4417
Published on ডিসেম্বর 28, 2013
‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশঃ নির্বাচনী ইশতেহার ২০১৪’ শিরোনামের এই ইশতেহার ঘোষণা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন‘মানুষের আর্থ-সামাজিক মুক্তি এবং দারিদ্র্য ও ক্ষুধামুক্ত একটি উন্নত ও সম্ভাবনাময় দেশ- এটাই আমাদের লক্ষ্য’।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে এই দলের জেষ্ঠ্য নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের সদস্য, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
ইশতেহারে যুদ্ধাপরাধীদের রায় কার্যকরের পর আগামীতে এই বিচার বানচালের ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিচারসহ আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে দ্বিতীয় যমুনা এবং দ্বিতীয় পদ্মা সেতুর নির্মান কাজ শুরু, ফোর-জি চালু, দূর্নীতি দমন কমিশনের ক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি এবং নির্বাচন ব্যাবস্থার সংস্কার অব্যাহত রাখার অঙ্গিকার ব্যক্ত করা হয়।
এছাড়াও এবারের ইশতেহারে যে সব বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে সেগুলো হলো যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, পদ্মাসেতু নির্মান, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও মর্যদা সংহত করা ,গনতন্ত্রায়ন, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন, দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে শিল্পায়ন,বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখা, গ্যাসের যুক্তি সঙ্গত উত্তোলন ও ব্যবহার নিশ্চিত করা, দারিদ্র নিরসনে আওয়ামী লীগ সরকারের গৌরবোজ্জল সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখা, উৎপাদন মুখি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, খাদ্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের ধারাকে সুসংহত করা, বর্তমান শিক্ষা নীতির পূর্ণাঙ্গবাস্তবায়ন এবং শিক্ষাখাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্ধ বৃদ্বি করা এবং স্বাস্থনীতি ও কর্মপরিকল্পনা সমুহের বাস্তবায়ন ও সম্প্রসারন অব্যাহত রাখা।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে ইশতেহারে বলা হয়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সম্পন্ন এবং শাস্তি কার্যকর করা হবে। এই বিচার বানচাল করতে গিয়ে আন্দোলনের নামে হত্যা সন্ত্রাস, পবিত্র কোরয়ান শরীফে অগ্নিসংযোগ, শিল্প কারখানায় আগুন, রেলওয়ের ফিশপ্লেট উপড়ে ফেলা , সড়ক কাটাসহ রাষ্ট্র ও জনগনের সম্পদ ধংস সাধন, সংখ্যালঘু সমপ্রদায়ের উপর হামলা ,উপসনালয় ধংস ও অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও বৃক্ষ নিধনের সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচার করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য প্রসঙ্গে বলা হয়, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত এবং নিরবিচ্ছিন্ন উন্নয়ন নিশ্চিত করার মতো মৌলিক প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণী ও পেশাজীবি সংগঠন এবং সিভিল সমাজ সহ দলমত নির্বিশেষে জাতীয ঐকমত্য গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
নারীউন্নয়ন নীতি -২০১১ দৃঢ়ভাবে অনুসরন ও বাস্তবায়ন, ইতোমধ্যে শুরু হওয়া পদ্মাসেতুর নির্মান কাজ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সম্পন্ন করে দ্বিতীয় যমুনা সেতুও ও দ্বিতীয় পদ্মাসেতু নির্মানের কারিগরি ও অন্যান্য প্রস্তুতি দ্রুত সম্পন্ন করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে এ দুটি সেতুর নির্মান কাজ শুরু এবং সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মানের প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়ন করা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ হয়।
শান্তি ও স্থিতিশীলতা সম্পর্কে ইশতেহারে বলা হয়, জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতা দূর করে রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনের সর্বক্ষেত্রে শান্তি শঙ্খখলা ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। নাগরিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধান, তাদের কাজের ও চলাফেরার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে।
ইশতেহারে জনগনের জীবনযাত্রার ক্রমাগত মানোন্নয়ন, তাদের আয় রোজগার বৃদ্বি এবং খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয দ্রব্যমূল্য জনগনের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে স্থিতিশীল রাখাসহ দেশজ উৎপাদন বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখা, খাদ্য সংশ্লিষ্ট ভোগ্যপন্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানী খাতে অগ্রগতির ধারা অভ্যাহত ও আরও দ্রুততর করা হবে উল্লেখ করে ইশতেহারে বলা হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে আওয়ামীলীগ সরকার প্রনীত এবং বাস্তবায়নাধীন মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচির লক্ষ্য অর্জনের ভিতর দিয়ে আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশের প্রতি ঘরে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে। ২০১৬ সাল নাগাদ বিদ্যুৎ উৎপাদন ১৬ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। এছাড়াও পরিকল্পিত ৩০ লাখ সৌর বিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে সৌর বিদ্যুতের ব্যাবহার সহজলভ্য ও ব্যাপক করা হবে বলে ইশতেহারে বলা হয়।
দারিদ্র নিরসনে আওয়ামী লীগ সরকারের গৌরবোজ্জ্বল সাফল্যের ধারা অভ্যাহত থাকবে উল্লেখ করে ইশতেহারে বলা হয়,দারিদ্রপ্রবন এলাকায় সামাজিক নিরপত্তা কর্মসূচির বিশেষ ব্যাবস্থা অব্যাহত থাকবে। গ্যাসের যুক্তিসঙ্গত উত্তোলন ও ব্যাবহার নিশ্চিত করা সহ জাতীয় প্রতিষ্ঠান বাপেক্স কে আরো শক্তিশালী করার নীতি অভ্যাহত থাকবে বলে বলা হয়।
নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়, আওয়ামী লীগের কর্মসংস্থান নীতির মূল লক্ষ্য উৎপাদন মুখি কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অদক্ষ জনগোষ্ঠিকে আধাদক্ষ ও দক্ষ জনগোষ্ঠিতে রুপান্তরিত করা । কৃষিক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্র“তি হচ্ছে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বিবেচনায় রেখে দেশবাসীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা , বাংলাদেশকে খাদ্যে উদ্বৃদ্ব করা, আপদকালীন নির্ভর যোগ্য মজুদ গড়ে তোলার পাশাপাশি বাংলাদেশকে রপ্তানীকারক দেশে পরিনত করা।
শিক্ষা সর্ম্পকে বলা হয় ,প্রাথমিক শিক্ষার স্তর পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেনিতে উন্নীত করা হবে এবং অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক করা হবে। গনমাধ্যম ও তথ্য অধিকার প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রতিশ্রুতি হচ্ছে সকল প্রকার গনমাধ্যমের স্বাধীনতা সংরক্ষন এবং অবাধ– তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার নীতি অবিচলিত ভাবে অভ্যাহত রাখা ।
ইশতেহারের পটভূমিতে বলা হয়, আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ। শুরু হয়েছে দারিদ্র ও পশ্চাৎপদতা থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরনের ঐতিহাসিক কাল পর্ব।
আওয়ামী লীগের গত পাঁচ বছরের শাসন সর্ম্পকে ইশতেহারে বলা হয় যে তাদের অঙ্গিকার পূরন করা হয়েছে । তবে সে অঙ্গিকার ও কর্মসূচি কেবল পাঁচ বছরের জন্য ছিলনা। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই কোন রাজনৈতিক দল একটা দীর্ঘমেয়াদী সুস্পষ্ট কর্মসূচি গ্রহন করে। ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত রুপকল্প উপস্থাপন করা হয়।
ইশতেহার ঘোষণাকালে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্রমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে উন্নয়ন অগ্রগতির যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ও পথ রচনা করেছি সে পথ থেকে কোন অপশক্তি আমাদের বিচ্যুত করতে পারবেনা।
তিনি বলেন, আমরা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে জাতিকে উপহার দেব আমাদের ভিশন- নতুন প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প-২০৪১। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে মধ্যম আয়ের পর্যায় পেরিয়ে এক শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ, সুখী এবং উন্নত জনপদ। সুশাসন, জনগণের সক্ষমতা ও ক্ষমতায়ন হবে এই অগ্রযাত্রার মূলমন্ত্র। এর মধ্যেই সুপ্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত হবে তিনস্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা।
তিনি বিভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে শান্তি উন্নয়ন গণতন্ত্র ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যওয়ার আহবান জানিয়ে হত্যা সন্ত্রাস হানাহানি সংঘাত-রক্তপাতের চির অবসান ঘটিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনারবাংলা গড়ে তোলার আহবান জানান।