আওয়ামী লীগের সরকার পরিচালনা ১৯৫৬-৫৮

6715

Published on জুলাই 4, 2020
  • Details Image

মুনতাসীর মামুনঃ

১৯৫৬ থেকে ১৯৫৮ প্রায় দু-বছর পুর্ব বাংলায় সরকার পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছিলো আওয়ামী লীগ। এ সময়ের কিছু কাজের বিবরণ পাই আতাউর রহমান খানের আত্মজীবনী ‘ওজারতির দুই বছর’-এ। তাও অতি সংক্ষিপ্ত তালিকা মাত্র। ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আত্মজীবনীতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাজের একটি বিবরণ পাই। বিভিন্ন তথ্য, সংবাদপত্রের বিবরণ থেকে আমি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত যুক্তফ্রন্ট সরকারের কিছু কাজের বিবরণ দেব।

১. রাজবন্দিদের মুক্তি। এ বিষয়টি সবাই উল্লেখ করেছেন এবং প্রশংসা করেছেন। আতাউর রহমান খান ও অন্যান্য মন্ত্রী জেলে গিয়ে রাজবন্দিদের মুক্তি দেন ও অভ্যর্থনা জানান। ১৯৪৭ থেকে এ পর্যন্ত এ-রকম ঘটনা এদেশে ঘটেনি।

২. ৯২(ক) বা কালাকানুন প্রত্যাহার। এটিও প্রশংসিত।

৩. দুর্ভিক্ষ নিবারণ। সময় লেখেছিল কিন্তু নিবারিত হয়েছিল। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরিপুর গ্রামে গিয়েছিলেন ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি এসেছেন খবর পেয়ে ‘৩ হাজার কঙ্কালসার ব্যক্তি’ সমবেত হয়েছিল। “বিদেশ হইতে খাদ্যদ্রব্য আনাইয়া, বহু জায়গায় লঙ্গরখানা খুলিয়া ও নির্দিষ্ট মূল্যে খাদ্যদ্রব্য বিক্রয় করিবার ব্যবস্থা করিয়া দেশকে কঠিন দুর্ভিক্ষের হাত হইতে রক্ষা করিতে সমর্থ হইয়াছিলাম। এই উপলক্ষে কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী মরহুম শহীদ সোহরাওয়ার্দী খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহের ব্যাপারে যে চেষ্টা ও উদ্যম দেখাইয়াছিলেন তাহা স্মরণযোগ্য। তাঁহার চেষ্টার জন্যই এই কঠিন দুর্ভিক্ষকে প্রতিরোধ করা সম্ভব হইয়াছিল।” [বিস্তারিত ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, আত্মকথা] ধীরেন্দ্রনাথ লিখেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে লঙ্গরখানা খুলে প্রায় পাঁচ হাজার লোককে ৩/৪ মাস খাওয়ানো হয়েছিল। এ-সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানা যায় বঙ্গবন্ধুর এক বিবৃতি। মুসলিম লীগের যুগ্ম সম্পাদক মানজারে আলম এক বিবৃতি জানান, দুর্ভিক্ষপীড়িতদের মানুষদের খাদ্য দানের জন্য লঙ্গরখানাসমূহ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে। যারা যুক্ত নির্বাচন-বিরোধী তাদের লঙ্গরখানা থেকে খাদ্য দেওয়া হয় না। শেখ মুজিব বিবৃতিতে তা অস্বীকার করে জানান।

“১. বর্তমান পূর্ব পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক সহস্র লঙ্গরখানা পরিচালিত হইতেছে। সকল মত ও পথের অনুসারীদের সমন্বয়ে বর্তমান সরকার কর্তৃক পুনর্গঠিত খাদ্য ও সাহায্যদান কমিটি প্রত্যেক ইউনিয়নে সরকারী কর্মচারীদের তত্ত্বাবধানে এই সকল লঙ্গরখানা পরিচালন করিতেছে।

২. সরকার প্রত্যহ প্রত্যেক লঙ্গরখানায় বিনামূল্যে দুই মণ হইতে তদূর্ধ্বে চাউল সরবরাহ করিতেছেন।

৩. স্থানীয়ভাবে স্বেচ্ছাপ্রদত্ত চাঁদা উঠাইয়া লঙ্গরখানা পরিচালনের ব্যাপারে আকস্মিক ব্যয় নির্বাহ করা হয়।

৪. যে সকল স্থানে স্বেচ্ছাপ্রদত্ত চাঁদা পাওয়া যায় না, সেই সকল স্থানে সরকার এই সকল আকস্মিক ব্যয় নির্বাহ করিয়া থাকেন। এই উদ্দেশ্যে সরকার এ পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকা প্রদান করিয়াছেন।” [বিস্তারিত, ইত্তেফাক, ০৯.১১.১৯৫৬]

তিনি আরও জানান, মুসলিম লীগ যুক্তি দিয়েছিল, লঙ্গরখানা খুললে পরিচ্ছন্নতা নষ্ট হয়। ধীরেন্দ্রনাথ জানিয়েছেন, দুর্ভিক্ষ নিবারণে যুক্তরাষ্ট্র যথেষ্ট সাহায্য করেছিল।

৪. প্রত্যেক জেলা মহকুমার হাসপাতাল মেরামতের জন্য বছরে ৪ লাখ বরাদ্দ ছিল। চার বছর যাবত তা খরচ হয়নি। সেই টাকা দিয়ে ১৯৫৭ সালে প্রত্যেক জেলা মহকুমার হাসপাতাল ব্যাপকভাবে মেরামত কাজ হয় ও ‘সর্বত্র হাসপাতালের চেহারা পরিবর্তিত হইয়া যায়।’

৫. ঢাকা মেডিকেল কলেজের নতুন বাড়ি, নার্সেস কোয়ার্টার ও ছাত্রাবাস নির্মাণ শুরু হয়।

৬. চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ চালু।

৭. রাজশাহী মেডিকেল কলেজ চালু।

৮. রাজশাহীর সাঁওতাল অধ্যুষিত গ্রাম, টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর, কুমিল্লার চিয়াড়া ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে হাসপাতাল স্থাপন।

৯. টীকা বীজ তৈরি শুরু হয় এবং সেখানে একটি শিক্ষাকেন্দ্র চালু।

১০. জেলা বোর্ডের হাসপাতালসমূহ সরকারি কর্তৃত্বাধীনে আনার প্রচেষ্টা। অনেকগুলি হাসপাতাল আনা সম্ভব হয়েছিল এবং তাতে সেবার মান বৃদ্ধি পেয়েছিল।

১১. এক বছরের মধ্যে ৩ হাজার টিউবওয়েল স্থাপন, যার ফলে গ্রামবাসী সুপেয় জল পেয়েছিল।

১২. পরিকল্পনা পরিষদ বা প্ল্যানিং বোর্ড

পরিকল্পনা ও উন্নয়নের জন্য একটি প্লানিং বোর্ড গঠন করা হয়। অর্থনীতিবিদদেরও এর সদস্য করা হয়। প্রধানমন্ত্রী ছিলেন বোর্ডের চেয়ারম্যান। এর জন্য তিন বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা (১৯৫৭-১৯৬০) নেওয়া হয়। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল সাড়ে ৩০০ কোটি টাকা। আগের দুই বছর বরাদ্দ হয়েছিল ১৯ কোটি টাকা। বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে কৃষি উন্নয়নে ১১ কোটি, পানি ও বিদ্যুৎ উৎপাদনে ১৯ কোটি, শিল্পে ২ কোটি, সড়ক নির্মাণ ৪ কোটি, শিক্ষা উন্নয়ন সাড়ে ৪ কোটি, স্বাস্থ্যোন্নয়নে ২.৫০ কোটি, গৃহ নির্মাণ ও পুনর্বাসনে ৫.৫০ কোটি টাকা।

১৩. কৃষি উন্নয়ন

এর জন্য দু-ধরনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এক. পতিত জমি উদ্ধার। দুই. বৈজ্ঞানিক প্রণালিতে চাষ। জমির খসড়া হিসেবে জানা গেল প্রায় ২৬ লাখ একর জমি পতিত, যার অধিকাংশ হাওর ও বিল, পানি নিষ্কাষণটা যেখানে জরুরি। এ কারণে–
(১) ১১০০ পাওয়ার পাম্পের বন্দোবস্ত করা হলো, যা আগে কখনও করা হয়নি
(২) উত্তরাঞ্চলে গভীর নলকূপ বসানো হলো, যা প্রথম
(৩) হাওর এলাকায় পাওয়ার পাম্প কাজের জন্য ৩০টি লোহার নৌকা নির্মাণ। এটিও আগে কখনও হয়নি
(৪) ছোট-বড় প্রায় ৩ হাজার খাল কাটা। এর ফলে ১৫ লাখ একর জমিতে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪৩ লাখ মণ চাল
(৫) এক বছরে ধানের জন্য ৪০ হাজার, ডাল ও সরিষার জন্য ১১ হাজার মণ বীজ সরবরাহ। বিদেশ থেকে ২ হাজার পাউন্ড ও ১২ লাখ মণ আলুর বীজ আমদানি করে সরবরাহ
(৬) আগে আট বছরে সাড়ে ১০ লাখ মণ সার বিলি করা হয়েছিল। এ সরকার প্রথম বছর সোয়া ১৫ লাখ, পরের বছর প্রায় দ্বিগুণ সার সংগ্রহ করে। এবং মূল দামের এক-তৃতীয়াংশ দামে তা কৃষকদের সরবরাহ করা হয়। এর ফলে ফসল উৎপাদন ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়
(৭) পোকার কারণে উৎপাদিত ফসলের ১০ শতাংশ নষ্ট হতো। এটি হ্রাসের জন্য প্রথম বছর ৩০ হাজার জমিতে ঔষধ ছিটানো হয়
(৮) ফল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১৯৫৭ সালে বিলি করা হয় ২৫ হাজার কলা ও ১ লাখ আনারসের চারা। সিলেট ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ২০০ একর করে দুটি ফলের বাগান সৃষ্টি। ফল উন্নয়নের জন্য ফ্রুট ডেভলেপমেন্ট বোর্ড গঠন
(৯) রংপুর ও শেরপুরে কৃষি শিক্ষার জন্য দুটি স্কুল; আর ৫টি বিদ্যালয়ে ধান/চাল গবেষণার জন্য গবেষণাগার স্থাপন।

১৪. পশু চিকিৎসা

ময়মনসিংহে পশু চিকিৎসার জন্য ভেটেরনারি কলেজ স্থাপন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা।

১৫. প্রাথমিক শিক্ষা

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকদের বেতন ছিল সামান্য। অনেকের বেতন ছিল বাকি। স্কুল বোর্ড সব ভেঙে প্রাথমিক স্কুল সরকারি নিয়ন্ত্রণে এনে শিক্ষকদের বাকি বেতন শোধ ও বেতন বৃদ্ধি।

১৬. উচ্চ শিক্ষা

শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন। পাঁচশালা পরিকল্পনায় ১ হাজার জুনিয়র হাই স্কুল, ৫০০ হাই স্কুল, ৬ হাজার প্রাইমারি স্কুল, ৪০টি কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ উন্নয়নের ব্যবস্থা। ৭৫ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয় এসব প্রতিষ্ঠান সংস্কারে।

১৭. ইডেন গার্লস কলেজ

ঐতিহ্যবাহী এই কলেজের জন্য নতুন ইমারত, ছাত্রীনিবাস ও বিজ্ঞান বিভাগ খোলার জন্য ৪৯ লাখ টাকা মঞ্জুর। ঢাকা কলেজের জন্যও দোতলা ছাত্রনিবাস নির্মাণ সম্পন্ন।

১৮. জুট মার্কেটিং কর্পোরেশন

আওয়ামী লীগ গঠনের পর থেকে পাট নিয়ে সব সময় আলোচনা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর খুব কম বক্তৃতা আছে যেখানে পাট নিয়ে আলোচনা নেই। পাটের বাজারে স্থিতিশীলতা ছিল না। স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে জুট মার্কেটিং কর্পোরেশন স্থাপিত হয়। এর প্রধান কাজ ছিল নির্দিষ্ট মূল্যে পাট কিনে পাটের চোরাচালান বন্ধ করা। পাট চাষিরা যেন ন্যায্যমূল্য পান এটি ছিল আওয়ামী লীগের দাবি। এই সংস্থা গঠন ছিল এর প্রথম পদক্ষেপ।

১৯. অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থা

পূর্ব পাকিস্তানের অভ্যন্তরে নৌ চলাচলের সুবন্দোবস্ত ছিল না। শৃঙ্খলাপূর্ণ ও সুব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষে ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটি বা আইডব্লিউটিএ গড়ে তোলা হয়।

২০. বিদ্যুৎ ও বাঁধের পরিকল্পনা

পাকিস্তান হওয়ার পর ৩টি বড় পরিকল্পনা গৃহীত হয়– কর্ণফুলি বিদ্যুৎ পরিকল্পনা, গঙ্গা-কপোতাক্ষ বাঁধ ও তিস্তা বাঁধ। এসব পরিকল্পনার কাজ চলছিল খুব শ্লথ গতিতে কারণ, বিদেশি সাহায্য নির্ভরতা। আতাউর রহমান সরকার এতে গতি আনেন।

কর্ণফুলি বিদ্যুৎ পরিকল্পনায় ছিল, নিম্নভূমির ৫০০ বর্গমাইল এলাকা বন্যাকবল থেকে রক্ষা করা ও পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৩০০ মাইল নদীপথ সুগম করা। এই পরিকল্পনা সমাপ্ত হলে কুমিল্লা, যশোর ও খুলনায় শুষ্ককালে পানি সরবরাহ বাড়বে, ফলে শস্য উৎপাদন ২ থেকে ৩ গুণ বাড়বে। ফসলের পরিমাণ হবে প্রায় ১৫ লাখ টন।

তিস্তা বাঁধের পরিকল্পনায় ছিল ১০ কোটি টাকা। পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত ছিল তিস্তার ওপর বাঁধ ও ১৩০০ মাইল নদীর শাখা-প্রশাখাসহ ৩০ মাইল দীর্ঘ খাল। এর ফলে দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়ায় অতিরিক্ত ৩ লাখ মণ শস্য ও ১০ হাজার কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে বলে আশা করা হয়েছিল।

এগুলো ছিল দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অন্তর্গত। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অন্তর্গত ছিল–
(১) গোমতী নদী খনন
(২) রংপুরে যুমনা নদীর দক্ষিণ পারে বাঁধ
(৩) হবিগঞ্জে বন্যা প্রতিরোধ বাঁধ
(৪) ফরিদপুরে বড় নদীগুলো নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন
(৫) গাইবান্ধা-কুড়িগ্রাম প্রতিরক্ষা বাঁধ
(৬) নারায়ণগঞ্জ থেকে চালনা পর্যন্ত নৌ চলাচলের পথ উন্নয়ন।
এগুলোর কাজ প্রায় ক্ষেত্রে শেষ হয়েছিল।

২১. বনসম্পদের উন্নয়ন

বনজ সম্পদ আহরণ করা যেতে পারে এবং তা দিয়ে শিল্প গড়ে উঠতে পারে, রাজস্ব বৃদ্ধি পেতে পারে ১৯৫৬ সালের আগে কোনো সরকার তা চিন্তা করেনি। যেমন, কাসালং-এ ৭০০ বর্গমাইল থেকে কখনও কাঠ কাটা হয়নি। এ জন্য ব্যাপক কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়। বনভূমি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুটি সার্কেল করা হয় এবং তার ওপর চিফ কনজারভেটর অব ফরেস্ট পদ তৈরি হয়। বনবিভাগের উন্নতি ও বনসম্পদ দিয়ে শিল্পোন্নয়ন (২২ রকমের)-এর জন্য গঠিত হয় ফরেস্ট ইন্ডাস্ট্রিজ ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।

২২. রমনা গ্রিন

এসব কর্মসূচির পরম্পরায় ঠিক হয় ঢাকায় একটি বোটানিক্যাল গার্ডেন গড়ে তোলা হবে। ২০ লাখ টাকা নিয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় এবং সৃষ্টি হয় রমনা গ্রিন-এর, যা আমাদের কাছে আজ পরিচিত রমনা পার্ক নামে।

২৩. শিল্পোন্নয়ন ও বাণিজ্য

শিল্পোন্নয়ন ও বাণিজ্যের সুবিধার জন্য কেন্দ্রে বাণিজ্যমন্ত্রী আবুল মনসুর আহমদ ও প্রদেশে শেখ মুজিবুর রহমান নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। এবং বেশ কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে আবুল মনসুর ১৯৫৬ সালের নভেম্বরে উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন আহ্বান করেন। সেখানে কয়েকটি সিদ্ধান্ত হয় ও কার্যকর হয়–
(১) পূর্ব পাকিস্তানে আলদা আমদানি-রপ্তানির কন্ট্রোলার নিয়োগ
(২) আলাদা লাইসেন্স বোর্ড গঠন
(৩) ‘সেলিং কমিটি ও বিদেশি মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ কমিটি’তে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধি নিয়োগ
(৪) আমদানিকারকদের শ্রেণি বিভাগ তালিকা সংশোধন
এগুলো ছিল আগে কেন্দ্রের অধীন। এরপর এটি চলে আসে প্রদেশের হাতে, ফলে শিল্প স্থাপন ও ব্যবস্থার ভিত্তি তৈরি হয়। আতাউর রহমান খান জানিয়েছেন– “মাঝারি ধরনের প্রায় ষাটটি নতুন শিল্পের মঞ্জুরী ও লাইসেন্স দেওয়া হয়। বিদেশী মুদ্রা অর্জন ও সঞ্চয়, দেশী কাঁচামালের ব্যবহার আর এই প্রদেশের চাহিদামাফিক দ্রব্য উৎপাদন করাই ছিল এইসব নতুন শিল্প-প্রতিষ্ঠার উৎস।”

২৪. লবণ শিল্প

এখন হয়তো অনেকের অবাক লাগতে পারে যে, লবণ নিয়ে একজন মন্ত্রী সে-সময় নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এ প্রদেশে এক সময় ১৬ টাকায় এক সের লবণ বিক্রি হয়েছে, কারণ এর ওপর কর্তৃত্ব ছিল পশ্চিম পাকিস্তান বা কেন্দ্রের। তখন চাহিদা ছিল বছরে ১ কোটি টন, উৎপাদিত হতো ৫০ লাখ। এ জন্য লবণ শিল্প প্রতিষ্ঠা ও উন্নয়নের জন্য আলাদা দপ্তর ও মন্ত্রী নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে, লবণ পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয়।

২৫. ফেঞ্চুগঞ্জ গ্যাস

ব্রিটিশ আমলে পূর্ব পাকিস্তানের খনিজের কিছু জরিপ হয়েছিল। সুপারিশও ছিল কিন্তু কোনো কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। আতাউর রহমান লিখেছেন, ক্ষমতা পেয়েই তিনি ব্যবস্থা নেন। সিলেটে গ্যাস উত্তোলনের জন্য ফেঞ্চুগঞ্জে কাজ শুরু করেন। ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরির উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়।

২৬. অন্যান্য খনিজ

পিট কয়লা, গারো পাহাড়ে পাথর ইত্যাদি কাজে লাগাবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হয়। গারো পাহাড়ের পাথর দিয়ে প্রচুর পূর্ত কাজ করা হয় বা ঐ প্রথম এই পাথর পূর্ত কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে।

২৭. ঢাকা-আরিচা সড়ক

১৯ শতক থেকেই জনগণের আশা ছিল ঢাকা-আরিচা একটি সড়ক হবে। আতাউর রহমান খান লিখেছেন, “যখন পাঠশালায় পড়ি তখন গ্রাম্য মুরুব্বীরা ও পাঠশালার মাস্টার সাহেবরা গ্রামাঞ্চলে ঘুরে ঘুরে দস্তখত ও টিপ নিবার জন্য আমাদের পাঠায়ে দিতেন। ঐসব দস্তখত টিপসহ দরখাস্ত দেওয়া হত কর্তৃপক্ষের বরাবরে ঢাকা-আরিচা পাকা রাস্তা করার জন্য কিন্তু হয় নাই। মন্ত্রিত্ব গঠন করার দিনই এই রাস্তার কাজ আরম্ভ করার জন্য নির্দেশ দেই এবং পরদিনই কাজ শুরু হয়ে যায়।”

২৮. নগরবাড়ি-রাজশাহী সড়ক

প্রায় একই সময় শুরু হয়ে যায় নগরবাড়ি থেকে রাজশাহী পর্যন্ত সড়ক নির্মাণের। মূল উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা-রাজশাহী পথের দূরত্ব কমিয়ে আনা।

২৯. সাভার ডেয়ারি ফার্ম

পূর্ব পাকিস্তানের জিওসি ওমরাও খান একদিন প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন ১০ লাখ টাকা পেয়েছেন ভালো গরু মহিষ পালন ও প্রজননের জন্য। ৫০০ একর জমি দরকার। সরকারও চেয়েছিল ঐ জাতীয় ফার্ম গড়তে, যার জন্য দরকার দু’হাজার একর। নায়রহাট থেকে সাভার পর্যন্ত ছিল “আট-নয় মাইলব্যাপী এলাকা, জঙ্গলাকীর্ণ গড়,” লিখেছেন আতাউর রহমান, “বহুকাল আগে এই বিস্তীর্ণ এলাকা দেখেছি, কোন কাজে লাগতে পারে কি না ভেবেছি, সুযোগ এখন এল। জেনারেল ওমরাওকে বলে তাঁর এক কর্মচারী নিয়ে এলাকা দেখায়ে দিলাম। সবার খুব পছন্দ হল। এখানেই ফার্ম করতে হবে, ভেতর দিয়ে রাস্তা যাবে।” এভাবেই সাভারে ডেয়ারি ও মিলিটারি ফার্মের পত্তন হয়।

৩০. ঢাকা-চট্টগ্রাম ও অন্যান্য সড়ক

ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত ছিল সেই গ্রান্ড ট্রাংক রোড, যার অবস্থা তখন জরাজীর্ণ। এই রাস্তা সংস্কার বিশেষ করে দাউদকান্দি থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত রাস্তা নির্মাণকাজ এই সরকার সম্পন্ন করে। নারায়ণগঞ্জ থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত রাস্তার কাজও এই সরকার শুরু করে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের পরিকল্পনা এ সময় গ্রহণ করা হয় ও খুলনা-যশোর সড়কের নির্মাণকাজ শুরু হয়।

ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের ওপর বহু ব্রিজ, বিশেষ করে গোমতী ব্রিজ নির্মাণ শুরু।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-শ্রীহট্ট সড়কের সব পুল নির্মাণ। ফেনী ব্রিজ নির্মাণ।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল থানার ধরন্তী গ্রাম থেকে নাসিরনগর পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ শুরু।

৩১. স্থায়ী শিল্প ট্রাইব্যুনাল

শিল্প ট্রাইব্যুনাল শুধু স্থাপন নয়। শ্রমিক থেকে শুরু করে নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের বেতন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়।

৩২. সার্টিফিকেট ব্যবস্থা বাতিল

আতাউর রহমান খান লিখেছেন, “সার্টিফিকেট থেকে সরকারী পাওনা আদায়ের প্রথা বহুকাল চলে আসছে। এতে জনসাধারণের নিদারুণ কষ্ট হয়। আমরা আইন করে সার্টিফিকেট প্রথা তুলে দিয়ে সমস্ত মামলা মুন্সেফ আদালতে পাঠাবার ব্যবস্থা করি। বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন বাতিল হওয়ার পর মুন্সেফদের কাজ অনেক কমে গেছে।”

৩৩. স্বাস্থ্য নিবাস

কক্সবাজারে নিজে যান আতাউর এবং তা দেখে মুগ্ধ হন। আওয়ামী লীগ সরকারই প্রথম কক্সবাজার উন্নয়নের পরিকল্পনা নেন। সেখানে সরকারি খরচে প্রথম কিছু কটেজ ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। কেন্দ্র এর জন্য ১০ লাখ টাকা মঞ্জুরি দিয়েছিল।

৩৪. ঢাকার উন্নয়ন

ঢাকা শহর উন্নয়নের জন্য দুটি ব্যবস্থা নেওয়া হয়–
(১) ঢাকা উন্নয়ন সংস্থা বা ঢাকা ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট গঠন, যা আমাদের কাছে পরিচিত ছিল ডিআইটি নামে, বর্তমানে রাজউক
(২) গ্রেটার ঢাকা সিটি মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন।

৩৫. মেঘনা ক্রসবাঁধ

মেঘনায় ক্রসবাঁধ নির্মিত হউক, এ ধরনের একটি স্বপ্ন উপকূলবাসীর মধ্যে ছিল, লিখেছেন মোহাম্মদ তোয়াহা। সে স্বপ্ন বাস্তবায়নের সুযোগ আসে ১৯৫৪ সালে যখন তিনি আওয়ামী লীগ থেকে এমএলএ নির্বাচিত হন। এবং তখন প্রথম মেঘনা ক্রসবাঁধ নির্মাণ শুরু হয়। তোয়াহা লিখেছেন, “১৯৫৬ সালের মার্চ মাসে শুরু করে এক মাসের মধ্যেই কাজের প্রধান অংশ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়েছিল। প্রতিদিন ৬ হাজার লোক দিবারাত্র কাজ করে এই বিরাট কাজটি সম্পন্ন করল। ভূমি পুনরুদ্ধার কাজের মধ্যে মেঘনা বাঁধ প্রকল্পটি এদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। এই বাঁধের ফলশ্রুতিতে ৩০ লক্ষাধিক একর জমি সাগরের বুক থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। হাজার হাজার বাস্তুহারা পরিবার নিজেদের পৈতৃক ভিটামাটি ফিরে পেয়েছে।”

৩৬. ভূমি সংস্কার কমিশন গঠন

বাংলাদেশে জমি আর ধর্ম সমার্থক। এদেশের অধিকাংশ মামলা জমি থেকে উদ্ভূত। এখনও জমি-সংক্রান্ত জটিলতা সম্পূর্ণ নিরসন সম্ভব হয়নি।

তোয়াহা লিখেছেন, আতাউর রহমান সরকারের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কাজ ভূমি সংস্কারের লক্ষ্যে ভূমি সংস্কার কমিশন গঠন। জমিদার, কৃষক সবাই অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন কমিশনে। তোয়াহা লিখেছেন, মৌল ভূমি সংস্কার না হলেও তারা এমন কতগুলি সুপারিশ করেছিল, যার অভিঘাত ছিল সুদূরপ্রসারী। যেমন–

“১. জমির সর্বোচ্চ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১০০ বিঘায়; ২. আগের জমি ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিনা সালামিতে বা বিনামূল্যে বিক্রি করতে হবে; ৩. প্রদত্ত জমি তিন বছরের মধ্যে হস্তান্তর করা যাবে না। তিন বছর পরেও যদি কোনো কৃষক বিশেষ প্রয়োজনে জমি বিক্রয় করতে হয়, তবে তাকে অবশ্যই সরকারের নিকট তা বিক্রি করতে হবে এবং সচ্ছলতা ফিরে আসলে উক্ত জমি সে পুনরায় সরকার থেকে খরিদ করে নিতে পারবে।” ৪. যতদিন জমি থেকে উদ্বৃত্ত সৃষ্টি না হবে ততদিন খাজনার রেয়াত। সরকার আশা করছিল তিন বছরের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমা হবে। ৫. দেনার দায়ে জমি নিলামে উঠবে না। ৬. ‘জল যার জলা তার’ এই ভিত্তিতে জলমহাল-এর পত্তনের ভিত্তি দেয়া হয়েছিল, যাতে জেলেরা সুবিধা পায়; ৭. ইজারা প্রথা বিলোপ করে নির্বাচিত বাজার কমিটি গঠন। তারা তাদের আয়ের শতকরা ২৫% বাজার উন্নয়নে ব্যয় করতে পারবে।

তোয়াহা লিখেছেন, “কমিশনের অভ্যন্তরে কমিউনিস্ট বামপন্থী সদস্যগণের উদ্যোগে তা সম্ভব হয়েছিল। কমিশনের এই সুপারিশ বিশেষ করে জমির সর্বোচ্চ পরিমাণ কমিয়ে ১০০ বিঘা নির্ধারণ করার খবরে আইন সভার জোতদার প্রতিনিধিরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন।”

ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেছিলেন বললে কম হবে। আতাউর রহমান সরকারের পতনের অন্যতম কারণ ছিল জমির ১০০ বিঘা সিলিং নির্ধারণ।

৩৭. উপনির্বাচন

গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা ছিল ২১-দফার অন্যতম উদ্দেশ্য। পূর্বেকার অভিজ্ঞতা ছিল উপনির্বাচন না করা। আতাউর সরকারের সময় ৭টি আসন খালি ছিল। মওলানা ভাসানী, ইয়ার মোহাম্মদ, শেখ মুজিব ও তোয়াহাকে নিয়ে একটি কমিটি করেন উপনির্বাচনে প্রার্থী নিয়োগ ও জরিপ করার জন্য। সরকার উপনির্বাচন নির্বিঘ্নে অনুষ্ঠিত করে। আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা ৭টি উপনির্বাচনেই বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে। অলি আহাদ লিখেছেন, সরকার কৃতিত্বের সঙ্গে খাদ্য সংকটের মোকাবেলা করেছিল ফলে উপনির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। অলি আহাদ লিখেছেন, “গণতন্ত্রের ভিত্তি সুদৃঢ় করার প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং এভাবেই ১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের অঙ্গদল হিসাবে তাহাদের দেয় ২১-দফা ওয়াদার ২১তম ওয়াদাকে রক্ষা করে।”

৩৮. সার্বভৌম বিচার ব্যবস্থা

আওয়ামী লীগ সরকারের মহত্তম কাজ ছিল বিচার বিভাগকে আলাদা করা। ১৪ মার্চ বিচারমন্ত্রী এ সম্পর্কিত বিল আনেন। বিরোধী দলও এতে বাধা দেয়নি। “ফৌজদারী কার্যবিধি (সংশোধনী) বিলের ফলে বিচার বিভাগ শাসন বিভাগ হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়াছে।” [সংবাদ, ১৫.০৩.১৯৫৭]

৩৯. মনোনয়ন প্রথা বাতিল

১৪ মার্চ স্বায়ত্তশাসন সংক্রান্ত ৫টি বিল উত্থাপন করা হয় এবং পাস হয়। ফলে জেলা বোর্ড, মিউনিসিপালিটি ও ইউনিয়ন বোর্ডে সব প্রকার মনোনয়ন প্রথা বাতিল করা হয়। প্রাপ্ত বয়স্কদের সরাসরি ভোটে সবাই এসব সংস্থায় নির্বাচিত হবেন।

৪০. পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা

১৯৫৭ সালে নাজির আহমদ ছিলেন সরকারের জনসংযোগ বিভাগের চলচ্চিত্র বিভাগের প্রধান। ঐ সময় পশ্চিম পাকিস্তান গিয়ে তিনি জানতে পারেন চলচ্চিত্র শিল্প ও কুটির শিল্প উন্নয়নের জন্য ১ কোটি টাকা দেবে। উপ-সচিবের মাধ্যমে তিনি ১ কোটি টাকার কথা শোনেন। উপ-সচিব বললেন, কর্পোরেশন করলে ঐ টাকা পাওয়া যাবে।

“মন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমান সব শুনে আমাকে তাঁর বাসায় ডাকেন। তখন প্রাদেশিক পরিষদের অধিবেশন শেষ হতে দু’দিন বাকি। শেখ সাহেব আমাদেরকে কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সত্বর কাগজপত্র তৈরি করতে বললেন। আমার স্পষ্ট মনে আছে অধিবেশনের শেষ দিন [৩ এপ্রিল] শেখ মুজিবুর রহমান এফডিসি ও ইপিসিক প্রতিষ্ঠার জন্যে এক হাতে দুটি বিল পরিষদে অনুমোদনের জন্য পেশ করেন। সঙ্গে সঙ্গে বিনা বাধায় বিলটি পাস হয়ে যায়। আমরা তখন আনন্দিত। আমার চোখের সামনে ভাসছে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (ইপিএফডিসি)। ওই দিন সন্ধ্যেবেলায় আমি ও আবুল খায়ের আবার বাণিজ্যমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায় যাই। উৎফুল্লিত শেখ সাহেব বললেন, এফডিসি তো হয়ে গেল, আজগর আলী শাহকে চেয়ারম্যান বানিয়ে দিয়েছি। আবুল খায়েরকে এমডি। আর আপনাকে অপারেটিভ ডিরেক্টর। এখন চলচ্চিত্রের জন্য কাজ করুন গিয়ে। তাঁর উৎসাহ না থাকলে বোধহয় এদেশে এফডিসি’র জন্ম হতো না। আর হলেও হতো অনেক দেরিতে। 

৪১. চা শিল্প

১৯৫৭ সালে টি বোর্ডের তৃতীয় চেয়ারম্যান ছিলেন বঙ্গবন্ধু। চা উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে তিনি বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন। তার সময়ে তিনি মতিঝিলে চা বোর্ডের নিজস্ব ভবন তৈরি করেন। এবং শ্রীমঙ্গলে পাকিস্তান টি বোর্ডের অধীনে পাকিস্তান টি রিসার্চ স্টেশন বা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয়।

৪২. ২১ ফেব্রুয়ারি ও বাংলা একাডেমি

অনেক দিনের দাবি ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা করা। সেটি করা হয়েছিল এবং বাংলা একাডেমি থেকে বাংলায় বই প্রকাশনা শুরু হয়েছিল।

১৯৫৪-১৯৫৮ এই ছিল যুক্তফ্রন্টের আমল। এর মধ্যে কয়েকবার সরকার পতন হয়েছে। আওয়ামী লীগ ৬ সেপ্টেম্বর ১৯৫৬ সালে সরকার গঠন করে। ১৯৫৮ সালে সরকার পতন হয়। এরই মধ্যে যে কাজ তারা করেছে তা ঐ সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে অসম্ভব বলা যেতে পারে। এখানে কিছু কাজের উল্লেখ করা হলো। কিন্তু বিদ্যমান প্রতিষ্ঠান উন্নতিকরণ ও শিল্প সম্পর্কিত অনেকগুলো পরিকল্পনা তারা করেছিল। এসব প্রতিষ্ঠান এখনও টিকে আছে। এ সম্পর্কিত বিস্তারিত ও বরাদ্দ টাকার পরিমাণ পাওয়া যাবে ১৯৫৬-১৯৫৭ সালে প্রকাশিত অ্যাসেম্বলি প্রসিডিংস : অফিসিয়াল রিপোর্ট : ইস্ট পাকিস্তান অ্যাসেম্বলি-তে।

মুল লেখাঃ বিডিনিউজ২৪ এ প্রকাশিত মুনতাসীর মামুনের লেখা ‘আওয়ামী লীগ কী করেছে আমাদের জন্য’ শীর্ষক প্রবন্ধের অংশবিশেষ, বাক্য অর্থবহ করার নিমিত্তে আংশিক পরিমার্জিত।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত