স্বাধীনতার ইশতেহার: মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিব

4119

Published on জুন 15, 2021
  • Details Image

১৯৭১ সালের ৩ মার্চ ঢাকার পল্টন ময়দানে আয়োজিত ছাত্র জনতার সমাবেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ‘স্বাধীনতার ইশতেহার’ ঘোষণা করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ।  এতে ‘বাংলাদেশ’ নামে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং এর তিনটি লক্ষ্য নির্দিষ্ট করা হয়। লক্ষ্য তিনটি হলো- বাঙালির ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতির পূর্ণ বিকাশ, বৈষম্যের নিরসন এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা। স্বাধীনতার ইশতেহারে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পূর্ণ রূপরেখা তুলে ধরা হয়। এবং সেই ইশতেহারেই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয় এই দেশের নাম হবে ‘বাংলাদেশ’। এর আগে, ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এর মৃত্যুবার্ষিকীতে পূর্বপাকিস্তান নাম বদলে ‘বাংলাদেশ’ নামকরণ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

এই ইশতেহারে বলা হয়েছে- ‘৫৪ হাজার ৫০৬ বর্গ মাইল বিস্তৃত ভৌগোলিক এলাকার সাত কোটি মানুষের জন্য আবাসভূমি হিসেবে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের নাম বাংলাদেশ।

তিনটি লক্ষ্য অর্জনের ঘোষণা: 

১. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে পৃথিবীর বুকে একটি বলিষ্ঠ বাঙালি জাতি সৃষ্টি ও বাঙালির ভাষা, সাহিত্য, কৃষ্টি, সংস্কৃতি বিকাশের ব্যবস্থা করতে হবে।

২. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে অঞ্চলে অঞ্চলে, ব্যক্তিতে ব্যক্তিতে বৈষম্য নিরসনকল্পে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতি চালু করে কৃষক শ্রমিক রাজনীতি কায়েম করতে হবে।

৩. স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন করে ব্যক্তি, বাক ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাসহ নির্ভেজাল গণতন্ত্র কায়েম করতে হবে।

একই সঙ্গে ওই সভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের সর্বাধিনায়ক হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটিকে জাতীয় সংগীত হিসেবে ব্যবহার করার কথাও বলা হয় এসময়। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ গঠন আন্দোলনের এই পর্যায়ে নিম্নলিখিত জয়ধ্বনি ব্যবহৃত হবে বলে উল্লেখ করা হয় সেদিনের জনসভায়- ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ, দীর্ঘজীবী হউক’; ‘স্বাধীন কর স্বাধীন কর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর’; ‘স্বাধীন বাংলার মহান নেতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব’; ‘গ্রামে গ্রামে দুর্গ গড়, মুক্তিবাহিনী গঠন কর’; ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর‘ ; ‘মুক্তি যদি পেতে চাও, বাঙালিরা এক হও’।

ইশতেহারটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে প্রচণ্ড করতালির মধ্যে প্রস্তাব গৃহীত হলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পল্টন ও পার্শ্ববর্তী এলাকা। ৩ মার্চের ওই জনসভাতেই পরবর্তী ৭ মার্চে রেসকোর্সের (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সেই ঐতিহাসিক জনসভা আয়োজনের ঘোষণা আসে, যেখান থেকে বাঙালি জাতির মহান পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।

স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য যেসব পন্থা গ্রহণের কথা বলা হয়:

১. বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম, মহল্লা, থানা, মহকুমা, শহর, জেলায় `স্বাধীনতা সংগ্রাম কমিটি’ গঠন করতে হবে।

২. সকল শ্রেণির জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা ও তাদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

৩. শ্রমিক এলাকায় শ্রমিক ও গ্রামাঞ্চলে কৃষকদের সুসংগঠিত করে গ্রামে গ্রামে, এলাকায় এলাকায় 'মুক্তিবাহিনী' গঠন করতে হবে।

৪. হিন্দু-মুসলমান ও বাঙালি-অবাঙালি সাম্প্রদায়িক মনোভাব পরিহার এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।

৫. স্বাধীনতা সংগ্রামকে সুশৃঙ্খলতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা এবং লুটতরাজসহ সকল প্রকার সমাজবিরোধী ও হিংসাত্মক কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত