বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারঃ জাতির ঋণ শোধ

2837

Published on আগস্ট 13, 2018
  • Details Image

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর বুকে সরাসরি গুলি চালিয়েছিল যে নরপিশাচ ঘাতক, অপরাধের ৩৫ বছর পর তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে জনকের রক্তের ঋণ শোধ করে বাঙালি জাতি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা দায়ের, বিচারিক কার্যক্রম, রায় ও ফাঁসির দণ্ড কার্যকর- সব কিছু মিলিয়ে এক দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। জাতিকে যিনি এনে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা, সেই জনককে যখন সপরিবারে হত্যা করে তারই সেনাবাহিনীর বিপথগামী সদস্যরা, তখন তা রূপ নেয় ভয়ঙ্কর অপরাধে, যা গোটা দেশকেই কলঙ্কিত করে বিশ্বদরবারে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা ছিল ইনডেমনিটি অ্যাক্ট। জিয়াউর রহমান-খন্দকার মোশতাক আহমদের চক্রান্তের ফসল ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-। যার পেছনেও ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। সেই কারণেই এ জঘন্য হত্যাকাণ্ডের খুনিদের বাঁচাতে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর জাতীয় বেইমান খন্দকার মোশতাক সরকার ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। ১৯৭৯ সালের ৯ জুলাই জিয়াউর রহমানের সরকার বাংলাদেশ সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর পর সংশোধিত আইনে এ আইনটি বাংলাদেশ সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করে। শুধু তাই নয়, ’৭৫-পরবর্তী স্বৈরাচার সরকারগুলো খুনিদের বিদেশে চাকরি দিয়ে বিভিন্নভাবে পুরস্কৃত করে।

১৫ আগস্টের সেই ভয়ঙ্কর প্রত্যুষে যিনি ছিলেন হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী, যার সামনে থেকে শিশু শেখ রাসেলকে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়, তিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহভাজন ব্যক্তিগত সহকারী আ ফ ম মহিতুল ইসলাম। হত্যাকাণ্ডের ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমণ্ডি থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন তিনি। ১২ নভেম্বর ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি আইন বাতিল করে আওয়ামী লীগ সরকার।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ২১ বছর পর করা এ হত্যা মামলায় সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দিন আহম্মেদ, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুর রশিদ, শরিফুল হক ডালিম, এএম রাশেদ চৌধুরী, মোসলেম উদ্দিন, নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ, খন্দকার মোশতাক, জিয়াউর রহমান, তাহের উদ্দিন ঠাকুরসহ ২৪ জনকে আসামি করা হয়। চার আসামি এর আগেই মারা যায়। বাকি ২০ জনের বিরুদ্ধে ঢাকার দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচারকার্য শুরু হয় ১৯৯৭ সালের ১২ মার্চ। এর মধ্যে ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে বিচারকার্য প্রলম্বিত হয়। ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর এ হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হয়। ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ১২ খুনির মধ্যে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। এরা শুধু জাতির জনককেই হত্যা করেনি, বরং রাজনীতির বাইরে থাকা নিরীহ শিশু ও নারীকেও হত্যা করেছে। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করে কলঙ্কমুক্ত হয় বাংলাদেশ।

২০১৬ সালের আগস্ট মাসে মৃত্যুবরণ করেন আ ফ ম মহিতুল ইসলাম। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদী তার করা মামলার চূড়ান্ত পরিণতি দেখে যেতে পারলেও পলাতক ছয় খুনির ফাঁসি দেখে যেতে পারেননি।

সৌজন্যেঃ আমাদের সময়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত