পাকিস্তানিদের খুশি করাই ছিলো জিয়া, খালেদা জিয়ার এজেন্ডাঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

5815

Published on মার্চ 25, 2018
  • Details Image
    ২৫শে মার্চ জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল)

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো পাকিস্তানী জান্তার এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী ছিলো বলে অভিযোগ করে বলেছেন, তারা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর যে এজেন্ডা ছিলো ভিন্নভাবে সেটাই বাস্তবায়ন করে যাচ্ছিল। তিনি বলেন, ‘এ দেশ দরিদ্র থাকুক, এ দেশ ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক। আর বাংলাদেশ যদি ব্যর্থ রাষ্ট্র হয় তাহলে পাকিস্তান খুশী হবে।’ তিনি বলেন, দীর্ঘ ২১ বছর এ দেশের মানুষ কষ্ট ভোগ করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই জনগণ বুঝতে পারে সরকার মানে জনগণের সেবক।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী হিসেবে পাকিস্তানকে খুশী করাই ছিলো জিয়া, খালেদা জিয়া এবং এরশাদের এজেন্ডা।

শেখ হাসিনা গতকাল বিকেলে জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সভায় সভাপতিত্ব করেন।

দলের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং শেখ ফজলুল করিম সেলিম, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, স্বাধীনতা পুরস্কার বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) সাজ্জাদ জহির, বীর প্রতীক, কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট নুরুল মজিদ হুমায়ুন এমপি, আওয়ামী লীগ মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান ও শাহে আলম মুরাদ বক্তৃতা করেন।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আলোচনা সভাটি পরিচালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তুলে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের শর্ত পূরণ করে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যে দেশের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিল। যে দেশ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিলÑ স্বাধীন হলে তো এ দেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি ছাড়া কিছুই হবে না।

তিনি বলেন, সেই দেশে জাতির পিতার নেতৃত্ব ছিলো বলেই তলাবিহীন ঝুড়ি না হয়ে স্বল্পন্নোত দেশের মর্যাদা পেয়েছিল। এরপর ’৭৫’র ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটলো এবং যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারাতো এ দেশের উন্নতি চায়নি। অগ্রযাত্রা চায়নি। এ দেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাক চায়নি। এ দেশের মানুষের লেখাপড়া, মাথা গোঁজার ঠাঁই হোক, রোগে চিকিৎসা পাক তা চায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ে তুলেও মাত্র সাড়ে ৩ বছরে প্রবৃদ্ধি ৭ ভাগে নিয়ে যেতে সক্ষম হন। বাংলাদেশ স্ব^ল্পোন্নত দেশের শর্ত পূরণ করে স্বল্পন্নোত দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। যে দেশের শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ মানুষ দরিদ্র ছিলো। যে দেশ সম্পর্কে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বলেছিল- স্বাধীন হলে তো এ দেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি ছাড়া কিছুই হবে না। তিনি বলেন, সেই দেশে জাতির পিতার নেতৃত্ব ছিলো বলেই তলাবিহীন ঝুড়ি না হয়ে স্বল্পোন্নত দেশের মর্যাদা পেয়েছিলো। এরপর ’৭৫’র ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটলো এবং যারা ক্ষমতায় এসেছিল তারাতো এ দেশের উন্নতি চায়নি। অগ্রযাত্রা চায়নি। এ দেশের মানুষ পেট ভরে ভাত খাক চায়নি। এ দেশের মানুষের লেখাপড়া, মাথা গোঁজার ঠাঁই হোক রোগে চিকিৎসা পাক তা চায়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নিজের হাতে এই সংগঠন (বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ) গড়ে তুলেছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমেই দেশের স্বাধীনতা এসেছে। এই সংগঠনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ অর্থনৈাতক মুক্তি অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।

একসময় বাংলাদেশকে খুব হেয় চোখে দেখা হতো, যখন তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রবাসে নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হন, সেই সময়কার কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নাম শুনলেই সবাই বলতো, বাংলাদেশ মানে ঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষ, জলোচ্ছ্বাস, ঘুর্ণিঝড়- এই হলো বাংলাদেশের পরিচয়। আর ভিক্ষা চাওয়া, খাদ্য ভিক্ষা করে নিয়ে আসা।

এসব শুনে হৃদয়ে কষ্ট অনুভব করে তখনই তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে, এই বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবেন। এই স্বাধীনতাকে তিনি ব্যর্থ হতে দেবেন না এবং বিশ্বে বাংলাদেশকে একটি মর্যাদাশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবেন। যেন আমাদের বিজয়ের ইতিহাস চিরদিন সমুন্নত থাকে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, তাঁর সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় গণহত্যা এবং তাদের মদদদানের বিষয়গুলো ’৭৫-পরবর্তী সরকারগুলো মনে রাখেনি উল্লেখ করে বলেন, ২৫ মার্চ থেকে যে গণহত্যা শুরু, সেই সময় এই গণহত্যা বিশ্বব্যাপী সমস্ত পত্রিকায় এসেছে। সকলে এটি স্বীকার করেছে। কিন্তু ’৭৫-এর পরে যারা সরকারের এসেছিল তারা এ বিষয়ে কোন নজর দেয়নি যেন এটা ভুলেই গিয়েছিল।

সেদিনের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন বের হই তখন রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে আমি নিজে দেখেছি। ধানমন্ডি, মিরপুর রোড থেকে শুরু করে ঢাকা শহরে শুধু লাশ আর লাশ। বস্তিতে আগুন দিয়েছিল, মানুষের চিৎকার আর দাউ দাউ করা আগুন। সমস্ত জায়গায় বাড়িতে বাড়িতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা, যে বাড়িতে পতাকা দেখেছে সে বাড়িতেই হামলা করেছে।

তিনি বলেন, অল্প সময়ে এতো মানুষ হত্যা, এ রকম গণহত্যা কিন্তু আর কোনো দেশে ঘটে নাই। সেই গণহত্যা গিনেজ বুক অব রেকর্ডেও উঠে এসেছে। এটা ছিল সব থেকে ভয়াবহ, মারাত্মক এবং অধিক সংখ্যার গণহত্যা। ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে পুরো ৯টা মাস পাকবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে। জাতীয় সংসদে তাঁর সরকার আলোচনার মাধ্যমেই ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই গণহত্যা দিবসের স্মরণেই আজকের অনুষ্ঠান।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের একটি নির্দিষ্ট গণহত্যা দিবস থাকলেও যেসব দিবসে মুক্তিকামী যেসব দেশে গণহত্যা হয়েছে তারা সেসব দিনগুলোতে নিজস্ব আঙ্গিকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। কাজেই আমরা এই ২৫ মার্চ দিনটিকেই আমাদের দেশের গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা গণহত্যায় যুক্ত এবং যারা মদদ দানকারী উভয়েই সমান দোষে দুষ্ট। তাদের এই অপকর্মের কথা জাতি যেনো ভুলে না যায়। আর প্রজন্মে পর প্রজন্ম যেন এই কথাটা মনে রাখে- কারা এবং কেনো এই দেশে গণহত্যা ঘটিয়েছিল এবং তাদের বিচার যেনো এই মাটিতে চলতেই থাকে। তাদের কোন ক্ষমা নেই। তাদের বিচার হবেই।

শেখ হাসিনা বলেন, গণহত্যায় মদদদানকারীরা ঘৃণার পাত্র। এই কথাটা সবাইকে মনে রাখতে হবে। কারণ আমাদের মা-বোনদের ওপর যেই অত্যাচার চালানো হয় তা আমরা চোখে দেখেছি। যা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।

২৫ মার্চের নির্মমতার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাড়ির আশপাশে সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ৩২ নম্বরের বাড়িতে আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, অথচ আমাদের দেশেরই কোন কোন নেতা-নেত্রী, এমনকি খালেদা জিয়া নিজেই সন্দিহান- ৩০ লাখ লোক নাকি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয় নাই। তারা তো নিজেরাই মানুষ খুন করে অভ্যস্ত, তারা তো নিজেরাই মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাদের পক্ষে এটা বলাটাই স্বাভাবিক। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় আদৌ তারা বিশ্বাস করে কি-না, আমার সন্দেহ।

তিনি বলেন, প্রত্যেক জায়গায় যারা গণহত্যায় শামিল ছিল তাদের মন্ত্রী, এমপি, উপদেষ্টা বড় বড় পদ দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল জিয়াউর রহমান। এই গণহত্যার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের জিয়াউর রহমান মন্ত্রী বানিয়েছিল, আবার খালেদা জিয়াও বানিয়েছিল। যেনো তারা আর লোক খুঁজে পেলো না। ওই গণহত্যাকারীরাই ছিল তাদের পেয়ারের লোক।

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পাকিস্তানের পাসপোর্টসহ বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল গোলাম আযম, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে ওই যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দেয় জিয়াউর রহমান।

দেশে এক সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বলাটাও যেন অপরাধ ছিল কারণ সে সময় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি ক্ষমতায় ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তখন পাকি (পাকিস্তান) প্রেমে যারা হাবুডুবু খেয়েছে তাদেরও উপযুক্ত জবাব বাংলার মানুষকে দিতে হবে। তাদেরও শাস্তি দিতে হবে। তাদের ওই পাকি প্রেম ভুলিয়ে দিতে হবে। এই বাঙালি যদি এটা না পারে তাহলে নিজেদের অস্তিত্ব থাকবে না।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্রাজুয়েশন প্রাপ্তির প্রসংগে বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যে আলোকে বলেন, আমাদের কেউ যে দাবায়ে রাখতে পারবে না, সেটা আমরা বিশ্বে প্রমাণ করেছি। আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশ।

তিনি বলেন, এই উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদা আমরা অর্জন করেছি সেটা ধরে রেখে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করবো। ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো এবং সেই সময়টায় বাংলাদেশ হবে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত। আর ২০৪১ সালে বাংলাদেশ হবে দক্ষিণ এশিয়ায় উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ। সেভাবেই ইনশাল্লাহ দেশকে আমরা গড়ে তুলবো।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় দলের নেতা-কর্মীদের প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব না মিলিয়ে দেশের জন্য কাজ করে যাবার আহবান জানিয়ে বলেন, কারণ আমি এগুলো নিয়ে চিন্তা করি না। ব্যক্তি স্বার্থ নিয়ে আমার রাজনীতি নয়। মানুষকে কি দিতে পারলাম, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, নিরন্ন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানো-সেটাই আমার চিন্তা। তিনি বলেন, আর এই গণহত্যার প্রতিশোধ আমরা তখনই নিতে পারবো যখন বাংলাদেশ ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে। আর ওই পাকি-প্রেমীদের উপযুক্ত শিক্ষা আমরা দিতে পারবো।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যেমন বাংলাদেশ বিশ্বে মর্যাদা পেয়েছে তেমনি যখন বাংলাদেশের সন্মান আরো বাড়বে, তখন হয়তো সেই পাকি-প্রেমীরা হাবুডুবু খেতে খেতে ডুবেই যাবে- সেটাই আমরা চাই।

ছবিঃ সাইফুল ইসলাম কল্লোল

Live TV

আপনার জন্য প্রস্তাবিত