চট্টগ্রামে করোনা: স্বাস্থ্য সেবা ও খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী

2646

Published on মে 8, 2020
  • Details Image
    চট্টগ্রামে শিক্ষা উপমন্ত্রীর ত্রাণ কার্যক্রম
  • Details Image
    চট্টগ্রামে শিক্ষা উপমন্ত্রীর ত্রাণ কার্যক্রম
  • Details Image
    বিআইটিআইডিতে টেস্টিং কিট পৌঁছে দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দর নগরী চট্টগ্রামে এই রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলো প্রস্তুত করা, শনাক্তকরণ পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত এবং অসহায় ছিন্নমূল ও মধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষের খাদ্য সরবরাহ নিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী চট্টগ্রাম-৯ (কোতোয়ালী-বাকলিয়া) আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকিয়ে মানুষের জীবন বাঁচাতে ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধানে সুপরিকল্পিত ধারাবাহিক উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দেয়া দিক নির্দেশনা পালনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। এলক্ষ্যে জনগণের চাহিদা পূরণে স্থানীয় প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের সাথে সমন্বয় সাধনের কাজটি তিনি করছেন নিয়মিতভাবে।

দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ শুরু হওয়ার সাথে সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে এ বিষয়ে জনসচেতনা সৃষ্টিতে মাঠে নামেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষকে অবহিত করেন। সরকারি ছুটি শুরু হলে করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা ও দরিদ্র মানুষের খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে মাঠে নেমে পড়েন তিনি।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার লক্ষ্যে নির্মিত ফিল্ড হাসপাতালে ব্যবহারের জন্য ২ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী। বুধবার (৬ মে) চট্টগ্রাম ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান উদ্যোক্তা ও সিইও বিদ্যুৎ বড়ুয়ার হাতে এসব মাস্ক তুলে দেয়া হয়।

বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রতম উৎসব বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে চট্টগ্রাম নগরীর বৌদ্ধ মন্দির গুলোতে শুভেচ্ছা উপহার প্রদান করেন তিনি। 

চট্টগ্রামের ফৌজদারহাট এলাকায় বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব ইনফেকশাস এন্ড ট্রপিক্যাল ডিজিজেস (বিআঅইটিআইডি) এ করোনা ভাইরাস শনাক্তকরণ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পিসিআর মেশিন আছে। কিন্তু শুরুতে সেখানে কোনো কিট ছিল না। চট্টগ্রামের করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা শুরুর জন্য প্রয়োজনী কিট সংগ্রহে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাথে যোগাযোগ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। তাঁর ঐকান্তিক চেষ্টায় চট্টগ্রামের জন্য কিট বরাদ্দ হয়। সেই কিট দ্রুততম সময়ে চট্টগ্রামে এনে পরীক্ষা শুরু করতে নিজ গাড়িতে তুলে নেন তিনি। ৩০ মার্চ বিআইটিআইডিতে নিজে গিয়ে কিট পৌঁছে দেন। চট্টগ্রামে শুরু হয় করোনা শনাক্তকরণ পরীক্ষা।

শুধু চিকিৎসা নয় সরকারি ছুটির কারণে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ যাতে কোনো ধরণের সংকটে না পড়েন তা নিশ্চিত করতে মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল শুরু করেন খাদ্য সহায়তা। দরিদ্র মানুষকে ঘরে ঘরে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেন তিনি। ব্যক্তি উদ্যোগে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৫৫ হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সামগ্রি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেন। এই কাজ চলমান রেখেই তিনি নজর দেন করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে।

চট্টগ্রামে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য নির্ধারণ করা হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল ও বিআইটিআইডিকে। কিন্তু এই দুই হাসপাতালে ছিল না কোনো ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ সুবিধা। জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করে ভেন্টিলেটর ও আইসিইউ স্থাপনে করণীয়, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বরাদ্দ ও এ কাজে অভিজ্ঞ চিকিৎসক, নার্স ও টেশনিশিয়ান নিয়োগের বিষয়টি নিয়ে সরাসরি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগ করেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। এরপর শুরুতে জেনারেল হাসপাতালের জন্য পাঁচটি এবং পরে আরো পাঁচটি আইসিইউ বরাদ্দ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সেগুলো স্থাপনে প্রয়োজনীয় কারিগরী সহায়তা এবং দক্ষ জনবলও নিশ্চিত করা হয়।

চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি চট্টগ্রামের সন্তান শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিতদের জন্য করণীয় নিয়ে উদ্যোগী হন। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে সাগরিকা এলাকায় নবনির্মিত একটি ৮তলা ভবন চিকিৎসক ও সেবাকর্মীদের আইসোলেশনের জন্য বরাদ্দ দেন। পাশাপাশি তাদের জন্য আরো দুটি আইসোলেশন কেন্দ্র নির্ধারণ করেন জেলা প্রশাসনের সাথে বৈঠকে। ইতিমধ্যে নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে পৌঁছে যেতে শুরু করে খাদ্য সামগ্রি।

এসময় সরকারি ছুটি দীর্ঘায়িত হতে শুরু করলে নগরীর মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোকে উপহার খাদ্য সামগ্রি পৌঁছে দিতে ‘জরুরী সেবা’ চালু করেন নওফেল। এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহেই জরুরী সেবা নম্বরে ফোন দিয়ে উপহার পেতে শুরু করেন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর সম্মানিত সদস্যরা। ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ এবং প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও মহ্বিুল হাসান চৌধুরী নওফেলের প্রত্যক্ষ তদারকিতে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ শুরু করেন।

সঙ্গে সঙ্গে নওফেল শুরু করেন হতদরিদ্র বস্তিবাসী নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য রান্না করা খাবার বিতরণ কর্মসূচি। প্রতিদিন এক হাজার করে এখন পর্যন্ত (২৩ এপ্রিল) প্রায় আট হাজার মানুষকে পৌঁছে দেয়া হয় রান্না করা খাবার। একদল স্বেচ্ছাসেবক এই দুপুরের খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন বস্তিবাসীর ঘরে ঘরে। এদিকে এই সময়ের মধ্যে বিআইটিআইডিতে প্রথম দফায় সরবরাহ করা কিট শেষের পথে। শনাক্তকরণ পরীক্ষা নিরবিচ্ছিন্ন করতে আবারও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করে কিটের চাহিদার কথা জানান নওফেল। এবার দ্বিতীয় দফায় ১৯২০টি কিট বরাদ্দ হলে সেগুলো নিজের গাড়িতে করে বিআইটিআইডিতে পাঠান ১৮ এপ্রিল। ফলে আগের চেয়েও বেশি সংখ্যায় দৈনিক শনাক্তকরণ পরীক্ষা চলতে থাকে।

অন্যদিকে সার্বিক প্রস্তুতি শেষে ২৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে যায় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য আইসিইউ সেবা। শনাক্তকরণ পরীক্ষা আরো দ্রুত গতিতে করতে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও এনিম্যাল সাইয়েন্সে ইউনিভার্সিটির (সিভাসু) ল্যাবে থাকা পিসিঅআর মেশিন চালু করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাভ ও কিট সরবরাহ নিশ্চিত করতে উদ্যোগী হন নওফেল। ২৩ এপ্রিল আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু কওে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় করোনা শনাক্তকরণ কেন্দ্র সিভাসু’র ল্যাবটিও।

এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হতে যাওয়া পবিত্র রমজান মাসে পুরো নগরীতে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দিতে আবার দ্বিতীয় দফার কাজ শুরু করেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইসি মোড় শাখায় দিনে রাতে খাবার প্যাকেট তৈরীতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দলীয় নেতাকর্মীদের দিয়ে গঠিত সেচ্ছাসেবকের টিম। এখানেই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ‘কন্ট্রোল রুম’ গড়ে তুলেছেন করোনা দূর্যোগকালীন সময়ে চট্টগ্রামবাসীর প্রয়োজনে সার্বিক সহযোগিতার জন্য।

তার ব্যক্তিগত সহকারী নাজিউর রহমান সিকদার অনিক জানান, রমজানে দ্বিতীয় দফায় আবার ৫৫ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্য সামগ্রি পৌঁছানো হবে। এছাড়াও চলমান থাকবে মধ্যবিত্তদের জন্য ‘জরুরী হটলাইন সেবা’। রমজানের ইফতারের সময় দরিদ্র বস্তিবাসীদের কাছে খাবার প্যাকেট পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করারা পাশাপাশি প্রশাসনের সাথে সমন্বয় সাধনসহ বন্দর নগরীর বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সমস্যা নিরসনে তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে দাপ্তরিক পদক্ষেপ গ্রহণে নিজেকে ব্যপ্ত রেখেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল।

 

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত