খালেদা জিয়ার দুঃশাসন: পিএসসির বোর্ডে সব বিএনপি-জামায়াতের লোক, মোটা অর্থের বিনিময়ে বিসিএসে নিয়োগ!

2891

Published on নভেম্বর 28, 2022
  • Details Image

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার গঠনের পরপরই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে দলীয়করণ শুরু করে। এমনকি পিএসসি-এর মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকেও দুর্নীতির আঁখড়ায় পরিণত করে তারা। নগদ টাকার বিনিময়ে বিসিএস-এর প্রশ্নফাঁস ও পরীক্ষার খাতা জালিয়াতির মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য এবং দলীয় কর্মীদের অসৎ উপায়ে চাকরিতে নিয়োগ দিতে শুরু করে। ফলে মেধাবী শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হয় ন্যায্য চাকরি থেকে। ২৪-তম বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে। সীমাহীন দুর্নীতির কারণে ২৭-তম বিসিএস পরীক্ষার ভাইভার রেজাল্টও বাতিল ঘোষণা করতে বাধ্য হয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

২০০৭ সালের ২৭ জানুয়ারি সমকালের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে নথিপত্রসহ এসব দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে। জানা যায়, পিএসসির চেয়ারম্যানসহ ১০ সদস্যকে দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেয় খালেদা জিয়ার সরকার। এরপর তাদের মাধ্যমে নিয়োগবাণিজ্য এবং দলীয়করণ শুরু করে তারেক রহমানের হাওয়া ভবন চক্র। ২৫তম বিসিএস-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত পিএসসির সদস্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমানের আপন ভাই প্রশাসন ক্যাডারের মামুনুর রশিদ চাকরিপ্রার্থীদের সাথে পিএসসি সদস্যদের 'কন্ট্রাক্টম্যান' হিসেবে কাজ করতো। মামুন নিজে জোট সরকারের প্রতিমন্ত্রী লুৎফর রহমান খান আজাদের এপিএস হিসেবে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয় এবং এনজিও ব্যুরোতে কাজ করেছে। তার মাধ্যমেই বিএনপির হাই কমান্ড বিসিএসে পুলিশ ও প্রশাসনে নিজেদের লোক নিয়োগ করতো।

টাকার হিসাব বন্টনের জন্য তাই মামুন একটি ডায়রি ব্যবহার করতেন। কোন প্রার্থীর কাছ থেকে কতো নিতেন এবং পিএসসির কোন সদস্যকে কতো দিতেন, কোন প্রার্থীর জন্য কোন নেতার সুপারিশ, সেটার সব তথ্য লেখা থাকতো সেখানে। তার বড় ভাই পিএসসি সদস্য অধ্যাপক মাহফুজুর রহমান সাংবিধানিক এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থাকা অবস্থাতেই নীলফামারীর একটি আসনে বিএনপির হয়ে গণসংযোগ করতেন এবং নবম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন। পিএসসি চেয়ারম্যান জেডএন তাহমিদা বেগম ও প্রভাবশালী সদস্য মাহফুজ পর্দার অন্তরালে থেকে কাজ করতেন। সামনে থাকতো মামুন। 

সমকালের অনুসন্ধানে মামুনুর রশিদের সেই ডায়রি পাওয়া যায়। সেখানে প্রার্থীদের নাম, মোবাইল নম্বর, ক্যাডারের নাম, পাশে টাকার হিসাব লেখা। সেই তালিকা ধরে ফোন দেওয়ার পর প্রার্থীর পরিবার জানায়- তারা চাকরি পেয়েছেন এবং ট্রেনিংয়ে আছেন। তবে একজন চাকরি পাননি এমন তথ্যও জানা য্য়। তবে তাকে ২৭ তম বিসিএসে সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হয়। এসব তথ্যপ্রমাণসহ পিএসসি চেয়ারম্যান জেডএন তাহমিদা বেগমের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি ফোনে কথা বলতে অস্বীকার করেন। প্রসঙ্গত, এই পিএসসির চেয়ারম্যানের সাথে যোগসাজশ করে বিএনপিপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যা-এর মহাসচিব ডা. জাহিদ অবৈধভাবে কয়েকশ চিকিৎসকের নিয়োগ ও পদায়ন করেছিল, যা নিয়ে বাংলাদেশের চিকিৎসাঙ্গনে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল সেসময়। কিন্তু এরা হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠ লোক হওয়ার কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি এদের বিরুদ্ধে।

এদিকে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পরিচয় শোনার পর ভাইভা বোর্ড থেকে প্রার্থীকে বের করে দিতেন আরেক পিএসসি সদস্য সাবেক যুগ্ম সচিব মোজাম্মেল হক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চারটি প্রথম শ্রেণি পাওয়া ইয়াসমিন সুলতানাকে ২৭তম বিসিএসের ভাইভা বোর্ড থেকে বের করে দেন তিনি। ইয়াসমিন জানান, তার বাবা মুক্তিযোদ্ধা এই কথা শোনার পরেই তাকে বের করে দেওয়া হয়। এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত মোজাম্মেল হক বলেন, 'আমি যোগ্যতায় বিশ্বাসী। তবে পিএসসিতে চরম দুর্নীতিবাজ একটি চক্র রয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে লেখেন না কেন?' সেই দুর্নীতিবাজদের নাম জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, 'তারা অনেক প্রভাবশালী। নাম বললে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলবে তারা।'

২৭ তম বিসিএস বোর্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত আরেক সদস্য আশরাফুল ইসলাম চৌধুরী ব্যাপক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি পিএসসির একজন সহকারী পরিচালক ও নিজের পিও এর মাধ্যমে লেনদেন করতেন বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যাপকভাবে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে। তার রেফারেন্স দিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক প্রার্থী আগে থেকেই এএসপি হবে বলে এলাকায় বলে বেড়াতো, এবং সে হয়েছে। জনশ্রুতি আছে ২১ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে এই নিয়োগে।

২৫ ও ২৭ তম বিসিএস পরীক্ষার মাঝখানে ২৬তম বিসিএস ছিল শুধু শিক্ষা ক্যাডার। সেটির অধিকাংশ নিয়োগে গড়ে পাঁচ লাখ টাকা করে লেনদেন এবং বিএনপি-জামায়াত দলীয় ব্যক্তিদের স্বজনদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। লিখিত পরীক্ষায় মার্কশিট বদল করে নাম্বার বাড়িয়ে দেওয়া এবং ভাইভায় বেশি নাম্বার দেওয়ার মাধ্যমে এই দুর্নীতি করা হতো। এছাড়া তারেক রহমানের তালিকা ধরে শুধু বগুড়া ও আজিজুল হক কলেজ ছাত্রদল নেতাকর্মীদের মধ্য থেকে ২৫ জনের অধিক ব্যক্তিতে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ দেওয়ার মতো জঘন্য ও নিন্দনীয় ঘটনাও ঘটিয়েছে বিএনপি-জামায়াত আমলের পাবলিক সার্ভিস কমিশণ (পিএসসি)। দেশে এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনা এর আগে বা পরে আর কখনোই ঘটেনি। 

এমনকি পিএসসির মাধ্যমে রাতারাতি ৩০০ ছাত্রদল নেতাকে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়ে ভোট জালিয়াতি করার নীল নকশাও করেছিল খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান। তবে পরবর্তীকারে তত্ত্বাবধায়ক সরকাের ক্ষমতায় আসার পর তাদের এই অপপ্রয়াস নষ্ট হয়। এছাড়াও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার দাবির মুখে বিএনপি-জামায়াতের তৈরি করা ভোটার তালিকা যাচাই করে ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার শনাক্ত করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত