বিশৃংখল রাজনীতি বন্ধে সরকার কঠোর হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী

641

Published on জানুয়ারি 10, 2014
  • Details Image


শেখ হাসিনা বিএনপি প্রধানের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনার কিছু বলার থাকলে আপনি আলোচনার জন্য আসতে পারেন। তবে মানুষ হত্যা এবং সমাজে বিশৃংখলা বন্ধ করতে হবে। সরকার জানে অস্থিতিশীল রাজনীতির বিরুদ্ধে কতোটা কঠোর ব্যবস্থা নেয়া যায়।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে আজ বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত দলের এক বিশাল জনসমাবেশে ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের হুমকি উপেক্ষা করে ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ভোট দেয়ায় বাংলাদেশের জনগণকে ধন্যবাদ জানান। তিনি ঐক্যবদ্ধভাবে অশুভ তৎপরতা প্রতিরোধ করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, আগামী ১২ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ পরবর্তী সরকার গঠন করবে। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসে সে সময়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়েছে। বিরোধী দল হিসেবে আমরা সেসময়ে অনেক এলাকায় সন্ত্রাস বন্ধ করতে পারিনি। তবে এখন আমরা ১২ জানুয়ারি সরকার গঠন করব এবং এরপর অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৬ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে বিএনপি নেত্রী ধারণা করেছিলেন, আওয়ামী লীগ কখনোই আর ক্ষমতায় আসতে পারবে না, এমনকি বিরোধী দলীয় আসনেও বসতে পারবে না। এখন খালেদা জিয়ার সেই ধারণা তার নিজের জন্যই সত্য হয়ে এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ১২টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নিয়েছে এবং ৪০ শতাংশ লোক বিএনপি-জামায়াতের সহিংস প্রতিরোধের হুমকির মুখে ভোট দিয়েছে।
তিনি বলেন, অসাংবিধানিক সরকারের জন্য সুযোগ করে দিতে এবং জনগণের ভোটাধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে কয়েকটি দল নির্বাচন বর্জন করেছে।
তবে গণতন্ত্র, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া এবং শান্তি ও উন্নয়নের জন্য দেশের জনগণ ষড়যন্ত্র ভণ্ডুল করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। এতে পুনরায় জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসীদের পুনরায় ক্ষমতায় আনার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছে।
গোপালগঞ্জ সম্পর্কে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বক্তব্যের জন্য তাঁর নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোপালগঞ্জ হলো বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান।
বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্যের রাজনীতির কারণে বহু মানুষের প্রাণহানির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনেক লোককে ঘুমের মধ্যে জীবিত পুড়িয়ে মারা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, দেশবাসী আর কতো এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড সহ্য করবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার আন্তরিকভাবে বিএনপির সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছতে চেয়েছে এবং এলক্ষ্য অর্জনে সংলাপের জন্য তিনি বার বার সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন।
তিনি বলেন, তবে আমি যখনই কোনো প্রস্তাব দিয়েছি, তখন বেগম জিয়া তা সরাসরি নাকচ করেন এবং তিনি আমাদের ক্ষমতা ছেড়ে দিতে এমনকি দেশত্যাগ করার হুমকি দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশবাসীকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ও সাংবিধানিক শাসনকে টেকসই করতে যে কোন দেশবিরোধী ও অন্তর্ঘাতমূলক অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে ভোট দেয়ায় ও তাদের মার্কা নৌকা হওয়ায় বিএনপি-জামায়াত এখন দেশের সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের জন্য বিএনপিকে জবাব দেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে ৪০ শতাংশ মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি মহাভুল করেছে। এখন বেগম জিয়া চাচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষ তাদের ভুলের মাশুল দিক। এই কারণে তিনি সন্ত্রাসী ও জামায়াত-শিবিরদের দিয়ে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালাচ্ছেন।
তিনি বলেন, সরকার ইতোমধ্যেই সমস্যাগ্রস্ত এলাকায় যৌথ অভিযান চালানোর জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছে। দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে, প্রয়োজনে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
বেগম জিয়াকে তার লাদেন স্টাইলের রাজনৈতিক প্রচারণা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তিপূর্ণ জনজীবনে কোন সমস্যার সৃষ্টি করবেন না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে যাত্রা শুরু করেছে। লাখো শহীদের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে। এই পথে কেউই বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না।
দলের নেতা-কর্মীদের তাদের ভবিষ্যৎ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, তাঁর সরকারের প্রথম ও আশু লক্ষ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে এই ময়দানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশে প্রথম ভাষণ দিয়েছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল- প্রতিটি মানুষ প্রতিদিন দু’বেলা দু’মুঠো খাবার পাবে। প্রতিটি মানুষ তাদের উন্নত জীবনযাপনের জন্য বাসস্থান পাবে। তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য জাতির জনকের এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা।
বিগত ২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে জয়লাভের পর আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণে তাঁর সরকারের বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ওই সময়ে আমরা জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণের অঙ্গীকার করেছিলাম।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে ধীরে ধীরে ২০২১ সালের মধ্যে একটি মধ্য-আয়ের দেশে পরিণত করার পথে নিয়ে এসেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে তাঁর দল বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত করার রূপরেখা দিয়েছে।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত