখ, মাধ্যমিকে ৪০ লাখ এবং উচ্চ মাধ্যমিক থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ১ লাখ ৩৩ হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদান করে আসছে। আর এসব উদ্যোগ গ্রহণের ফলে প্রায় শতভাগ শিশুর বিদ্যালয়ে ভর্তি এখন নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি বলেন,যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭২৪ জন শিক্ষকের চাকরি জাতীয়করণ করেন। আর বঙ্গবন্ধুর পর একমাত্র তার সরকারই ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১ লাখ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকুরি জাতীয়করণ করে। বিদ্যালয়বিহীন এলাকাসমূহে নতুন বিদ্যালয় স্থাপন, উপবৃত্তির কোটা বৃদ্ধি, নতুন পিটিআই স্থাপন, পুরোনো স্কুলসমূহের অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্লাসরুমের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, শিক্ষার উন্নয়নে আমরা যখন কাজ করছি তখন বিএনপি-জামায়াত আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনকে জিম্মি করছে। মাসের পর মাস ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলে যেতে পারেনি তাদের সহিংস তৎপরতার কারণে। স্কুলে যাওয়ার পথে ককটেল মেরে আহত করেছে চট্টগ্রামের স্কুল ছাত্রী অন্তু বড়ুয়া, সাভারের ক্লাশ ফোরের শিশু ছাত্রী বিনু ও বগুড়ার সাদিয়া আক্তারকে। নির্বাচন বানচাল করতে তারা ৫৮২টি স্কুল ভাংচুর করেছে। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে।
অশিক্ষিত নেতৃত্বই তাদের পছন্দ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ ধরণের নাশকতাপূর্ণ কর্মকান্ড আর ঘটাতে দেয়া যাবে না। যারা ঘটাবে তাদের কঠোর শাস্তি পেতে হবে। দেশের সাধারণ মানুষের প্রতি আহবান জানিয়ে তিনি আরো বলেন, এমন নাশকতাপূর্ণ কর্মকান্ড ঘটতে দেখলে প্রতিরোধ ও প্রতিহত করুণ।
তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি শিশুই মানসম্মত শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠুক, এটাই আমাদের সরকারের চাওয়া। আমার বিশ্বাস, সকলে মিলে কাজ করলে আমরা এ সাফল্য অর্জন করতে পারব। এ জন্য আমাদের সরকার পাঠ্যপুস্তক সহজলভ্য করতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল বই ই-বুকে রূপান্তর করো অনলাইনে পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাশরুম ও আইসিটি ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। শিক্ষকদের এ ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফল ওয়েবসাইট, এসএমএস ও ই-মেইলে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিশুরাই আগামী দিনের ভবিষ্যত উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের শিক্ষায় যেন কোন ব্যাঘাত না ঘটে এ জন্য বিদ্যালয়ে নলকূপ স্থাপন, ছাত্রী ও শিক্ষিকা এবং ছাত্র ও পুরুষ শিক্ষকদের জন্য আলাদা টয়লেট, জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস এবং রিসোর্স সেন্টার মেরামত, আসবাবপত্র সরবরাহসহ ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা হয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম সাইক্লোন শেল্টার ও পার্বত্য জেলায় হোস্টেল নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রত্যেক শিশুর জন্য মান সম্পন্ন শিক্ষা নিশ্চিত করার ব্যাপারে তাঁর সরকারের অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অভিষ্ট লক্ষে পৌঁছতে তাঁর সরকার প্রয়োজনীয় সব কিছুই করবে।
তিনি দৃঢ় আস্থা প্রকাশ করে বলেন, ‘২০২১ সালে আগেই বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারব এবং ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা এবং বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবো।’