কেবল আওয়ামী লীগই পারে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

9266

Published on জুন 30, 2018
  • Details Image

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সংগঠনকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি তৃণমূল পর্যায়ে দলের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাবার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, কেবল আওয়ামী লীগই পারে জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে।

প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে সকলের সহযোগিতা কামনা করে বলেন, ‘আওয়ামী লীগই একমাত্র দল যারা জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন করতে পারে। কাজেই এই দলকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। তৃণমূলের মানুষের কাছে দলের কর্মকান্ড তুলে ধরে এর জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে।’

তিনি সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা কি করেছি এবং কি করতে চাচ্ছি তা জনগণের সামনে তুলে ধরে নৌকা প্রতীকে ভোট চাইতে হবে।’

এ সময় তিনি সারাদেশে চলমান স্কুল ফিডিং কর্মসূচি এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে জনগণের দোড়গোঁড়ায় তাঁর সরকারের স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যও দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ গণভবনে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন।

দলীয় ঐক্য ধরে রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন এখানে কোনরকম দলীয় কোন্দল যেন না হয়, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। নিজেদের গ্রুপ করতে গিয়ে যারা আমাদের মানুষ হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে তাদের নিয়ে দলভারী না করে আপনারা নতুন নতুন কর্মী সৃষ্টি করুন।’

স্বজন হারাবার বেদনা স্মরণ করে আওয়ামী লীগকে নিজের পরিবার হিসেবে আখ্যায়িত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার আর চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলাই আমার একমাত্র স্বপ্ন। আর আপনারা হচ্ছেন সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের এক একজন কারিগর।’

গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ বর্ধিত সভার এদিন ছিল দ্বিতীয় পর্যায়। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেট এবং বরিশাল বিভাগের তৃণমূল নেতৃবৃন্দ এই সভায় অংশগ্রহণ করেন। অন্য বিভাগগুলোর তৃণমূল নেতৃবৃন্দকে নিয়ে এই বিশেষ বর্ধিত সভার শেষ অংশ আগামী ৭ জুলাই গণভবনে অনুষ্ঠিত হবে।

দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সভায় স্বাগত ভাষণ দেন।

দলের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম সভাটি পরিচালনা করেন। সভার শুরুতেই পার্টির দপ্তর সম্পাদক ড. আব্দুস সোহবান গোলাপ শোক প্রস্তাব পাঠ করেন এবং এরপরই সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে আগামী সংসদ নির্বাচনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার আহবান জানিয়ে বলেন, দল নিয়ে বা দলের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে নিয়ে সমালোচনা বন্ধ করে প্রার্থী যেই হোক না কেন নৌকার বিজয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে।

দেশের অর্থনীতি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী এবং বাজেটের শতকরা ৯০ ভাগ নিজস্ব অর্থায়নেই বাস্তবায়ন করা হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার প্রত্যেকটি জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়নকেই উন্নয়নের ক্ষেত্রে সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকে।

তৃণমূলের জনগণের উন্নয়ন তাঁর সরকারের মূল্য লক্ষ্য বলেও এ সময় প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনীতি ছিলো এ দেশের শোষিত বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। মানুষ যেনো মুক্তি পায় সে জন্য তিনি বছরের পর বছর জেল খেটেছেন।

নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার জন্য গ্রামে-গঞ্জে, ঘরে ঘরে গিয়ে সরকারের উন্নয়নের কথা তুলে ধরতে তৃণমূল নেতাদের নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, মানুষ সুখে থাকলে দুঃখের কথা ভুলে যায়। তাই উন্নয়নের কথা তাদের কাছে গিয়ে বলতে হবে। দেশের উন্নয়নে ও জনগণের কল্যাণে আমরা যেসব কর্মসূচি নিয়েছি, সেগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরবেন।

মানুষের কল্যাণে এবং মানুষের জন্য রাজনীতি করতে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়তে বলেন তিনি।

নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জাতির পিতার লেখা অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা বইগুলো পড়বেন। এগুলো পড়লেই জানতে পারবেন এ দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের কল্যাণ এবং সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করতে জাতির পিতার চিন্তা-ভাবনার কথা।’ তিনি বলেন ‘তাঁর আদর্শে (বঙ্গবন্ধুর) গড়ে উঠে দেশের কল্যাণে আপনাদেরও কাজ করতে হবে। তবেই বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।’

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মানুষ দল ত্যাগ করে মন্ত্রিত্বের জন্য, কিন্তু জাতির পিতা মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দলকে গড়ে তুলেছিলেন। তিনি আওয়ামী লীগকে সুসংগঠিত করেছিলেন মানুষকে ভালোবেসে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ এ পর্যন্ত যা পেয়েছে, তা রক্ত দিয়ে অর্জন করতে হয়েছে। শুরু থেকেই পাকিস্তানিরা এখানকার মানুষকে অত্যাচার নির্যাতন করেছে, বঞ্চিত করেছে।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী ১৯৫৬ সালে করাচি থেকে প্রকাশিক ডন পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী তৎকালীন পূর্ববাংলা এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যকার বঞ্চনার একটি তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।

দেশ স্বাধীন হবার অনেক আগ থেকেই একদিন বাংলাদেশ স্বাধীন হবে এবং সেই দেশকে বঙ্গবন্ধু সুন্দরভাবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখতেন উল্লেখ করে ১৯৬৯ সালে বাবার সঙ্গে লন্ডনের একটি আদর্শ গ্রাম ভ্রমণের স্মৃতি রোমন্থন করেন প্রধানমন্ত্রী।

ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘রাস্তার পাশে সুন্দর ও সাজানো গ্রাম দেখে তিনি (বঙ্গবন্ধু) দাঁড়িয়ে পড়লেন। জিজ্ঞাসা করতেই বললেন- মা, আমরা একদিন স্বাধীন হবো। এরপর আমি আমাদের গ্রাম ও ইউনিয়নকে এভাবেই গড়ে তুলবো।’ তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্যটাই ছিল বাংলাদেশের গ্রামকেন্দ্রিক। এ জন্য স্বাধীনতার অল্পদিনের মধ্যেই আমাদের একটি সংবিধান উপহার দেন। তিনি গ্রাম ও সেখানকার মানুষের সকল কল্যাণের জন্য গুচ্ছগ্রামসহ নানা কর্মসূচি দিয়ে গেছেন। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা তাঁকে হারিয়েছি। তিনি ভালোবাসা ও মমতা দিয়ে বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন।

জিয়াউর রহমানের শাসন ব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই সময়ই এ দেশে তারা ঋণখেলাপি সংস্কৃতির সৃষ্টি করেছে। ১৯টি ক্যু হয়েছে। সশ¯্র বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের প্রায় শেষ করে দেয়া হয়েছিল। বিমান বাহিনীর হাজারো অফিসার-সৈনিকদের হত্যা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কারাগারে নিক্ষেপ করে নানা ধরনের নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ’৭৫-এর মর্মন্তুদ ঘটনার পর ৬ বছর প্রবাস জীবন কাটাতে বাধ্য হন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হবার পর দেশে ফিরে আসার স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, রিক্ত হয়ে দেশে ফিরে আসলেও দেশের মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি। পেয়েছি সবচেয়ে বড় পরিবার আওয়ামী লীগকে।

তিনি বলেন, ‘আমরা সেনা ছাউনি থেকে বাংলাদেশের মানুষকে গণতন্ত্র এনে দিয়েছি। একদা পুরো রাজনীতিকে কলুষিত করে দিয়েছিল তারা।’

বিএনপি ও জামায়াত জোটের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরপর ক্ষমতায় এলেন জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তারা বাংলাদেশের ভাগ্য পরিবর্তন করতে না পারলেও নিজেদের ভাগ্য ঠিকই পরিবর্তন করেছে।

জিয়ার মুত্যুর পর তার রেখে যাওয়া কেবল ভাঙা স্যুটকেস আর ছেঁড়া গেঞ্জির প্রসংগ তুলেও কঠোর সমালোচনা করে সরকার প্রধান বলেন. ভাঙা স্যুটকেস ছাড়া জিয়াতো নাকি কিছু রেখে যাননি। জিয়ার প্যান্ট কেটে কেটে নাকি তারেক ও কোকোর প্যান্ট বানানো হতো। তাহলে এতো টাকা এলো কোথা থেকে। এবার আবার এতিমের টাকাও মেরে খেয়েছে।

‘স্বাধীনতাবিরোধীদের হাতে দেশের পতাকা তুলে দিয়েছে। কিন্তু স্বাধীনতা বিরোধীরা ক্ষমতায় এলে কিভাবে দেশের উন্নয়ন হবে। তারা তো দেশের স্বাধীনতাই চায়নি’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের তৃণমূলের প্রতি আস্থা রেখে বলেন, আমাদের দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা মাঝেমধ্যে ভুল করে কিন্তু তৃণমূল নেতারা কখনও ভুল করে না। বঙ্গবন্ধু যখন ৬-দফা দিয়েছিলেন তখন কেউ কেউ ৮-দফা নিয়ে তাদের পেছনে ছুটেছেন। তিনি বলেন, তৃণমূলের নেতারা ঐক্যবদ্ধ ছিল বলেই আমরা ক্ষমতায় আসতে পেরেছি। তাদের কারণেই দেশ আজ উন্নত হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে বলেন, দেশের একজন মানুষও যেন গৃহহীন না থাকে। তালিকা করবেন কার ঘর নেই। আমরা তাদের ঘর করে দেবো। একজন মানুষ যেনো না খেয়ে কষ্ট না পায়, বয়স্ক ভাতা যেনো পায়, কৃষি ভাতা যেনো ঠিকভাবে পায়, বৃত্তি, উপবৃত্তি যেনো পায়, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্টের কাজ যেন ভালোভাবে হয়। প্রতিটি গ্রাম-শহরের মানুষ যাতে সমান সুযোগ-সুবিধা পায়- সেদিকে গ্রামের নেতাদের খেয়াল রাখতে হবে। কোথাও যোেন দুর্নীতি না হয় সেটাও দেখতে হবে। তিনি বলেন, এবারের বাজেটে প্রত্যন্ত এলাকার উন্নয়নে যথেষ্ট টাকা রাখা হয়েছে। এসব টাকা যেন কাজে লাগে, সে ব্যবস্থা আমাদের করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশকে জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদক থেকে মুক্ত রাখার জন্য সবাইকে সচেষ্ট থাকার আহবান জানান। তিনি দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আপনারা আমার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন বলেই আজ দেশ জঙ্গি মুক্ত হয়েছে। অনুরূপভাবে এ দেশকে মাদকমুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আপনারা মাদক অভিযানে সহযোগিতা করবেন। কারণ, মাদক এমন একটা নেশা যা একটা পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। এজন্য এ অভিযানে আপনারা সাড়া দেবেন।’

আগামী ৭ জুলাই গণভবনে ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর ও খুলনা বিভাগের আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বিশেষ বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হবে।

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত