স্মৃতি যেখানে জীবন্ত

6101

Published on আগস্ট 12, 2018
  • Details Image

শান্তা মারিয়াঃ

ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর। বাঙালি ও বাংলাদেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অংশ এই বাড়ি। ষাটের আইয়ুববিরোধী আন্দোলন, ছয়দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলনের সময় এই বাড়িটি ছিল সব সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে মুক্ত হয়ে বাড়িতে ফিরে এলে বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখার জন্য লাখো জনতা এই বাড়িকে তাদের তীর্থভূমিতে পরিণত করেছিল। ১৯৭০-এর নির্বাচনে যখন তিনি জনগণের রায় নিয়ে বাংলার গণনায়কে পরিণত হন তখন এ বাড়িতেই ছুটে আসেন লাখো জনতা তাকে গণসংবর্ধনা দিতে। ১৯৭১-এর উত্তাল মার্চে আন্দোলনের দিকনির্দেশনা নিতে এ বাড়ির চারদিকে ছিল জনসমুদ্র। ২৩ মার্চ এ বাড়িতেই স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন বঙ্গবন্ধু। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে বন্দি হওয়ার আগে এ বাড়ি থেকেই তিনি লিখে পাঠান স্বাধীনতার ঘোষণা। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এখানেই গৃহবন্দি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্যরা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর এই বাড়িতে দেশ-বিদেশের কত না তারকা ব্যক্তিত্বের পদধূলি পড়েছিল। আর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট এ বাড়িতেই সপরিবারে শহীদ হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান। ইতিহাসখ্যাত এই বাড়িতে এখন অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড়।

৩২ নম্বরে স্থাপিত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে রয়েছে জাতির জনকের স্পর্শ যা আজও অমলিন। এ বাড়িতে রয়েছে তার অনেক স্মৃতিচিহ্ন।

১৯৬১ সালের অক্টোবর থেকে এ বাড়িতে বসবাস শুরু করেন বঙ্গবন্ধু। ১৫ আগস্টের শোকাবহ ঘটনার পর বাড়িটি তালাবদ্ধ করে রাখে সেনাশাসিত সরকার। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করার পর বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার কাছে বাড়িটি হস্তান্তর করা হয়। তখনও সে বাড়িতে জাতির জনক ও তার পরিবারের শহীদ সদস্যদের রক্ত লেগেছিল। শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এবং এর নামকরণ করে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’।

এই জাদুঘরে রয়েছে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ কিছু আলোকচিত্র। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর শুভেচ্ছা বিনিময়ের বেশ কিছু আলোকচিত্র এখানে রয়েছে। রয়েছে বঙ্গবন্ধু ও পরিবারের সদস্যদের ব্যবহৃত কিছু সামগ্রী। বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত পাইপ ও চশমা রয়েছে। রয়েছে শিশু শেখ রাসেলের ব্যবহৃত খেলনা। দোতলার শয়নকক্ষে ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের নিদর্শন রয়েছে। এ বাড়িটি দেখলে একজন দর্শনার্থী বিস্ময়ের সঙ্গে সহজেই অনুভব করতে পারবেন যে একজন রাষ্ট্রপ্রধান ও জননেতা কত সাদাসিধাভাবে জীবনযাপন করতেন। এ বাড়িটিতে বিলাসবহুলতার কোনো চিহ্নই নেই। এর নিরাপত্তাব্যবস্থাও ছিল অত্যন্ত নাজুক। কোনোভাবেই একজন রাষ্ট্রপ্রধানের বসবাসের উপযোগী ছিল না এ সাধারণ বাড়িটি। কিন্তু বাঙালি জাতির জনক এই সাদাসিধা বাড়িটিতেই থাকতেন এবং এখানেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সাধারণ মানুষ তার কাছে এসে নিজেদের দুখঃ-দুর্দশার কথা বলার, অভাব অভিযোগ জানানোর সুযোগ পেত।

সৌজন্যেঃ আমাদের সময়

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত