নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর উদ্বোধনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী : বিএনপিকে পরবর্তী নির্বাচনের জন্য অপেক্ষার আহ্বান

529

Published on ডিসেম্বর 28, 2013
  • Details Image


শেখ হাসিনা বলেন, বেগম জিয়া গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না। কারণ সামরিক একনায়কের জঠর থেকে জন্ম নেয়া দল, বিএনপির জন্য গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা মানানসই নয়। এ জন্য বেগম জিয়া পাঁচ বছর আগে জনগণের ভোটে চরমভাবে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার দিন ২৯ ডিসেম্বর গণতন্ত্র অভিযাত্রার কর্মসূচি দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার এখানে দলীয় প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহর সমর্থনে ভাঙ্গার বিশ্বরোড বালুরমাঠ ও সদরপুর স্টেডিয়ামে ভাষণ দেন।
এরআগে তিনি দুই দিনের নির্বাচনী প্রচারণার উদ্দেশে রাজধানী থেকে সড়কপথে ফরিদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এখান থেকে তিনি তাঁর নিজ জেলা গোপালগঞ্জে যান এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন।


ফরিদপুর-৪ আসনের প্রার্থী কাজী জাফরুল্লাহর সমর্থনে আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেয়ার চেয়ে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষায় সন্ত্রাস চালাতে অধিক আগ্রহী।

অন্যান্যের মধ্যে নৌ-পরিবহন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী শাজাহান খান, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ এবং সালেহা মোশাররফ এমপি সমাবেশে বক্তৃতা করেন।


নৌকা মার্কায় ভোট দিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকা হচ্ছে স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু, শান্তি ও মর্যাদার প্রতীক।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এক সময় ক্ষুধা ও দারিদ্র্যপীড়িত ছিল। ১৯৭৫ পরবর্তী সরকারগুলোর আমলে এ অবস্থা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। কিন্তু ১৯৯৬ সালে নৌকায় ভোট দেয়ার পর থেকে জনগণ এই সামাজিক দুর্ভোগের হাত থেকে মুক্তি পেতে শুরু করে। নৌকা পর্যাপ্ত পরিমান খাদ্যের সংস্থান এবং জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিয়েছে। নৌকাই দেশের সমৃদ্ধি আনতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাইকোর্ট কর্তৃক সন্ত্রাসী দল এবং নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত জামায়াতে ইসলাম ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না।
বিএনপি আমলে দেশের ভয়াবহ রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই দলটি ক্ষমতায় এলে দেশ অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। তাদের প্রধান মিত্র জামায়াতে ইসলামী নির্বাচনে আসতে না পারায় বিএনপি এখন ধ্বংসের পথে বেছে নিয়েছে।


শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া পাঁচ বছরে কেউই দেশকে এতো বেশি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিতে পারেনি। আওয়ামী লীগই পদ্মা সেতু নির্মাণের স্বপ্নের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু বিশ্বব্যাংক তার প্রতিশ্রুত অর্থায়ন প্রত্যাহার করায় এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন বিঘ্নিত হয়। আগামী ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।


কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘আসন্ন নির্বাচনের আগে কিছু মানুষ তাদেরকে আমার আত্মীয়স্বজন বলে পরিচয় দিচ্ছেন। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে বলছি- আমার বোন ও আমাদের ছেলে-মেয়ে ছাড়া আমার আর কোন আত্মীয়স্বজন নেই।’


প্রধানমন্ত্রী জনগণের প্রতি পদ্মা সেতু কেলেঙ্কারির সাথে যেসব প্রার্থীর নাম জড়িয়েছে এবং যাদের জন্য দেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে তাদেরকে ভোট না দেয়ার আহ্বান জানান।


‘তাঁর সরকার গত ৫ বছর সম্পূর্ণ দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করেছে’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জনগণ আমাদের সুশাসনের সুফল ভোগ করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, জনগণ শান্তি ও আর্থিক স্বচ্ছলতার মধ্যে বসবাস করছে। কিন্তু দেশের জনগণকে সুখী দেখলে বিরোধীদলীয় নেত্রীর কষ্ট হয়। তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী আমাদের সকল সাফল্য ধ্বংস করতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।’


গত ২৪ ডিসেম্বর সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ বিশ্ব সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বলে বেগম জিয়া যে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা তার বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ‘বেগম জিয়ার এ মন্তব্যের আধা ঘণ্টার মধ্যে জাতিসংঘ মিশনে আরও এক ব্যাটালিয়ন শান্তিরক্ষী চেয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন আমাকে ফোন করেন’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, মিথ্যা কথা বলা বিএনপি নেত্রীর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে।


বিজয়ের মাসে জামায়াতের সঙ্গে জোট বেধে সন্ত্রাস চালানোর জন্য বেগম জিয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, পরাজিত শক্তিকে সাথে নিয়ে তিনি (বেগম জিয়া) গৌরবের মাসের ইতিহাসকে অন্যভাবে লেখার অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।


বেগম জিয়ার প্রতি স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির সঙ্গে আতাঁত করে ধ্বংসাত্মক রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশবাসী একদিন জঘন্য অপরাধ কর্মকাণ্ডের ইন্ধনদাতা হিসেবে তাকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করাবে।’


বিকেলে শেখ হাসিনা তাঁর নির্বাচনী এলাকা (গোপালগঞ্জ-৩)’র কোটালিপাড়ায় লুৎফুর রহমান ডিগ্রি কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী সমাবেশে ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচন বানচাল করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার এই ক্ষমতা নেই।


শেখ হাসিনা জনগণের প্রতি ভোট কেন্দ্রে যওয়ার এবং নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানান।


তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেত্রী প্রায়ই আমাকে হুমকি এবং আল্টিমেটাম দেন। বিশেষ করে আমি যখন তাকে সংলাপের আহ্বান জানাই তখন তিনি আমাকে হুমকি জারি করেন।’


তিনি বলেন, বিএনপি বাংলাদেশকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। অপরদিকে আওয়ামী লীগের বর্তমানে মেয়াদে দেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিঃসন্দেহে আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হবে। জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের জন্য অবাধে ভোট প্রয়োগ করতে পারবে।

বিভিন্ন ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের নেয়া পদক্ষেপের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আবার ক্ষমতায় আসে দেশের মানুষ আর দরিদ্রের জীবন যাপন করবে না।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী মকসুদপুরে দলীয় প্রার্থী ফারুক খানের সমর্থনে জনসভায় ভাষণ দেন।
দিনব্যাপী প্রচারণার শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী সন্ধ্যায় টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর পৈতৃক বাড়িতে পৌঁছান। তিনি সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জেয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করেন।

শেখ হাসিনা আজরাতে তাঁর পৈতৃক বাড়িতেই অবস্থান করবেন। আগামীকাল রাজধানীতে ফেরার পথে তিনি মুন্সীগঞ্জে দু’টি নির্বাচনী সভায় ভাষণ দেবেন।

TAGS:

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত