সংলাপে বসার জন্য বিরোধীদলীয় নেতাকে পুনরায় আহবান জানালেন প্রধানমন্ত্রী

555

Published on জানুয়ারি 6, 2014
  • Details Image


তিনি বলেন, ‘আমি সন্ত্রাস ও সহিংসতা পরিহার এবং যুদ্ধাপরাধী ও জঙ্গী জামায়াতের সঙ্গে দলের সম্পর্ক ছিন্ন করে একটি শান্তিপূর্ণ সংলাপে বসার জন্য বিরোধী দলীয় নেতাসহ সকলের প্রতি আবারও আহবান জানাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, আলোচনার মাধ্যমে পররর্তী নির্বাচনের ব্যাপারে একটি সমাধানে আসা যেতে পারে। তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে, সকলকেই ধৈর্য্য ধরে রাখতে হবে এবং দেশে সব ধরণের রাজনৈতিক সহিংসতা বন্ধ করতে হবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের প্রাক্কালে আমি গণতন্ত্র, শান্তি এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সন্ত্রাস ও সহিংসতা এড়িয়ে একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছার জন্য বিরোধী দলের প্রতি বারবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম।
তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের পর এখন আমি নৈরাজ্য, অনিশ্চয়তা, ধ্বংস ও নাশকতার পরিবর্তে গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাই।’
তিনি বলেন, ‘নিরীহ নাগরিকের রক্তে আজ গণতন্ত্র রক্তাক্ত এবং সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির শিকার হয়ে বার্ণ ইউনিটে চিকিৎসাধীন মানুষের আর্তনাদ জাতির বিবেককে আজ দংশন করছে। জাতি আজ এর অবসান চায়।’
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যথাসময়ে পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি আরো বলেন,‘বিএনপি-কে সংলাপে আনার জন্য আমার দল সবসময় সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে প্রস্তুত।’

শেখ হাসিনা বলেন, সকল প্রতিকূলতা সত্ত্বেও, আমরা জনগণের বৃহত্তর স্বার্থে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এখনো সকলের সঙ্গে আলোচনা করতে সম্মত আছি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে বিএনপি নেত্রীর উপর।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেতা সংসদে আসবেন না বলেই একটি ঐকমত্যে পৌঁছতে যে কোন রাজনৈতিক সংলাপের জন্য তার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
শেখ হাসিনা নির্বাচনোত্তর সহিংসতা কঠোর হস্তে দমন করতে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে নির্দেশ প্রদান করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন বিরোধী অপরাধীদের নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দ্রুত সংস্কার করে শিক্ষা কর্মকাণ্ড শুরু করা হবে।
তিনি বলেন, সব ধরণের রাজনৈতিক সহিংসতা থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, কল-কারখানায় উৎপাদন ও রফতানি বাণিজ্য রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নাগরিকদের স্বাভাবিক জীবন-যাত্রা নিশ্চিত করতে সব ধরণের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
শেখ হাসিনা আশ্বাস দেন যে, বিএনপি এবং জামায়াত-শিবিরের নৃশংসতা ও নাশকতার শিকার আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিহত ও আহত সদস্যদের আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।
তিনি বলেন, বিরোধী দলের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নিহত সাধারণ জনগণের পরিবারগুলোও আর্থিক সহায়তা পাবে। তিনি বলেন, ‘আমরা আহতদের চিকিৎসা সহায়তা অব্যাহত রাখবো এবং ক্ষতিগ্রস্ত লোকদের সহায়তা দেয়া হবে।’
জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ অব্যাহত রাখার বিষয়ে তার দৃঢ় অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের বিচার এবং মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্তদের বিচার অব্যাহত থাকবে এবং রায় কার্যকর করা হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দলসহ সকলের অংশ গ্রহন থাকলে তা আরো প্রতিযোগিতামূলক ও ইতিবাচক হতো।
তিনি বলেন ‘আমরা আশা করেছিলাম যে, প্রধান বিরোধী দল গণতন্ত্র আরো সুসংহত করতে এবং সাংবিধানিক ধারাবহিকতা বজায় রাখার লক্ষ্যে নির্বাচনে যোগ দিবে। তাই, আমি একটি সংলাপ ও রাজনৈতিক সমঝোতার লক্ষ্যে আলোচনায় বসার জন্য বিরোধী দলীয় নেতাসহ সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলাম।
শেখ হাসিনা বলেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের জন্য একটি বিজয় এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির জন্য পরাজয়।
তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচনে শান্তির জন্য বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার সুস্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে এবং এটি হচ্ছে সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে জনগণের একটি সমুচিত জবাব।’
আওয়ামী লীগ প্রধান গণতন্ত্র নস্যাৎ করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের সকল ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও গতকালের নির্বাচনে অংশগ্রহন করার জন্য দেশবাসীকে অভিনন্দন জানান।
তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদেরকে ভোট দিয়েছে এবং আমরা আমাদের দলের নিরঙ্কুশ বিজয় লাভের ম্যান্ডেট কাজে লাগিয়ে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সকল কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল ৫ জানুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার লক্ষ্যে কোন চেষ্টাই বাদ রাখেনি। কিন্তু জনগণ তাদের সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট প্রদান করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমি বিরোধী দল বিএনপি এবং জামায়ত-শিবিরের হুমকি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা নির্বাচন সফল করেছেন তাদেরকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনৈতিক সংঘাত ও সন্ত্রাসবাদ কখনই বাংলাদেশের অগ্রগতিকে ব্যাহত করতে পারবে না।
তিনি বলেন, সকল বৈরীতার মাঝেও আমরা এগিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা অবশ্যই এগিয়ে যাব। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাজ হচ্ছে স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যাওয়া এবং আমরা তাই করছি।’
তিনি বলেন, কিন্তু লোকজন তাদের আহ্বানে সাড়া দেয়নি। ভোটাররা বৈরি পরিস্থিতি মোকাবেলা করে ভোট কেন্দ্রে এসেছে। কোন কোন স্থানে বিএনপি-জামায়াতের লোকেরা ভোটারদের ওপর আক্রমণ চালিয়েছে, তাদের ভয়-ভীতি দেখিয়েছে এবং স্কুলে আগুন দিয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি। তাদের শিক্ষা দেয়ার চেষ্টা করছি। প্রকারান্তরে বিএনপি শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিকভাবে জিম্মি করে তাদের স্কুল পুড়িয়ে দিচ্ছে।’
সরকার নির্বাচনের দিন জনগণের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের কোথাও কোথাও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে যাতে তারা ভোট কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘ওইসব ঘটনার ব্যাপারে আমরা কোঁজ-খবর নিচ্ছি এবং অবশ্যই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।’ তিনি বলেন, ‘যারা জনগণের জানমাল নিয়ে খেলা করে তাদের ছাড় দেয়া হবে না। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কম ভোট পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খুশি এজন্য যে, জনগণ ভোট দিতে পেরেছে। এত বাধা পেরিয়ে জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে এটাই বেশি।
এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের সঙ্গে সংলাপে যোগ দেয়ার জন্য বিএনপিকে হরতালের রাজনীতি, হত্যা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড অবশ্যই পরিহার করতে হবে। এছাড়াও, বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। তাহলেই, সংলাপের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি মনে করেন যে, জাতি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ। গণতন্ত্র ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যেসব দলের বিশ্বাস রয়েছে তারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা ঐক্যবদ্ধ এবং একসঙ্গে দেশ চালানোর জন্য আমরা ঐক্যবদ্ধ থাকবো।’
তিনি বলেন, বিরোধী দলের সকল বাধা উপেক্ষা করে বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। একজন প্রিসাইডিং অফিসার নিহত হয়েছেন। তারপরও, সকল পোলিং অফিসার সময়মতো উপস্থিত হয়েছেন এবং তাদের নির্বাচনী দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি আরো বলেন, এই নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে একটি গতিশীল দেশ। কোন দেশই বাংলাদেশের মতো এমডিজি অর্জনে সাফল্য দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার একটি শক্তিশালী রিজার্ভ রয়েছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ছয় শতাংশের ওপরে রাখতে পারবো। আমরা এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা আমরা সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছি।’ তিনি প্রশ্ন করেন, ‘তাহলে নিষেধাজ্ঞার প্রশ্ন আসবে কেন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি স্বার্থন্বেষী মহল দেশের অর্থনীতি ধ্বংস করতে চায়। কিন্তু তারা তা করতে পারবে না, কারণ জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।
দলের হোমড়া-চোমড়াদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিবাজদের বিষয়ে তার কোন সহানুভূতি নেই। দুর্নীতির দায়ে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি বলেন, তার সরকারের মেয়াদকালে দুর্নীতির হার কমে এসেছে। তিনি আরো বলেন, ‘আমার দলের কোন দুর্নীতিগ্রস্থ লোককে আমি রক্ষা করবো না। তাদের ব্যাপারে আমার কোন দুর্বলতা নেই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরবর্তী সরকার গঠনের বিষয়ে তিনি ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদেও জোটের কোন দল যদি সরকারে যোগ দিতে চায়, তাহলে, আমার কোন আপত্তি নেই। কারণ, আমি সবসময় একসঙ্গে কাজ করে দেশের উন্নয়ন করতে চাই।
মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সিনিয়র আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত