স্বাধীনতার চেতনাকে ধারন করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

11414

Published on মার্চ 25, 2018
  • Details Image

 প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের উপলক্ষে আজ এক বাণীতে এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। এ অর্জনকে অর্থপূর্ণ করতে সবাইকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে হবে। স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করতে হবে, প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে পৌঁছে দিতে হবে।
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে তিনি দেশবাসী এবং প্রবাসী বাঙালিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ২৬ মার্চ ‘আমাদের জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন। পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার দিন।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে উল্লেখ করেন,স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে ‘আমি গভীর শ্রদ্ধা জানাই বাঙালি জাতির মুক্তি সংগ্রামের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে আমরা অর্জন করেছি প্রিয় স্বাধীনতা। আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশলাখ শহিদ এবং দু’লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে, যাঁদের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে কাক্সিক্ষত বিজয়। শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় চার নেতাকে, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সম্মান জানাই যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাসহ সকল মুক্তিযোদ্ধাকে। যাঁরা স্বজন হারিয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন তাঁদের প্রতি জানাচ্ছি গভীর সমবেদনা। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সকল বন্ধুরাষ্ট্র, সংগঠন ও ব্যক্তির প্রতি, যাঁরা আমাদের মুক্তিযুদ্ধে অকৃপণ সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন,বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি জাতি দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকদের নিপীড়ন এবং বঞ্চনার বিরুদ্ধে লড়াই করে। তারা বাধ্য হয় ১৯৭০ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের। নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে উল্টো নিবর্তনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা করেন, এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। তিনি (বঙ্গবন্ধু) বাঙালি জাতিকে শত্রুর মোকাবিলা করার নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানি হানাদারবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে অতর্কিতে নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। ঢাকাসহ দেশের শহরগুলোতে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই ঘোষণা টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টার ও তৎকালীন ইপিআর’র ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও এই ঘোষণা প্রচারিত হয়। জাতির পিতার নির্দেশে পরিচালিত ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। গত ৯ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ‘রোল মডেল’। সারাবিশ্ব আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে। ২০২১ সালের আগেই আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব, ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ ইউনেস্কো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোর অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় আজ সমগ্র দেশ ও জাতি গর্বিত।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সপরিবারে জাতির পিতা হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করেছি। একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে আমাদের সরকার ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করছে। সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ বন্ধ করেছি। স্বাধীনতাবিরোধী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এবং উন্নয়ন ও গণতন্ত্রবিরোধীদের যে কোনো অপতৎপরতা ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলা করার জন্য আজকের এদিনে আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘আসুন, সকল ভেদাভেদ ভুলে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দেশের উন্নয়ন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাই। সবাই মিলে জাতির পিতার অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি। আজকের এ ঐতিহাসিক দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।’

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত