শেখ কামাল: চিরায়ত বাঙালি তারুণ্য ও আধুনিক নতুনপ্রজন্ম গড়ার স্বপ্নপথিক

2153

Published on আগস্ট 4, 2022
  • Details Image

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মতো একজন অবিসংবাদিত নেতা, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর জ্যেষ্ঠপুত্র হওয়ার পরেও খুব সাদাসিদে জীবনযাপনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শেখ কামাল ছিলেন খুবই জনপ্রিয়। এমনকি দেশের ক্রীড়াঙ্গন ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও দক্ষ-পরিশ্রমী সংগঠক ও সদালাপী তরুণ হিসেবে সবার মন জয় করেছিলেন তিনি। বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতার উত্তরাধিকার হয়েও খুব সহজিয়া জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন শেখ কামাল। অথচ তাকে নিয়ে কতো অপপ্রচারই না করেছে উগ্রবাম ও জঙ্গিবাদী গোষ্ঠী, যারা বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশকে নিয়ে সবসময় ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল।

শিল্প-সংস্কৃতির পরিবেশে বেড়ে ওঠা শেখ কামালের বন্ধু বাৎসল্য তার দেশপ্রেমের চাইতে কোনো অংশে কম ছিল না। তাই তিনি স্বাধীনতার সময় যেমন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন, তেমনি মহান বিজয় অর্জনের পর তরুণপ্রজন্মকে সংস্কৃতি ও ক্রীড়ামুখী করে তোলার প্রয়াস নিয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের জন্য পিতা মুজিব যখন এই বঙ্গভূমির তারুণ্যকে সংগঠিত করছিলেন, এমন এক সময়ে জন্ম পুত্র শেখ কামালের। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জনের পর সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে বাংলার দামাল তারুণ্যকে সময়ের উপযোগী করে তোলার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন তরুণ কামাল। পিতার মতোই অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয়েছে তাকেও। কিন্তু দমে যাননি এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। সামরিক বাহিনীর সুশৃঙ্খল প্রশিক্ষণ এবং বেসামরিক রাজনৈতিক জীবনের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতার মিশেলে এক অনন্য আধুনিক নেতৃত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল তিনি।

ভাষা আন্দোলনকালে বঙ্গবন্ধুপুত্র শেখ কামালের বেদনার্ত শৈশব:

বাংলা ভাষা ও বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য বঙ্গবন্ধু যেমন নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তেমনি বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরাও নীরবে-নিভৃতে অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন এই জাতির কল্যাণের জন্য। পিতৃস্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সন্তানেরা। ভাষা আন্দোলন নস্যাৎ করার জন্য দীর্ঘদিন তরুণ নেতা ও মূল সংগঠক শেখ মুজিবকে জেলে রাখে পাকিস্তানি জান্তারা। ফলে জন্মের পর দীর্ঘদিন পিতার কোলের উষ্ণতা থেকে বঞ্চিত হয়েই বেড়ে উঠতে দেখা বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্রকে। শিশু শেখ কামালের সঙ্গে পিতা মুজিবের এরকম একটি ঘটনা এখনো যেকোনো মানবিক মানুষের হৃদয়কে ভিজিয়ে দিয়ে যায়।

দেশ ভাগের পরের কথা। বাংলা ভাষা আন্দোলনের বৃহত্তর পটভূমি সৃষ্টির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে বিভিন্ন অজুহাতে তরুণ নেতা শেখ মুজিবকে জেলে নিতো পাকিস্তানিরা। ভাষা আন্দোলনের সূচনাপর্বে বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে, তখনও তাকে দীর্ঘমেয়াদে জেলে রাখা হয়। এরকম একটি সময়ে ১৯৪৯ সালে জন্ম হয় শেখ কামালের। কিন্তু এরপর ১৯৫২ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দুই দফায় মোট ৮৫০ দিন জেল খাটেন বঙ্গবন্ধু। ততদিনে একটু একটু করে বেড়ে উঠেছে শেখ কামাল, আলতো আলতো করে শিখেছে কথা বলতে। কিন্তু এই সময়টায় কখনোই তার সুযোগ হয়নি পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে কাছে থেকে দেখার।

ফলে দীর্ঘদিন পর জেল থেকে বাড়ি আসার পর আড়াই বছরের ছোট্ট কামাল তার বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে চিনতেই পারেনি। বাবাকে সে দূরে থেকে দেখে। সেসময় বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দীর্ঘদিন পর পিতাকে ফিরে পেয়ে বাবা বাবা বলে ডেকে গলা জড়িয়ে ধরে থাকে। ছোট্ট কামাল তা অবাক হয়ে দেখতে থাকে। সে দেখতো যে- বড় বোন শেখ হাসিনা (তার হাঁসু আপা) বঙ্গবন্ধুকে বাবা বলে ডাকছে। তাই সে বোনের কাছে আবদার করে বলতো- 'হাচু আপা, হাচু আপা, তোমার বাবাকে আমি একটু বাবা ডাকি!'

এরপর হতবিহ্বল হয়ে শিশু-পুত্র শেখ কামালকে কোলে নিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাঙালির বলিষ্ঠ পুরুষ শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার 'মুজিব আমার পিতা' গ্রন্থে উঠে এসেছে পিতা বঙ্গবন্ধুকে দেখার পর শিশু পুত্র শেখ কামালের এই মর্মস্পর্শী ঘটনা।

বঙ্গবন্ধু পরিবারের সংগ্রামী জীবন ও শেখ কামালের বেড়ে ওঠা:

দেশভাগের আগেই কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রসংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন বঙ্গবন্ধু। দেশভাগের আগে অখণ্ড বাংলার শেষ প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দীর ঘনিষ্ঠ ও স্নেহধন্য ছাত্রনেতা হিসেবে নিজেকে অধিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। কিন্তু ১৯৪৭-এ দেশভাগের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আইন বিভাগে ভর্তি হন তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান। পাকিস্তানিদের আগ্রাসন থেকে বাঙালির ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার জন্য ভাষা আন্দোলনের পটভূমি রচিত হয় তার হাত ধরেই। ফলে জান্তাদের রোষানলে পড়ে জেল-জুলুমের শিকার হন তিনি। কিন্তু বাংলার গণমানুষের কাছে ততদিনে আস্থাভাজন নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান তিনি।

১৯৫৪ সালে যুক্টফ্রন্টের নির্বাচন আওয়ামী লীগের মুখপাত্রে পরিণত করে শেখ মুজিবুর রহমানকে। ফলে তরুণ বয়সেই মন্ত্রিত্ব লাভ করেন তিনি, কিন্ত পাকিস্তানিরা ষড়যন্ত্র করে সেই মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়। এরপর ১৯৫৬ সালেও আওয়ামী লীগ যখন আবার প্রাদেশিক সরকার গঠন করে, তখনও মন্ত্রিস্ব লাভ করেন বঙ্গবন্ধু। অন্যরা যখন দলের পদ ছেড়ে দিয়ে মন্ত্রিত্ব রাখতে সচেষ্ট হন, তখন দলের সাধারণ সম্পাদক পদে থেকে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেন তিনি। দুইবার মন্ত্রী হওয়ার পরেও নিজ পরিবারকে নিয়ে নিরাপদে মাথা গোঁজার মতো একটা বাসস্থান ছিল না বঙ্গবন্ধুর। পরবর্তীতে ১৯৫৮ সালে বঙ্গবন্ধুকে আবারো জেলে নেয় স্বৈরাচার আইয়ুব সরকার। তখন সন্তানদের নিয়ে থাকার জন্য যে বাড়িই ভাড়া নেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেচ্ছা, সেখান থেকেই তাদের কৌশলে বের করে দেয় পাকিস্তানি জান্তাদের গোয়েন্দারা। কোনো বাড়িঅলাও বাড়ি ভাড়া দিতে ভয় পেত। তাই ১৯৬০ সালে বঙ্গবন্ধু জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর বঙ্গমাতার অনুরোধে হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ঋণ নিয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িটি নির্মাণের কাজ শুরু করেন।

১৯৬১ সালে ১ অক্টোবর থেকে অর্ধনির্মিত বাড়িতেই থাকতে শুরু করে বঙ্গবন্ধুর পরিবার। একতলা বাড়িটিতে তখন বেডরুম ছিল মাত্র দুটো। একরুমে থাকতেন বঙ্গবন্ধু ও বেগম মুজিব। অন্য রুমে থাকতেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পাশে ছিল আরেকটি রুম, সেটি রান্নাঘর হিসেবে ব্যবহৃত হতো। সেই রুমেরই একপাশে থাকতেন বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্র শেখ কামাল ও শেখ জামাল। ধানমন্ডির ওই এলাকা তখন এতো লোকারণ্য ছিল না। তাখন মাত্র দুটি বাড়ি ছিল সেখানে, রাতে শেয়াল ডাকতো, এমন ছিল এলাকাটি। এরকম একটি জায়গাতেও রুম ভাগাভাগি করে থাকতে হয়েছে তৎকালীন সময়ে দুইবারের মন্ত্রী ও পূর্ব বাংলার সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তানদের। সেই বাড়ি নির্মাণের ঋণ বঙ্গবন্ধু পরিবার শোধ করেছে ২১ বছর ধরে। কিন্তু সন্তানদের শিক্ষার ব্যাপারে খুব সজাগ ছিলেন বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেচ্ছা।

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতার কঠোর অনুশাসনের মধ্যে সফলভাবে শাহীন স্কুল ও ঢাকা কলেজের গণ্ডি অতিক্রম করে ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন শেখ কামাল। প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন গণআন্দোলনের সঙ্গে। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে আপামর বাঙালি যখন মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে, তখন শেখ কামালও চলে যান রণাঙ্গণে। পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধ শেষে তিনি স্নাতক সম্পন্ন করেন। এবং স্বাধীন দেশে সুস্থ সংস্কৃতি ও ক্রীড়া চর্চার পথিকৃৎ হিসেবে অদম্য স্পৃহা নিয়ে সুন্দর তারুণ্যে সমৃদ্ধ নতুন সমাজ গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন।

মহান মুক্তিযুদ্ধে শেখ কামালের সক্রিয় অংশগ্রহণ:

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতা ঘোষণার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে পাকিস্তানিরা। গ্রেফতার হওয়ার আগে আগে জামাতা ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে দুই কন্যাকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠিয়ে দেন পাঠিয়ে দেন বঙ্গবন্ধু। এসময় শেখ কামালও ৩২ নম্বর রোডের বাড়ি ছেড়ে এক বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নেন। ১ এপ্রিল খিলগাঁওয়ের আরেকটি বাড়িতে ওঠেন বেগম ফজিলাতুন্নেচ্ছা মুজিব, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ জামাল, শেখ রাসেল ও ড. ওয়াজেদ। ওই বাড়িতে থাকার সময়ই ৪ এপ্রিল গোপনে শেখ কামাল এসে তার মাকে জড়িয়ে ধরেন বলেন, 'মা আমি আজ রাতে ঢাকা ছেড়ে চলে যাচ্ছি। তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য দোয়া করো।' পাকিস্তানি বাহিনী এই তথ্য পাওয়ায় পরেরদিনই ওই বাসা থেকে চলে যেতে বলা হয় বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে।

এরপর মগবাজারের দিকে আরেকটি বাসায় গিয়ে ওঠেন সবাই। কিন্তু ১২ এপ্রিল পাকিস্তানি সেনারা বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যদের আটক করে ধানমন্ডি ১৮ নম্বর সড়কের ২৬ নম্বর বাড়িতে নিয়ে গিয়ে গৃহবন্দি করে রাখে। ওই বাড়িতে কোনো ফ্যান এবং আববাবপত্র পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। ফলে বঙ্গবন্ধুর অন্তঃসত্ত্বা কন্যা শেখ হাসিনাসহ সবাইকে বন্দিদশাকালে মেঝেতে ঘুমাতে হয়েছে। পরবর্তীতে ৫ আগস্ট পাকিস্তানি সৈন্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন শেখ জামাল।

এপ্রিলের শুরুতেই সীমান্ত অতিক্রম করে মুক্তিযুদ্ধের প্রশিক্ষণ নেন শেখ কামাল। কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ অস্থায়ী সরকার কর্তৃক বাংলাদেশের প্রথম অফিসার ওয়ার কোর্সের অধীনে যে ৬১ জন প্রথম কমিশনড লাভ করেন, শেখ কামাল তাদের একজন। অক্টোবর মাসে লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন্ড পাওয়ার পর তিনি সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেন। এরপর বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার লেফটেন্যান্ট কামালকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের সেনাপতি জেনারেল এমএজি ওসমানীর এডিসি নিযুক্ত করে। তিনি প্রধান সেনাপতির এডিসি হিসাবে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংগঠিত করেছেন। গেরিলা বাহিনীর সংগঠনে ও তাদের প্রশিক্ষণে অসামান্য অবদান রেখেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা শেখ জামালকে সাথে নিয়ে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল। ১৯ ডিসেম্বর বিজয়ীর বেশে ধানমন্ডির বাড়িতে পরিবারের সাথে মিলিত হন বঙ্গবন্ধুর দুই পুত্র।

স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি পুনর্গঠনে অনবদ্য ভূমিকা:

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর সকল মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের ২ বছরের সিনিয়রিটি দেওয়ার কারণে শেখ কামালকেও ক্যাপ্টেন হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়। তবে বেশিদিন আর সেনাবাহিনীতে না থেকে আবারো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যান বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামাল। নিজের স্নাতক সম্পন্ন করেন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের একজন সংগঠক হিসেবে যে অভিজ্ঞতা তিনি অর্জন করেছেন, তা বেসামরিক জীবনে কাজে লাগানোর বহুমুখী উদ্যোগ নেন। তিনি খেয়াল করলেন ৭১-এর পরাজিত শক্তিরা এক জোট হয়ে ছাত্র-যুবকদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। সেই অবস্থা থেকে তরুণদের ফিরিয়ে আনতে তিনি খেলাধুলার দিকে নজর দিলেন।

১৯৭২ সালে 'আবাহনী ক্রীড়া চক্র' প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দেশে আধুনিক ফুটবলের উন্মেষ ঘটান তিনি। তিনি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাস্কেট দলের খেলোয়ার ছিলেন, এছাড়াও ফুটবল খেলেছেন আজাদ স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে। এমনকি ছায়ানটে নিয়মিত সেতার বাজানো শিখতেন এবং একাধিক নাটকে অভিনয় করেছেন। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা করতেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকিও বাংলাদেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। সুলতানা ছিলেন বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে লং জাম্প ও ১০০ মিটার স্প্রিন্টে রুপা ও ব্রোঞ্জ পদক জয়ী প্রথম অ্যাথলেট। তিনি ছিলেন স্প্রিন্ট আর লং জাম্পে ন্যাশনাল রেকর্ডধারী

১৯৭৫ সালের ১৪ জুলাই বিয়ে করেছিলেন বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গণের শ্রেষ্ঠ সংগঠক শেখ কামাল এবং দেশের শ্রেষ্ঠ নারী ক্রীড়াবিদ সুলতানা (খুকি)। কিন্তু হাতের মেহেদি শুকানোর আগেই ঘাতকদের বুলেটে রক্তস্নাত হয়ে অকালে প্রাণ হারান তারা। বিয়ের মাত্র এক মাসের মাথায়, ১৫ আগস্ট ভোর রাতে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার জন্য দেশদ্রোহী ঘাতকদল যখন ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডের বাড়ি ঘিরে ফেলে অতর্কিত গুলি চালাতে থাকে। তখন ওপর থেকে নেমে আসেন শেখ কামাল। নিচতলার অভ্যর্থনা কক্ষে পৌঁছামাত্র প্রথমেই তাকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করে ঘাতকরা। এরপর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের সবাইকে এক এক করে হত্যা করে তারা। এমনকি কোনো নারী ও শিশুর প্রাণকেও রেহাই দেয়নি নরপিশাচরা। পরবর্তী সময় বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে এই খুনি উগ্রবাদীরা যেভাবে দীর্ঘ ২১ বছর ধরে বিভিন্ন মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়েছে, ঠিক তেমনিভাবেই ইতিহাস থেকে শেখ কামালের অবদানগুলো আড়াল করে তাকে কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করেছে। তবে মাত্র ২৬ বছরের স্বল্প জীবনে শেখ কামাল রাজনীতি, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে অবদান রেখে গেছেন, তা চিরকাল তারুণ্যের অনুপ্রেরণা এবং স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত