4623
Published on জুলাই 21, 2020১৯৭২ সালের ২১ জুলাই ছাত্রলীগের ৩ দিনব্যাপী সম্মেলন শুরুর দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তার বক্তৃতায় ছাত্রলীগের জন্ম ইতিহাস বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে বাংলার সংগ্রামের ইতিহাস অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ছাত্রলীগের মধ্যে ভাঙন ধরানোর চেষ্টা হয়েছিল। জনতার সঙ্গে একাত্মতা ও সংগ্রামী ঐতিহ্যের জন্য ছাত্রলীগের মৃত্যু ঘটেনি। অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগ থেকে বহুবার বহু নেতা দলত্যাগ করলেও এ সংগঠনের অপমৃত্যু হয়নি। কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন যে, নেতারা চলে গিয়েছিল কিন্তু নীতি যায়নি। নেতার মৃত্যু হতে পারে কিন্তু আদর্শ বজায় রাখলে সংগঠনের মৃত্যু হয় না। ১৯৭২ সালের ২১ জুলাই পত্রিকার খবরে এসব তথ্য জানানো হয়।
ছাত্রসমাজকে লক্ষ্য করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শোষণহীন সমাজ কায়েমের আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু বলেন, সংগ্রাম শেষ হয়নি। আরেক নতুন সংগ্রাম শুরু হয়েছে। সেটি হচ্ছে জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের ভিত্তিতে সমাজ ব্যবস্থা কায়েমের সংগ্রাম। জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু আরও বলেন, বাংলাকে নিয়ে আরেক নতুন খেলা শুরু হয়েছে। ছাত্রসমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেন, রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছো, রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে।
সম্মেলনে উপস্থিত বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত প্রতিনিধিরা রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা রক্ষার বলিষ্ঠ শপথ গ্রহণ করেন। হাজার হাজার ছাত্রের অবিরাম মুজিববাদ নিয়ে গগনবিদারী স্লোগান উচ্চারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়। লাল-সবুজ টুপি পরা শত শত ছাত্রছাত্রী আকর্ষণীয় কুচকাওয়াজ ছাড়াও সম্মেলনে যোগদানকারী প্রতিনিধিরা স্লোগান দেন ‘এবারের বিপ্লব, মুজিববাদের বিপ্লব’ ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘেরাও ও পরীক্ষায় নকলের তীব্র নিন্দা করে বঙ্গবন্ধু ছাত্রদের বেয়াদবি না করার উপদেশ দান এবং লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কেরানি সৃষ্টির শিক্ষা চাই না। তাই সমাজতান্ত্রিক দেশের উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থা প্রণয়নের উদ্দেশ্যে শিক্ষা কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিক্ষা কমিশনের ছাত্র প্রতিনিধি গ্রহণের দাবি প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ছাত্র প্রতিনিধিদের কমিশনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য পরামর্শ দেন।
বঙ্গবন্ধু বলেন, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্থহীন। আমরা ব্যক্তিস্বাধীনতায় বিশ্বাসী কিন্তু সমাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে কোনও আঘাত সহ্য করবো না। যারা গণতন্ত্র চান না তাদের উদ্দেশে বঙ্গবন্ধু বলেন, গণতন্ত্রের মাধ্যমে সমাজতন্ত্র কায়েমে বাধা-বিপত্তি আছে সত্য, কিন্তু যাদের জনসমর্থন রয়েছে তাদের জন্য কোনও বাধা নেই। আমরা শোষিতের গণতন্ত্র অর্থাৎ জনগণের গণতন্ত্রে বিশ্বাসী।
বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলার সংগ্রামের ইতিহাস ছাত্রলীগের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এক ও অভিন্ন ছাত্রলীগকে শৃঙ্খলাবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি। অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সম্মেলন শুরু হলে জাতীয় সংগীত ও ২১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর ছাত্রলীগ স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর অভিবাদন গ্রহণ করেন।
সূত্রঃ বাংলাট্রিবিউন