মোহাম্মদ নাসিম : রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম

2464

Published on জুন 15, 2020
  • Details Image

এডভোকেট জয়নাল আবেদীন চৌধুরী রিগ্যানঃ

বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক উজ্জ্বল নক্ষত্র মোহাম্মদ নাসিমের জন্ম হয়েছিল ১৯৪৮ সালের ২ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলায়। পিতা ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ছিলেন জাতীয় চার নেতার মধ্যে অন্যতম একজন, হাজারো বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ট সহচর। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের অর্থমন্ত্রী, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এম মনসুর আলী ছিলেন পাবনার বাড়িতে। বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসঘাতকদের হাতে ১৫ আগস্টে সপরিবারে নিহত হন। ছেলে মোহাম্মদ নাসিমের টেলিফোনে এই খবর জানতে পারেন। এরপর মনসুর আলী আবার ঢাকায় আসেন। ‘মীরজাফর’ খন্দকার মোশতাক আহমেদের অবৈধ সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন না করায় মনসুর আলীসহ বঙ্গবন্ধুর চার বিশ্বস্ত অনুসারীকে আটক করে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কারাগারে ঘটে পৃথিবীর ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড। জেলখানার ভেতরে নৃশংসভাবে খুন করা হয় জাতীয় চার নেতা এম মনসুর আলী, তাজউদ্দিন আহম্মদ, এ এইচ এম কামারুজ্জামান ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে।

রাজনীতির সাথে মোহাম্মদ নাসিম সম্পৃক্ত হন ষাটের দশকে। শুরুর দিকে তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হলেও পরবর্তীতে ছাত্রলীগ করতে শুরু করেন। পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশের পর ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে (বর্তমানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন।

রাজনৈতিক জীবনে মোহাম্মদ নাসিম বিভিন্ন সরকারের সময় জেল, জুলুম ও নির্যাতন ভোগ করেছেন। তিনি পাকিস্তানের স্বৈরশাসন. নির্যাতনের বিরুদ্ধে আন্দোলনসহ স্বাধীন বাংলাদেশে সব সামরিক ও স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন। তিনি ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। দেশের সব অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তিনি ছিলেন অগ্র সৈনিক।

১৯৭৫ সালে বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সপরিবারে হত্যাকাণ্ড ও জেলখানায় জাতীয় তিন নেতার সাথে তাঁর পিতা এম মনসুর আলী হত্যাকাণ্ডের পরে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরোপুরি সম্পৃক্ত হয়ে ওঠেন। পঁচাত্তরের হত্যাকাণ্ডের পর মোহাম্মদ নাসিমকেও গ্রেপ্তার করা হয়। সেইসময় দীর্ঘদিন তাকে কারাগারে থাকতে হয়েছে।

১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে তিনি যুব সম্পাদক হন। পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে তিনি দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ২০১২ সালের কাউন্সিলে তাঁকে প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত করা হয়।

১৯৮৬ সালে তিনি প্রথম জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬, ২০০১, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালে তিনি সিরাজগঞ্জ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একসময় তিনি জাতীয় সংসদের হুইপ হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৬ সালে তিনি স্বরাষ্ট্র, গৃহায়ন ও গণপূর্ত এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এরপর ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় থেকেই তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ১৪ দলকে বর্তমানে সংগঠিত রাখার ক্ষেত্রে তাঁর বড় ভূমিকা রয়েছে ৷

রাজনীতির বিভিন্ন পর্যায়ে মোহাম্মদ নাসিমকে অনেকবার কারাবন্দী হতে হয়েছে। প্রথম তাকে কারাগারে যেতে হয় ১৯৬৬ সালে, যখন তিনি এইচএসসি পড়ছিলেন। সেই সময় পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে ভুট্টা খাওয়ানোর চেষ্টার বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে পিতা এম মনসুর আলীর সঙ্গে কারাগারে যেতে হয় মোহাম্মদ নাসিমকেও। একবছর পরে তিনি ছাড়া পান।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার হত্যাকাণ্ডের পরে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল মোহাম্মদ নাসিমকে। ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিযানে আরো অনেক রাজনৈতিক নেতাঁর সঙ্গে তাকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

মোহাম্মদ নাসিম সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন এবং আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছেন । ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারবিরোধী আন্দোলনে তিনি অনেক বার রাজপথে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন মোহাম্মদ নাসিম । ঢাকাসহ নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জে বেশকিছু শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছেন তিনি।

ব্যক্তিগত জীবনে মোহাম্মদ নাসিম তিন সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রীর নাম লায়লা আরজুমান্দ। মোহাম্মদ নাসিমের ছেলে তানভীর শাকিল জয় ২০০৮ সালের নির্বাচনে সিরাজগঞ্জ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

লেখকঃ কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত